চোখে ভাসছে হাসিমুখ, রাস্তায় নামল শহর

শনিবার সন্ধ্যায় দুর্গাপুরের বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে বছর আটাত্তরের শচীদুলালবাবুর। বুধবার সন্ধ্যায় জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে আহত হয়েছিলেন ওই বৃদ্ধ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৯ ০০:৩১
Share:

শচীদুলাল দে।

সব সময়ে তাঁর মুখে হাসি লেগে থাকত। আর দেখা যাবে না। দেখা যাবে না এলাকার সমস্যায় পড়া বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়াতে। পাড়ার জেঠুর কাছে পড়তে আসবে না এলাকার গরিব ঘরের ছেলেমেয়েগুলো। রঘুনাথপুর শহরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শচীদুলাল দে-র অকালমৃত্যুতে শোকে থমথম করছে এলাকা।

Advertisement

শনিবার সন্ধ্যায় দুর্গাপুরের বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে বছর আটাত্তরের শচীদুলালবাবুর। বুধবার সন্ধ্যায় জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে আহত হয়েছিলেন ওই বৃদ্ধ। মাথায় চোট নিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে ভর্তি হন রঘুনাথপুরের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। পরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দুর্গাপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে। মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শনিবার রাতেই দেহ আসে বাড়িতে। স্থানীয় শ্মশানে সৎকার হয়। রাতেই শচীদুলালবাবুদের বাড়িতে গিয়েছিলেন রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘ওঁর মতো এক জনের অকালমৃত্যুতে শুধু আমরা নই, গোটা রঘুনাথপুর শোকাহত।” আজ, সোমবার রঘুনাথপুর পুরসভা অফিসে শোকজ্ঞাপনের একটি অনুষ্ঠান পুরসভার তরফে করা হবে বলে জানান ভবেশ।

শহরের পুরাতন বাজার এলাকার বাসিন্দা শচীদুলালবাবু রঘুনাথপুর মিউনিসিপ্যাল ম্যানেজড হাইস্কুলের অঙ্কের শিক্ষক হিসাবে অবসর নেন ২০০৫ সালে। চাকরির সময় থেকেই এলাকার বিভিন্ন সামাজিক কাজে যুক্ত ছিলেন। অবসর নেওয়ার পরে পুরো সময়টাই সেই সমস্ত কাজে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন। ক্ষুদিরামের মূর্তি স্থাপন হোক বা এলাকার দুর্গাপুজো— সবেতেই এগিয়ে থাকতেন শচীদুলালবাবু। প্রবীণ মানুষজনের সমস্যা নিয়েও তাঁকে সরব হতে দেখেছে শহর।

Advertisement

পুরাতন বাজার এলাকার পুকুর পাড়ে যে সরকারি জমি নিয়ে ঝামেলার সূত্রপাত, সেখানে শিশুউদ্যান এবং কমিউনিটি হল তৈরির উদ্যোগেও সামনের সারিতে দেখা গিয়েছিল শচীদুলালবাবুকে। ষোলোআনা কমিটির সম্পাদক অজিত চন্দ বলেন, ‘‘উনি ছিলেন কমিটির সভাপতি। আর্বজনায় ভরা জমিটা কাজে লাগানোর জন্য উদ্যোগী হয়েছিলেন। আপত্তি তোলা স্থানীয় ধীবরদের বোঝানোর চেষ্টাটাও শুরু করেছিলেন শচীদুলালবাবুই।’’

এ দিন শচীদুলালবাবুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রয়েছেন স্ত্রী প্রতিমাদেবী, দুই ছেলে পার্থ দে ও প্রবুদ্ধ দে এবং তাঁদের স্ত্রী ও সন্তানেরা। পার্থবাবু জানান, ম্যাজিক থেকে শুরু করে ছবি আঁকা, ছবি তোলা— বিভিন্ন ধরনের শখ ছিল তাঁর বাবার। অবসর নেওয়ার পরেও বিভিন্ন সামাজিক কাজকর্মে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকেই জানাচ্ছেন, যে কোনও সমস্যায় তাঁরা সটান হাজির হয়েছেন শচীদুলালবাবুর কাছে। সাধ্যমতো সাহায্য করতেন।

রবিবার বিকেলে তাঁর স্মরণে এলাকায় বেরিয়েছিল শোক মিছিল। সোমবার শহরের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলিকে সঙ্গে নিয়ে আরও একটি শোক মিছিল হবে বলে জানিয়েছে ক্ষুদিরাম স্মৃতিরক্ষা কমিটি। একই সঙ্গে দাবি উঠেছে, যাদের হাতে খুন হয়েছেন শচীদুলালবাবু তাদের কঠোর শাস্তি হোক। জনপ্রিয় শিক্ষকের দেহ পাড়ায় আসার পরে উত্তেজনা ছড়াতে পারে এই আশঙ্কায় শনিবার রাতেই এলাকায় গিয়েছিলেন রঘুনাথপুরের এসডিপিও দুর্বার বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘শচীদুলালবাবুর মৃত্যুর পরে আমরা ধৃতদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করার জন্য আদালতে আবেদন জানাব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement