সেবা: নাতি-নাতনিকে নিয়ে ত্রাণ বিলি করছেন রেণুকাদেবী। নিজস্ব চিত্র
অভাব কাকে বলে, এক সময়ে তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন বনকর্মীর বিধবা স্ত্রী রেণুকা কিস্কু। তাই এই দুর্দিনে রুজি বন্ধ হওয়া এলাকার গরিবদের মধ্যে নিজের পেনশনের টাকা খরচ করে ক’দিনের খাদ্য সামগ্রী তুলে দিলেন বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের বাঁকাদহের ওই বৃদ্ধা। সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এলাকাবাসীর হাতে চাল, ডাল, আলু, তেল, বিস্কুট, সয়াবিন ইত্যাদি তুলে দেওয়ার ফাঁকে বলেন, ‘‘এক মাসের পেনশন আর সঙ্গে জমানো কিছু টাকা দিয়ে খাবার জিনিসপত্র কিনে দিলাম ওঁদের। আমার যেটুকু আছে, তাতে কোনও রকমে এই মাসটা টেনেটুনে সংসার চালিয়ে নেব। কিন্তু ওঁরা খালি পেটে থাকবেন, তা কী করে হয়?’’
রেণুকাদেবী জানাচ্ছিলেন, যখন বিয়ে হয়, তাঁর স্বামী গোলাম কিস্কুর তখন তেমন রোজগার ছিল না। পরে তিনি বনকর্মীর চাকরি পান। কিন্তু তা-ও বেতন কম। তাই অভাবকে দীর্ঘদিন কাছ থেকে তিনি দেখেছেন। স্বামী মারা যান প্রায় দু’দশক আগে। পেনশন চালু হয় আরও এক বছর পরে। সেই সময়ে দুই ছেলে ও এক মেয়েকে বড় করতে হিমশিম খেয়েছেন তিনি।
পরে স্বামীর প্রাপ্য টাকা থেকে বাড়ি করেছেন। বিয়ে দিয়েছেন মেয়ের। ছোটছেলে এখন ভিলেজ পুলিশের কাজ করেন। রেণুকাদেবীর সঙ্গে তাঁর বড় ছেলে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকেন। বড় ছেলের অবশ্য স্থায়ী রোজগার নেই। ফলে, তাঁর পেনশনের কয়েক হাজার টাকা ওই সংসারের কাছে অনেকখানি। তা হলে, নিজেদের সম্বলের পেনশনের টাকাটুকুও কেন বিলিয়ে দিলেন?
রেণুকাদেবী বলেন, ‘‘জঙ্গলঘেরা গ্রামে আমরা গরিব মানুষেরা বাস করি। সবাই সবার বিপদে পাশে দাঁড়াই। কিন্তু এখন গ্রামের লোকজন দিনমজুরির কাজ পাচ্ছেন না বলে ছেলের মুখে শুনেছিলাম। তাই সাতপাঁচ না ভেবে ঠিক করি, গ্রামবাসীকে ডাল-ডাল দেব।’’ সারা দিনে কমবেশি একশো মানুষের হাতে তিনি খাবার সামগ্রী তুলে দেন।
রেণুকাদেবীর এই ইচ্ছা পূরণে এগিয়ে এসেছেন বড় ছেলে প্রবীর কিস্কু ও তাঁর কয়েকজন বন্ধু। সবাই মিলে ত্রাণ সামগ্রী কিনে দুঃস্থ বাসিন্দাদের হাতে হাতে সব তুলে দেন। স্থানীয় বাসিন্দা বাবলু বাগদি, পঞ্চানন রুইদাস, হরি বাগদিরা বলেন, ‘‘মুটেগিরি করি। কিন্তু এখন কাজ না থাকায় সংসার টানা কঠিন হয়ে পড়েছে। রেণুকাদেবী যা করলেন, তা কোনও দিন ভুলব না!’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)