অমিত চক্রবর্তীর স্ত্রী পুতুল সরকার চক্রবর্তী।
‘‘ওই লোকটার জন্যই আমার স্বামীকে মরতে হয়েছে। ওই লোকটার জন্যই আমার নিহত স্বামী বিচার পায়নি...।’’
সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল সম্বন্ধে কথাগুলো বলে যাচ্ছিলেন পুতুল সরকার চক্রবর্তী। ২০১৪ সালে অনুব্রতর জেলা বীরভূমেই দুষ্কৃতীদের বোমায় নিহত হন দুবরাজপুর থানায় কর্মরত এসআই, পুতুলের স্বামী অমিত চক্রবর্তী। সেই ঘটনার জন্য অনুব্রতকে দায়ী করে রবিবার পুতুলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আজ আমি খুশি। আমি চাই অনুব্রত যেন জেল থেকে বের হতে না পারেন।’’
২০১৪ সালের ৩ জুন দুবরাজপুরের আউলিয়া গোপালপুর গ্রামে তৃণমূল-সিপিএমের সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমায় মারাত্মক জখম হন অমিত। দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ৫৫ দিনের লড়াই শেষে ২৮ জুলাই মারা যান তিনি। ওই ঘটনার জন্য ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে অনুব্রতর করা মন্তব্য ‘পুলিশকে বোম মারুন’কেই দায়ী করছেন পুতুল। তাঁর কথায়, ‘‘অনুব্রত মণ্ডলের এমন মন্তব্যে সাহস পেয়ে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। তার কয়েক মাস পরেই তো ঘটল ঘটনাটা।’’
পুতুল নিজেও পুলিশে কর্মরত। বালুরঘাট মহিলা থানার কনস্টেবল পুতুলের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তদন্তকেও প্রভাবিত করা হয়েছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, শাসক দলের ৩৬ জন-সহ তৃণমূল-সিপিএম মিলিয়ে মোট ৫০ জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হয়। তবে অভিযুক্তরা সকলেই ২০১৮ সালের ১৯ নভেম্বর সিউড়ির প্রথম অতিরিক্ত দায়রা আদালত থেকে বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। পুতুলের ক্ষোভ, ‘‘সান্ত্বনা পেতাম যদি আমার স্বামী বিচার পেত। কিন্তু রাজনৈতিক চাপ তৈরি করে সেটা হতে দেওয়া হয়নি।’’
পুতুল মনে করাচ্ছেন, বিচারপর্ব শুরু হওয়ার আগেই চার্জশিটে নাম থাকা শাসক দলের কর্মী-সমর্থক বলে পরিচিত ৩৬ জনকে ‘নিরপরাধ’ বলে দাবি করে তাঁদের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন তৎকালীন সরকারি কৌঁসুলি। পরে অবশ্য সেই অবস্থান থেকে সরে আসেন তিনি। পুলিশের তথ্য বলছে, ৫০ জনের মধ্যে এক নাবালক-সহ মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সকলেই মুক্তি পান। মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারকের মন্তব্য ছিল, ‘‘অনেকটা দায়সারা ভাবে এই মামলার তদন্ত হয়েছে। ওই তদন্ত সন্দেহাতীত ভাবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণ করতে পারেনি।’’
পুতুলের প্রশ্ন, ‘‘রাজনৈতিক চাপ না থাকলে কেন সরকারি কৌঁসুলি এমনটা করবেন? কেনই বা অমিতের সহকর্মীরা দায়সারা তদন্ত করবে? আমার স্বামীর সহকর্মীরাই দুষ্কৃতীদের চিনতে অস্বীকার করে। আমি বিশ্বাস করি গোটা ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। তাই তাঁকে সিবিআই গ্রেফতার করাতে আমি খুব খুশি হয়েছি।’’