কড়াকড়ি: পুলিশকে হাসপাতালের নথি দেখাচ্ছেন গাড়ির চালক। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর পুরভবনের কাছে বৃহস্পতিবার। ছবি: সঙ্গীত নাগ
আগের লকডাউনে লোকজনকে ‘ঘর-বন্দি’ রাখতে বৃষ্টি অনেকটা সাহায্য করেছিল পুরুলিয়া জেলা পুলিশকে। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে বৃষ্টি থামতেই পুরুলিয়া শহর থেকে বান্দোয়ান-সহ কয়েকটি ব্লকে লোকজনের জটলা চোখে পড়েছে। মানবাজারে অতি উৎসাহী কয়েকজন যুবক মোটরবাইক নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। পুলিশের তাড়া খেয়ে অবশ্য তাঁরা ঘরে ফেরেন।
লকডাউন উপেক্ষা করেই এ দিন সকালে পুরুলিয়া মেডিক্যালের সামনে অস্থায়ী খাবার ও চায়ের দোকান খুলেছিল। হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের আত্মীয়দের সেখানে প্রাতঃরাশ করতে দেখা গিয়েছে। মোটের উপরে সেখানে এ দিন ভিড় কম ছিল না। দোকান খুলে রাখার কারণ হিসাবে ব্যবসায়ীদের যুক্তি, হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের আত্মীয়েরাই এ দিন সকালে যাতে দোকান খুলে রাখা হয়, সে জন্য আগের দিন তাঁদের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তাই তাঁরা এ দিন কয়েক ঘণ্টার জন্য দোকান খুলেছিলেন।
ক্রেতাদের কয়েকজন বলেন, ‘‘আত্মীয় হাসপাতালে ভর্তি। সে জন্য এখানে থাকতেই হচ্ছে। কিন্তু লকডাউনের জন্য খাবারটুকু না পাওয়া গেলে বিপদে পড়ে যাব। তাই দোকান খুলতে বলা হয়েছিল।’’
তবে হাসপাতালের সামনের এই ছবিটা বাদ দিয়ে কিন্তু পুরুলিয়া শহরের প্রায় সর্বত্রই রাস্তাঘাট ছিল শুনশান। লকডাউনে পুলিশকর্মীদের মানবিক মুখও দেখা গিয়েছে। হাসপাতাল থেকে শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এক সন্তান সম্ভবা মহিলাকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তাঁরই আত্মীয়া। ডাকঘর মোড়ে পুলিশ তাঁদের রাস্তায় দেখে থামায়। তাঁরা জানিয়েছিলেন, অটো বা রিকশা না থাকায় তাঁদের কষ্ট করে হেঁটে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। সব শুনে উপস্থিত পুলিশ কর্মীরাই একটি টোটোয় তাঁদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করেন।
এ দিন সকালের দিকে বৃষ্টি হলেও বেলা ১০টার পরে থেমে যায়। তারপরেই কিছু জায়গায় লোকজনকে বাইরে বেরিয়ে আড্ডা মারতে দেখা যায়। সক্রিয় ছিল পুলিশও। বান্দোয়ানের হাটতলা, ব্লকমোড়, চিলা গ্রামের মোড়ে দেখা গিয়েছে লোকজন জটলা করে আড্ডা দিচ্ছেন। পুলিশকর্মীরা সেখানে যেতে জটলা ভেঙে বাড়ি ফিরে যান তাঁরা। কিন্তু পুলিশের গাড়ি চলে যেতেই ফের জটলা তৈরি হয় বলে দাবি স্থানীয় সূত্রের।
আদ্রা ও রঘুনাথপুরে রাস্তাঘাটে লোকজন বিশেষ দেখা যায়নি। আদ্রায় মূলত কাজে যোগ দিতে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন রেলের বিভিন্ন অফিসের কর্মীরাই। রঘুনাথপুর শহরে পুরসভার সামনে পুলিশ ‘নাকা চেকিং’ চালায়। লোকজনকে আটকে বাইরে বেরনোর কারণ জানতে চায় পুলিশ। অনেকে দাবি করেন, ওষুধ কিনতে কিংবা হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছেন। প্রায় সব ক্ষেত্রেই প্রেসক্রিপশন দেখানোর পরেই ছাড়া হয়।