পড়ে নির্মাণ সামগ্রী। নিজস্ব চিত্র।
শান্তিনিকেতনের সঙ্গে সম্পর্ক খুব বেশি দিনের নয়। আট বছরের সেই সম্পর্ককে নিয়ে আক্ষেপের গান গাই সব সময়। কিশোর বয়সে পূর্বপল্লির ছায়া পেরিয়ে ইন্টারন্যাশনাল বয়েজ হস্টেল-এর সামনে রাস্তা ধরে পদ্মভবন এবং ডান হাতে ভাষাভবনকে ফেলে স্কুলে যেতাম। ক্লাসের শেষে অবসর যাপন, বিকেলের ক্রিকেটের, আলাপের ঠিকানা ছিল এই মেলার মাঠ। আশ্রম মাঠকে সেভাবে পাইনি কোনও দিনই।
শান্তিনিকেতনের দরজা সাধারণ মানুষের কাছে, স্থানীয় মানুষের কাছে যে ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দৃশ্যদূষণও যে হচ্ছে, তা অস্বীকার করার জায়গা নেই। কয়েক বছর ধরে যে পাঁচিল পরিকল্পনা শান্তিনিকেতনে হচ্ছে, তা একপ্রকার পরিকল্পনাহীন। তার খসড়া বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ করেননি তা বুঝতে আজ আর খুব বেশি বুদ্ধি খরচ করতে হয় না। আশ্রমিক ও আবাসিকদের বাড়ির সামনেও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে বিরাট বিরাট কংক্রিটের পাঁচিল। তা ছাড়া তালা আজ সর্বত্রই। স্থানীয় নাগরিক জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে মানুষের একমাত্র ঠিকানা এই মেলার মাঠ। এই মাঠ তাদের কাছে গর্ব এবং সম্মানেরও বটে। সেই গর্ব এবং সম্মান ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা যে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই নিয়েছেন তা এক প্রকার দুঃসাহসিক বলতেই পারি।
তবে দুঃসাহসিক বাইকবাজ এবং মদ্যপায়ীদের অন্যতম গন্তব্য যে মেলার মাঠ, তা জানি, মানি এবং বিরোধিতাও করি। সেই এক টুকরো সমস্যার সমাধান কংক্রিটের পাঁচিল নয়। শান্তিনিকেতন তথা বিশ্বভারতীর সৌন্দর্যায়ন বিশ্বভারতীর শুভচিন্তক আশ্রমিক এবং প্রাক্তনীদের থেকে অন্য এক জন মানসিকতার মানুষ যে বেশি বুঝবেন তা হতে পারে না। আর এই প্রবণতাই সোমবারের তাণ্ডবের জন্য দায়ী।
(প্রাক্তন ছাত্র, বিশ্বভারতী)