মসজিদের ইমামের হাতে কম্পিউটার তুলে দিলেন ফিরহাদ। নিজস্ব চিত্র
বগটুই হত্যাকাণ্ডের শহিদ পরিবারের সদস্য মিহিলাল শেখ ও ফটিক শেখ বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে স্বজনহারা পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বাধা পান এলাকার বিধায়ক তথা বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। সে দিন বিজেপির অনুষ্ঠান মঞ্চে শহিদ পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতি ছিল তৃণমূলের মঞ্চের থেকে বেশি।
এই প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার বগটুই গ্রামের তিনটি মসজিদের কর্তৃপক্ষের হাতে কম্পিউটার তুলে দিলেন রাজ্যের পুর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বিরোধীদের অভিযোগ, সংখ্যালঘুদের মন জয় করতে এই উদ্যোগ। তা মানতে নারাজ তৃণমূল।
সম্প্রতি কালীঘাটে বীরভূম জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায় বগটুই নিয়ে আক্ষেপের সুর শোনা যায়। বগটুই নিয়ে দলের অন্দরে ক্ষোভ সামাল দিতে মুখ্যমন্ত্রী বগটুই দেখভাল করার বাড়তি দায়িত্ব দেন নানুরের কাজল শেখকে। তার পরে বগটুই থেকে আবার সংখ্যালঘু সেলের ব্লক সভাপতি করা হয় আশিসের ‘ঘনিষ্ঠ’ রিয়াজুল হককে।
তৃণমূল সূত্রে খবর, রিয়াজুলকে নিয়ে ব্লক সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি এবং আশিসের ‘বিরোধ’ চলছে। জিম্মির অনুগামীদের মতে, এখনই এর প্রয়োজন ছিল না। আশিস অনুগামীদের অভিযোগ, বর্ষপূর্তির দিন আশিসকে বাধা দেওয়া ব্লক সভাপতির ‘পূর্ব পরিকল্পিত’। যার ‘বদলা’ হিসেবে জিম্মির ডানা ‘ছাঁটতে’ রিয়াজুলকে সংখ্যালঘু সেলের ব্লক সভাপতি করা হয়েছে বলে দাবি তাঁদের। ইতিমধ্যেই জিম্মি বগটুইয়ের মানুষদের নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে ডেকে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। এ দিনের কম্পিউটার দেওয়ার অনুষ্ঠান জিম্মিরই রাজনৈতিক ‘চাল’ বলে অনেকে মনে করছেন।
অনুষ্ঠান মঞ্চে বিজেপিকে আক্রমণ করে ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘বগটুই গ্রামে একটি পরিবার বিজেপি করছে। গ্রামের মানুষজন পোস্টার হাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থাকার কথা জানান দিয়েছেন।’’ ফিরহাদের দাবি, ‘‘কোর্টের অর্ডারে বগটুই হত্যাকাণ্ড সিবিআই দেখছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে বিচার করেননি যে কে আমাদের দলের কে আমাদের দলের নয়। তখনকার ব্লক সভাপতিকে গ্রেফতার করিয়েছেন।’’ তাই ফিরহাদের প্রশ্ন, ‘‘অমিত শাহের হাত ধরে হঠাৎ চাওয়ার মানেটা কী?’’
বগটুইয়ের সংখ্যালঘু ভোটেই কি চোখ তৃণমূলের, ফিরহাদের এ দিনের কর্মসূচিতে উঠেছে প্রশ্ন। মিহিলালের অভিযোগ, ‘‘সংখ্যালঘুদের ভোট পেতে তৃণমূল এখন মসজিদে কম্পিউটার দিচ্ছে।’’ পাল্টা ফিরহাদ বলেন, ‘‘বগটুই গ্রামের মানুষ যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই আছে আজ তার প্রমাণ পাওয়া গেল।’’ যদিও বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহার দাবি, ‘‘কম্পিউটার দিয়ে বগটুইয়ের সংখ্যালঘুদের দলে টানা যাবে না।’’
এ অনুষ্ঠানে ফিরহাদ ছাড়াও রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, বীরভূম জেলা দুই সাংসদ অসিত মাল, শতাব্দী রায়, জেলা পরিষদের সভাপতি বিকাশ রায় চৌধুরী, অভিজিৎ সিংহ, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ জেলা নেতৃত্বর প্রায় সকলেই উপস্থিত ছিলেন।