West Bengal Lockdown

এক সঙ্গে রান্নায় ভাবনা কমেছে কলোনির 

মনিপুর গ্রামের জনসংখ্যা ১,০৯৫। প্রায় চারশো জন কুষ্ঠ-আক্রান্ত।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

আদ্রা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২০ ০২:২৩
Share:

হাতে-হাতে: জ্বালানির জন্য কাঠ সংগ্রহ করে নিয়ে আসা হচ্ছে। আদ্রার মনিপুরে। ছবি: সঙ্গীত নাগ

শুকনো খাবার নিয়ে কুষ্ঠ কলোনিতে গিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু পড়ুয়া। সেখানে তখন ত্রাণ বিলি করছেন স্থানীয় যুবকেরাও। কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। জ্বালানি কেনার সামর্থ্য নেই কলোনির অধিকাংশ মানুষের। ঘরে-বাইরের দু’টি উদ্যোগ মিলে গিয়ে এখন অন্নচিন্তার সুরাহা হয়েছে পুরুলিয়ার আদ্রার মনিপুর কুষ্ঠ কলোনিতে। এপ্রিলের গোড়া থেকে গ্রামে শুরু হয়েছে ‘কমিউনিটি কিচেন’। এক বেলা রান্না করা খাবার পাচ্ছে কুষ্ঠ আক্রান্তদের পরিবারগুলি।

Advertisement

মনিপুর গ্রামের জনসংখ্যা ১,০৯৫। প্রায় চারশো জন কুষ্ঠ-আক্রান্ত। অধিকাংশেরই দিন গুজরান হয় আদ্রায় ভিক্ষা করে। কেউ পথেঘাটে ঘুরে প্লাস্টিক-কাগজ-টিন-কাচ কুড়িয়ে বিক্রি করেন। গ্রামে চাকরিজীবী মাত্র ১৭ জন। মনিপুর কুষ্ঠ পুর্নবাসন কেন্দ্রের সম্পাদক নবকুমার দাস জানান, আদ্রা আর রঘুনাথপুরের জনা ছয়েক পড়ুয়া রান্না করে খাওয়ানোর প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন। তিনি বুঝিয়ে বলেছিলেন, খাওয়াতে গেলে কাউকে বাদ দিলে চলবে না। এখন নবকুমারবাবু বলছেন, ‘‘ছেলেগুলির আত্মপ্রত্যয় দেখে সত্যি ভাল লাগে।’’

হরিমন্দিরের পাশে এখন গ্রামের ‘রান্নাঘর’। সম্প্রতি গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, দূর থেকে ডালপালা কাঁধে নিয়ে রোদের মধ্যে আসছেন গ্রামের কিছু যুবক। কিছুক্ষণের মধ্যেই গনগনে আঁচে হাঁড়ি চাপল। বেলা ১২টা নাগাদ সাইকেলে হাজির হলেন আদ্রার গৌরব দাস। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া গৌরব ‘কমিউনিটি কিচেন’-এর অন্যতম উদ্যোক্তা। রাজাবালা মাহাতো, চক্রধর মাহাতো, বেহুলা ভুইঁয়াদের ডাক পড়ল খেতে আসার।

Advertisement

মনিপুরের জনা পঁচিশ যুবক এই এগিয়ে এসেছেন এই কাজে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ‘চাইল্ডলাইন’-এর পুরুলিয়ার কর্মকর্তা মন্টু মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম দিকে আমরাও শুকনো খাবার দিচ্ছিলাম। কিন্তু যাঁদের তা দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের রান্না করার মতো সামর্থ্য থাকাটা জরুরি। অনেকেই জ্বালানিটুকু জোগাড় করতে হিমসিম খান। পদে পদে সেটা বুঝতে পারছিলাম।’’ মন্টুবাবু জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রেরা ‘কমিউনিটি কিচেন’ চালু করার প্রস্তাব দিলে তাঁরা পাশে দাঁড়ান। গৌরবের কথায়, ‘‘আমরা শুকনো খাবার বিলি করে দায়িত্ব সারতে চাইছিলাম না। গ্রামের মধ্যে থেকেই শক্তপোক্ত একটা সুরাহা বের করে আনতে চেয়েছিলাম।’’

গোড়ায় টাকাকড়ি জোগাড় করে এনেছেন ওই ছাত্রেরা। এখন এলাকা থেকেই অনেকটা ব্যবস্থা হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের কর্তারা ব্যক্তিগত ভাবে সাহায্য করেছেন। এলাকার যাঁদের সামর্থ্য আছে, তাঁরা দিচ্ছেন ডাল, মশলাপাতি। আনাজ ব্যবসায়ীরা দিচ্ছেন আনাজ। খাবার লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন বছর সত্তরের অনিল মাহাতো, পুষ্পা পরামানিকেরা। গরম ভাতের সঙ্গে ডাল আর তরকারি পড়ল পাতে।

ফোকলা মুখে একগাল হেসে অনিলবাবু বলেন, ‘‘সংসারে কেউ নেই। ভিক্ষা করে রোজ আশি টাকা মতো জুটত। সেটাও বন্ধ। ছেলেগুলো এল বলে শুধু চাল-সেদ্ধ খেয়ে থাকতে হচ্ছে না।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement