বন্ধ: ঝালদা শহরের মায়া সরোবর রোডে। নিজস্ব চিত্র
লোকসভা নির্বাচনের সময় ঝালদা শহরের যে কার্যালয় থেকে ভোটের কাজ পরিচালনা করত গেরুয়া শিবির, এখন সেখানে ঝুলছে তালা। শহরের মায়া সরোবর রোডে বিজেপির ওই মূল কার্যালয়টি গত কয়েক মাস ধরে বন্ধ। এলাকাবাসীর একাংশ দাবি করেছেন, লোকসভা নির্বাচনের সময় শহরে বিজেপি কর্মীদের মধ্যে যে উৎসাহ লক্ষ্য করা গিয়েছিল, আস্তে আস্তে তাতে ভাটা পড়েছে। যদিও বিজেপির দাবি, পুলিশের ভয়ে এলাকায় ঢুকতে পারছেন না দলের কর্মীরা। তাঁদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে পুলিশ।
গত জানুয়ারিতে বিজেপির একটি মিছিলকে ঘিরে ঝালদায় উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশের উপরে হামলার ঘটনাও ঘটে। সেই ঘটনায় ৩০০ বিজেপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে পুলিশ। বিজেপির ঝালদা শহরের ছোট-বড় প্রায় সব নেতাই সেই মামলায় অভিযুক্ত। এখনও পর্যন্ত ওই ঘটনায় ১৫ জন বিজেপি নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোজই এলাকায় তল্লাশি চলছে। গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন বিজেপির বহু নেতা-কর্মী। এলাকায় দেখা যাচ্ছে না ঝালদা শহর বিজেপির সভাপতি মৃণাল মুখোপাধ্যায়কেও। ঘটনা ইস্তক তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ।
সামনেই পুরভোট। বিজেপি সূত্রের খবর, এই সময় শহরে দলের প্রধান কার্যালয় তালাবন্ধ থাকায় কী ভাবে তাঁরা পুর-যুদ্ধে লড়াই করবেন তা ভেবে দিশেহারা দলের কর্মীদের একাংশ। স্থানীয় রাজনীতির ওঠাপড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, পুরভোটের আগে শহরের নেতারা আত্মগোপন করে থাকায় ভোট-যুদ্ধে পিছিয়ে পড়তে পারে বিজেপি। ভোট ঘোষণা না হলেও ইতিমধ্যেই ময়দানে নেমে পড়েছে অন্য দলগুলি। তৃণমূল এবং বাম-কংগ্রেস দেওয়াল লিখনের কাজও শুরু করেছে।
বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এলাকার পরিস্থিতি দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে জানিয়েছি। সেখান থেকে নির্দেশ এলেই পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করব।’’ তবে তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন, দলের ওই কার্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে তালাবন্ধ রয়েছে। বিদ্যাসাগরবাবুর অভিযোগ, ‘‘আমাদের কর্মীদের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করছে পুলিশ। অনেকেই ঘরছাড়া। পুলিশের সন্ত্রাসের ভয়ে কেউই এখন কার্যালয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। এ জিনিস চলতে পারে না।’’
বিজেপির এই অভিযোগ বারবার ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার ওই অশান্তির ঘটনায় পুলিশ গ্রেফতার করেছিল শহরের বিজেপি নেতা কার্তিক কুইরিকে। সে দিনও একই অভিযোগ করেছিলেন বিদ্যাসাগরবাবু। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগান বলেছিলেন, ‘‘ওই মিছিলের কোনও অনুমতি ছিল না। তার পরে ওরা পুলিশকে মারধর করেছিল। তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ পুলিশ সুপার এ দিন বলেন, ‘‘এই অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন। অন্য বিরোধী দলগুলি তে এই রকম অভিযোগ তুলছে না। পুলিশের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ থাকলে আদালতের রাস্তা খোলা রয়েছে। তাঁরা সেখানে যেতেই পারেন। পুলিশ আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নিচ্ছে।’’