জেরা শেষে হাসিমুখে। নিজস্ব চিত্র
মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারলে বিজেপি ভাল ফল করতে চলেছে বলে মন্তব্য করলেন মুকুল রায়। লাভপুরে সিপিএম কর্মী তিন ভাই খুনের ঘটনায় সিউড়ি থানায় হাজিরা দিতে এসেছিলেন মুকুল। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্তব্য করেন, ‘‘পুরভোট তো রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আওতায়। স্বাভাবিক ভাবেই ভোট নিয়ন্ত্রণ করবে রাজ্য সরকার। তাই ভোট কী হতে পারে সেটা আপনাদের (সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের) ধারনা আছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘মানুষ যদি ভোট দিতে পারে, তা হলে নিশ্চিত ভাবে বিজেপি ভাল ফল করবে।’’
লাভপুরের সিপিএম কর্মী তিন ভাই খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত মুকুল রায়কে তৃতীয় বারের জন্য সিউড়ি থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারী অফিসাররা। গত মাসের ১ তারিখ তাঁকে দুবরাজপুর থানায় ডেকে পাঠিয়ে প্রথম জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার কিছু দিন পরেই সিউড়ি থানায় ডাকা হয়েছিল। সোমবার দুপুরে সিউড়ি থানায় হাজিরা দেন। পুলিশ ও বিজেপি সূত্রে খবর, এ দিন দুপুর পৌনে দুটো নাগাদ বিজেপি নেতা মুকুল রায় এবং জেলা বিজেপির নেতাকর্মীরা জেলা পুলিশ সুপারের দফতরের সামনে থেকে মিছিল করে সিউড়ি থানায় আসেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ চলার পরে দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ সিউড়ি থানা থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি।
পুলিশের জেরা নিয়ে মুকুল বলেন, ‘‘আমি কখনও ভয়ে পালিয়ে যাই না। যখনই ডাকবে, তখনই আসব।’’ প্রশান্ত কিশোরের টিম নিয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘‘২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার সময় পিকে ছিলেন না। ২০১৪ লোকসভার সময়ও ছিলেন না। তা হলে এখন পিকের প্রয়োজন হচ্ছে কেন?’’
এ দিকে, ২০১০ সালে লাভপুরের বুনিয়াডাঙা গ্রামে বালিরঘাটের সালিশি সভায় নিজের বাড়িতে ডেকে বুনিয়াডাঙা গ্রামের সিপিএম কর্মী তিন ভাই জাকের আলি, কোটন শেখ ও ওসুদ্দিন শেখকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে মনিরুল ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে। তখন মনিরুল সবে ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে তৃণমূলে গিয়েছেন। ২০১৪ সালে ওই মামলায় পুলিশ মনিরুল-সহ ২২ জনকে বাদ দিয়ে বোলপুর কোর্টে চার্জশিট জমা দেয়। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বিচারপতি মধুমতী মিত্র রাজ্য পুলিশকে জেলা পুলিশ সুপারের তদারকিতে ‘ফার্দার ইনভেস্টিগেশন’ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বোলপুর আদালতে সাপ্লিমেন্টরি চার্জশিট দাখিল করে লাভপুর থানা। মোট ৬৩ জনের নাম ছিল। সেখানে নতুন করে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ও প্ররোচনা দেওয়ার জন্য বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের নাম ছিল। তার পরেই উভয়ের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে বোলপুর আদালত।
ইতিমধ্যে কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছিলেন মুকুল। আগাম জামিন মঞ্জুর না হলেও ১৬ ডিসেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের তরফে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ ৫ সপ্তাহের রক্ষাকবচ দেন ওই বিজেপি নেতার জন্য। নির্দেশে বলা হয়, ওই সময়কালের মধ্যে মুকুল রায়কে গ্রেফতার করা যাবে না। মুকুল রায় লাভপুর, বোলপুর থানা এলাকায় প্রবেশও করতে পারবেন না। তবে পুলিশ তাঁকে ডাকলে তিনি তদন্তে সহযোগিতা করবেন। সেই হাজিরাতেই এসেছিলেন মুকুল।