ঘর-দুয়ার। নিজস্ব চিত্র
বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কুড়চিবন এলাকায় আমার বাড়ি। ছোটবেলায় বাবাকে হারাই। তার পরে মাকে নিয়ে দিদির বাড়িতে উঠেছিলাম। কয়েক বছর পরে মা-ও মারা যান। আমি অনাথ হয়ে যাই।
লোকের বাড়িতে কাজের লোক হিসেবে খাটতে শুরু করি। তবে থেকে যাই দিদির সংসারেই। নিজে সংসার গড়ার কথা ভাবিনি কোনও দিন। দিদির সংসারকেই নিজের বলে মনে করে থেকে গিয়েছি। অসুবিধে হয়নি এত দিন। আচমকা ‘করোনা’র ভয়ে কাজ চলে গিয়েছে।
‘বাবু’রা-‘বৌদি’রা-‘মাসিমা’রা জানিয়ে দিয়েছেন, যত দিন ‘লকডাউন’ চলবে, তত দিন কাজে যাওয়ার দরকার নেই। এখন সংসার কী ভাবে চালাব, সেটাই সব থেকে বড় প্রশ্ন আমার কাছে। শুকনো ডালপালা কুড়িয়ে এক বেলা দু’টো চাল ফুটিয়ে খাচ্ছি। তবে সেটাও বেশি দিন পারব কি না, জানি না।
দোকানে ধার-দেনা করে আর কত দিন চালাব? ধার নিলে শুধতেও হবে।কাজ না থাকলে কী দিয়ে ধার মেটাব?
ঘরের চালটার অবস্থাও খারাপ। বছরের অন্য সময় উঠোনে মশারি খাটিয়ে কোনও রকমে রাত কাটাই। তবে বর্ষা এবং শীতে খোলা আকাশের নীচে কাটাতে পারি না। ভেবেছিলাম, বাবুদের বাড়িতে কাজ করে মাস ছ’য়েকের টাকা জমিয়ে ঘরের চাল মেরামত করব। তা হবে বলে মনে হচ্ছে না।
এখন জীবন বাঁচানোই বড় কথা। কোথা থেকে চাল-আলু পাব, সকালে উঠে সে চিন্তাই করতে হয়।এত কাল নিজে রোজগার করে সম্মানের সঙ্গে বেঁচেছি। পরের উপরে নির্ভর করিনি। রেশনে যা মিলবে, তাতে দু’বেলা পেট ভরবে বলে মনে হয় না। বাড়ি-বাড়ি কাজ যত দিন বন্ধ থাকে তত দিন সরকারের থেকে টাকা পেলে ভাল হয়। টাকার টানাটানির কথা এলাকার কাউন্সিলরকে বলেছি।