রঘুনাথপুর পুরসভা চত্বরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে। নিজস্ব চিত্র
ব্যাঙ্কের সামনের ঠাসাঠাসি ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছেন গ্রাহকেরা। সোমবার পুরুলিয়া শহরে সাহেববাঁধের ধারের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে বিষয়টি চোখে পড়ে খোদ জেলা পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগনের। গাড়ি থেকে নেমে সবাইকে দূরে-দূরে দাঁড় করান তিনিই। তবে বাঁকুড়ার আর পুরুলিয়ার অনেক জায়গাতেই বেশ কিছু জায়গাতেই দিনভর নিয়ন্ত্রণহীন ভিড় নজরে এসেছে।
বৃহস্পতিবার বুদ্ধপূর্ণিমা। শুক্রবার রবীন্দ্রজয়ন্তী। মাসের দ্বিতীয় শনিবার হওয়ায় তার পরের দিনও ছুটি ছিল। সোমবার, চার দিন পরে ব্যাঙ্ক খুলতে উপচে পড়েছিল গ্রাহকদের ভিড়। এ মাসের গোড়ায় অনেক গ্রাহক রেশন তোলায় ব্যস্ত ছিলেন। এ দিন কেউ গিয়েছিলেন জনধন যোজনার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে। কেউ গিয়েছিলেন রান্নার গ্যাসের ভর্তুকির টাকা জমা পড়ল কি না জানতে। কেউ পেনশন বা সরকারি ভাতা তুলবেন বলে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন।
পুরুলিয়া শহর, রঘুনাথপুর, ঝালদা, বান্দোয়ান— সর্বত্র ব্যাঙ্কের সামনে ছিল দীর্ঘ লাইন। অনেকেই দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে শেষে টাকা না তুলে ফিরে গিয়েছেন। ঝালদার তুলিনের বাসিন্দা ধীরেন দত্ত ও বান্দোয়ানের মাকপালি গ্রামের স্বর্ণলতা বেসরার কথায়, ‘‘ঠায় দাঁড়িয়ে আর পারছিলাম না। চলে এসেছি।’’ অনেক ব্যাঙ্কের সামনেই ছিল না কোনও ছাউনি। পুরুলিয়া শহরে আসা কেন্দা থানার শ্রীমন্ত মাহাতো, রঘুনাথপুরের বেড়ো গ্রামের বছর সত্তরের পারুল চৌবেরা জানান, বাড়িতে টাকার খুব দরকারবলে রোদের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। লাইনে ব্যাগ বা ইট রেখে মানুষজন দূরে ছায়ার খোঁজ করছেন, দেখা গিয়েছে এমনটাও।
সোমবার সকাল থেকেই বাঁকুড়া শহরের বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে ছিল ব্যাপক ভিড়। প্রচুর মানুষ এসেছিলেন জনধন যোজনার অ্যাকাউন্টে জমা পড়া পাঁচশো টাকা তুলতে। বাঁকুড়া শহরের মাচানতলা পাম্পমোড় এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন জুনবেদিয়া এলাকার বধূ কল্যাণী মণ্ডল ও উমা দুলে। তাঁরা বলেন, “সকাল ৯টায় এসে দেখি, রীতিমত লাইন পড়ে গিয়েছে। আমরা জনধন যোজনার অ্যাকাউন্টে জমা পড়া টাকা তুলতে এসেছি। বেশ কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি।’’
পাত্রসায়র, বিষ্ণুপুর, খাতড়া— সর্বত্রই ছিল একই ছবি। প্রচুর মানুষ মুখ ঢাকেননি। কিছু ব্যাঙ্কের সামনে মোতায়েন ছিল সিভিক ভলান্টিয়ার। জেলার লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার রমেশ প্রসাদ বলেন, “গ্রাহকদের মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে দফায় দফায় লোকজনকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। সকালের কয়েক ঘণ্টা ব্যাঙ্কগুলিতে ভিড় থাকলেও, পরে স্বাভাবিক হয়ে যায়। গ্রাহকদের তরফে কোথাও কোনও সমস্যার অভিযোগ তোলা হয়নি।”
পুরুলিয়ার অনেক ব্যাঙ্কের দরজায় সাবান আর জল ছিল। কিন্তু গ্রাহকেরা হাত ধুয়ে ঢুকছেন কি না, সেটা দেখার কেউ ছিল না। সিভিক ভলান্টিয়ারেরা হাত ধুতে বললেও অনেক গ্রাহক কথা কানে তোলেননি বলে অভিযোগ। মুখ না ঢেকে অনেক গ্রাহককে লাইনে দাঁড়াতে দেখে চিন্তিত প্রশাসনও। পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘এখন আরও সর্তক থাকতে হবে। বাইরে বেরোলে মুখ ঢেকে রাখা ও সামাজিক দূরত্ব মেনে লাইনে দাঁড়ানো অত্যন্ত জরুরি।’’