প্রতীকী চিত্র।
বেসরকারি স্কুলের প্রতি অভিভাবকদের ঝোঁক বাড়ছে। অনেকেরই মতে, শহরাঞ্চলে সরকারি স্কুল পড়ুয়া কমলেও বিশেষ আশ্চর্য হওয়ার নয়। কিন্তু বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত খাতড়া মহকুমায় এ বারে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ব্যাপক হারে কমে গিয়েছে। যার কারণ খুঁজতে গিয়ে উঠে আসছে নানা মত।
জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের তথ্য, গত বারের তুলনায় এ বার বাঁকুড়া জুড়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ১,২৮৪ জন। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা সব থেকে বেশি কমেছে বাঁকুড়া সদর মহকুমায়। জেলার শিক্ষকদের একাংশের মতে, বাঁকুড়া সদর মহকুমায় বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের রমরমা গত কয়েক বছরে অনেকটাই বেড়েছে। অনেক অভিভাবক মোটা টাকা দিয়ে সন্তানদের সেখানে পাঠাচ্ছেন। বিষ্ণুপুরেও বেশ কয়েকটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের পত্তন হয়েছে। সেখানেও ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। ফলে, ওই দু’টি মহকুমায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কমে যাওয়া বা খুব বেশি না বাড়ার জন্য বেসরকারি স্কুলের বাড়বাড়ন্তের যুক্তি দেওয়া যায়।
তবে সরকারি মহলে সব থেকে চিন্তা বাড়িয়েছে খাতড়া মহকুমার হিসাব। ওই মহকুমায় গত বারের তুলনায় সার্বিক ভাবে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৪৯৬ জন। ছাত্রীর সংখ্যা গতবারের তুলনায় বেড়েছে ৪৩ জন। ছাত্রের সংখ্যা কমেছে ৫৩৯। খাতড়ায় ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোর চল তেমন নেই। মহকুমা সদরে হাতে গোনা কয়েকটি বেসরকারি স্কুল রয়েছে। খাতড়াতেই রয়েছে জেলার চারটি জঙ্গলমহল ব্লক। ফলে, ওই এলাকায় মাধ্যমিকে ছাত্রের হার কমে যাওয়ার জন্য কোনও ভাবেই ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের যুক্তি খাটে না বলেই মনে করছেন জেলার শিক্ষকদের একটা বড় অংশ।
মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীর হার কমার পিছনে দু’টি কারণ তুলে ধরছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ দে। তাঁর মতে, রাজ্যে কাজ না মেলায় অষ্টম শ্রেণির পরেই প্রত্যন্ত এলাকার ছাত্রদের ভিন্ রাজ্যে কাজের খোঁজে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, বহু পরিবারের অভিভাবকেরাই রাজ্যে কাজ না পেয়ে বাইরে যাচ্ছেন। তাঁদের অনুপস্থিতিতে ছেলেদের মধ্যে স্কুলছুটের প্রবণতা বাড়ছে।
পার্থবাবুর দাবি, “দেখেছি, মাধ্যমিক স্তরে পড়ার বয়স এমন ছেলেদের একটা বড় অংশই কাজের খোঁজে বাইরে চলে যাচ্ছে। শিক্ষার চেয়েও ভবিষ্যতের আয়ের অনিশ্চয়তা কাটানো তাদের বা তাদের পরিবারের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই জন্যই পরীক্ষার্থী কমছে।” তাঁর সংযোজন: “অনেক ক্ষেত্রে আবার পরিবার হয়ত চায়, ছেলে শিক্ষিত হোক। কিন্তু উপার্জনের জন্য যদি বাবা-ই বাইরে চলে যান, তা হলে তাদের উপর নজর রাখবে কে? এ ক্ষেত্রে স্কুলছুটের প্রবণতাও বাড়বে।”
যদিও পার্থবাবুর যুক্তি মানতে নারাজ জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি শুভাশিস বটব্যাল। তিনি বলেন, “ছাত্রের হার কমার কারণ খতিয়ে দেখেই বলতে পারব। তবে বাঁকুড়া সদর ছাড়া, ছাত্রীর সংখ্যা জেলার অন্য দু’টি মহকুমাতে গত বারের তুলনায় কমেনি। এ ক্ষেত্রে কন্যাশ্রীর প্রভাব রয়েছে।” জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) গৌতমচন্দ্র মাল বলেন, “সার্বিক ভাবে ছাত্রছাত্রীর হার কেন কমল, সেটা নিয়ে আলোচনা করব।”