পুলিশকে নিজেদের ক্ষোভের কথা জানাচ্ছেন মহিলারা। সোমবার মাড়গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।
গ্রামের ছেলেদের মদের নেশা ঘোচাতে এককাট্টা হলেন মহিলারা। পণ করলেন, মদের ঠেক তুলে ছেলেদের নেশাও ঘোচাবেন।
মাড়গ্রাম থানার চাঁদপাড়া গ্রামের মহিলাদের অভিযোগ, গ্রামে অবৈধ ভাবে ব্যাঙ্কের ছাতার মতো মদের ঠেক গজিয়ে উঠছে। সেই মদের নেশায় গ্রামের মাঝবয়সী পুরুষ থেকে কিশোর—সবাই ভিড় জমাচ্ছে ঠেকগুলিতে। নেশায় চুর করে কেউ বাড়িতে ঢুকে স্ত্রীকে পেটাচ্ছেন তো কোনও যুবক নিজের বোন বা মা-কে মারধর করছে। মদের এই রমরমা কারবারের জন্য গৃহস্থ বাড়ি ও গোটা এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে অভিযোগ করে এবং কারবার বন্ধ করার দাবিতে সোমবার দুপুরে থানায় গণস্বাক্ষরিত স্মারকলিপি জমা দিলেন চাঁদপাড়ার মহিলারা।
পুলিশ অবশ্য আন্দোলনকারীদের আবগারি দফতরে স্মারকলিপি জমা দিতে বলে। একই সঙ্গে তাঁদেরও বেআইনি মদের কারবার বন্ধ করার জন্য পুলিশ ও প্রশাসনের পাশে থাকার জন্য অনুরোধ করে। মহিলারা সমস্ত দিক থেকে পুলিশ-প্রশাসনকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।
এ দিন দুপুরে বাড়ির কাজ ফেলে গ্রাম থেকে নিজেরাই মোটরভ্যান ভাড়া করে থানায় এসেছিলেন পঞ্চাশ জনের বেশি মহিলা। প্রত্যেকই গ্রামের স্বনির্ভর দলগুলির সদস্য। গ্রামে মিড-ডে মিল প্রকল্পে রাঁধুনির কাজের সঙ্গে যুক্ত। ‘রামদাস’ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সহ-দলনেত্রী পার্বতী মারজিত জানান, গ্রামের পূর্বপাড়া, পশ্চিমপাড়া, মধ্যপাড়া সব মিলিয়ে ৩০টিরও বেশি অবৈধ মদের ভাটি আছে। ওই ঠেকগুলিতে দিন-রাত ভিড় করছেন গ্রামের পুরুষেরা। নেশাগ্রস্ত হয়ে কর্মক্ষমতা হারাচ্ছেন তাঁরা। মহিলারা উদয়াস্ত পরিশ্রম করে সংসারের জন্য যে সামান্য টাকা রোদগার করছেন, তা-ও ঠেকে গিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছেন পুরুষেরা। পার্বতীদেবী বলেন, “মদের নেশায় অল্পবয়সেই ছেলেরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আমরা চাই গ্রামের বেআইনি মদের কারবার বন্ধ করার জন্য পুলিশ-প্রশাসন হস্তক্ষেপ করুক।’’
চাঁদপাড়া গ্রামের বন্ধন, সুরজ , জল্লিপাড়া-সহ অন্যান্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মহিলাদের ক্ষোভ, তাঁদের প্রত্যেকেরই স্বামী দিনমজুর। এক দিন মজুরি না জুটলে সংসার চালানো মুশকিল। কিন্তু কেউ কেউ কাজে না গিয়ে বাড়ি থেকে চাল ও অন্য জিনিসপত্র বিক্রি করে বা বন্ধক রেখে মদ খেয়ে বাড়ি ফিরে বাড়ির পরিবারের সঙ্গে ঝামেলা করছে। আবার কেউ কেউ সারাদিন খাটাখাটনি করে বাড়ি ফেরার আগে মদের নেশায় চুর হয়ে স্ত্রীকে পেটাচ্ছে। স্কুল-কলেজের ছেলেরাও এই নেশার টানে মদের ঠেকে যাচ্ছে বলে তাঁদের অভিযোগ। স্মারকলিপি দিতে আসা বধূ সুমিত্রা মারজিত, শকুন্তলা মারজিত, অর্চনা মারজিতদের কথায়, ‘‘গ্রামে বেআইনি মদের কারবার বন্ধ করতে আমাদের স্বামীদেরও পুলিশের হাতে তুলে দিতে পিছপা হব না!’ পুলিশ-প্রশাসন অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না করলে তাঁরাই মদের ভাটি নিজেরাই ভেঙে ফেলবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারী মহিলারা।
চাঁদপাড়া গ্রামের মহিলারা আমার কাছেও স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন, জানিয়ে আবগারি দফতরের রামপুরহাট মহকুমা বিভাগের ডেপুটি কালেক্টর সুহৃদ মণ্ডলের আশ্বাস, পাঁচ-ছয় দিনের মধ্যে গ্রামে বেআইনি মদের কারবার বন্ধ করে দেওয়া হবে।