West Bengal Lockdown

ফুরিয়েছে টাকা-খাবার, কাশিমনগর গ্রামে ফিরে নিভৃতবাসে পরিযায়ী শ্রমিক 

১৪ জন মুঙ্গেরে নির্মাণকাজের জন্য গিয়েছিলেন। লকডাউনের ফলে কর্মস্থল থেকে বেরোতে পারছিলেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাইকর শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২০ ০৩:১৯
Share:

নিভৃতবাস কেন্দ্রের সামনে ওই শ্রমিকেরা। নিজস্ব চিত্র

খাবারে টান। টাকারও। সঙ্গে দুশ্চিন্তা পরিবার নিয়ে। আর থাকতে না পেরে বিহারের মুঙ্গের থেকে ২০০ কিলোমিটারেরও বেশি সাইকেল চালিয়ে বীরভূমের বাড়িতে ফিরলেন ১৪ জন পরিযায়ী শ্রমিক।

Advertisement

বুধবার ভোরে তাঁরা ফেরেন পাইকর থানার কাশিমনগর গ্রামে। কিন্তু, করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় কিন্তু গ্রামে ফিরেও নিজেদের বাড়িতে ঠাঁই হয় নি। গ্রামের মানুষজনই উদ্যোগী হয়ে তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাইকর হাসপাতালে নিয়ে যান। এই খবর জানাজানি হতেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসনও। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে সকলকে মুরারই ২ ব্লকের নিভৃতবাস কেন্দ্রে ১৪ দিনের জন্য তাঁদের আলাদা রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিডিও (মুরারই ২) অমিতাভ বিশ্বাস।

গ্রাম সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ১৪ জন মুঙ্গেরে নির্মাণকাজের জন্য গিয়েছিলেন। লকডাউনের ফলে কর্মস্থল থেকে বেরোতে পারছিলেন না। খাদ্যসামগ্রী ও টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। পুলিশের ভয়ে কোনও গাড়িও তাঁদের পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে আসতে রাজি হয়নি। বাধ্য হয়ে তাঁরা ১৪টি সাইকেল কিনে বাড়ি ফিরবেন বলে মনস্থির করেন। গত ১৪ এপ্রিল সকালে সাইকেল নিয়ে যাত্রা শুরু করলে স্থানীয় পুলিশ তাঁদের পথ আটকে আবার কর্মস্থলে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু, খাবার ফুরিয়ে আসায় ১৬ তারিখ রাতের অন্ধকারে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন হাইবতুল্লা শেখ, মুজফুর শেখ, আব্দুল আজিজ, বদরুদ্দোজা শেখরা।

Advertisement

শেষ পর্যন্ত ২৪৪ কিলোমিটার পথ সাইকেলে পাড়ি দিয়ে বুধবার ভোররাতে বাড়ি ফেরেন। হাউবতুল্লারা বলেন, ‘‘লকডাউনের ফলে দিনে এক বার খেয়ে কাটাচ্ছিলাম। টাকা না থাকায় কোনও খাবার কিনতে পারছিলাম না। বুঝতে পারছিলাম, আমাদের পরিবার কতটা অসহায় অবস্থায় গ্রামে আছে। আমাদের রোজগারেই তো পরিবার চলে! তাই ঠিক করি, এ ভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে কষ্ট করে বাড়ি ফিরব।’’ আব্দুল বলেন, ‘‘অনেক গ্রামে আমাদের ঢুকতে দেয়নি করোনা সংক্রমণের ভয়ে। জলের জন্য গ্রামে গেলে যদি পুলিশে আটকে দেয়, তাই পুকুরের জল খেয়েছিলাম। সঙ্গে শুকনো মুড়ি।’’

৮ দিন লাগল কেন? ওই শ্রমিকেরা জানান, দিনের বেলায় যে কোনও এলাকায় ঝোপের আড়ালে তাঁরা লুকিয়ে থাকতেন। যাতে পুলিশ না ধরে। রাত হতেই প্যাডেলে পা।

কাশিমনগর গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য মফিজুল শেখ বলেন, ‘‘গ্রামে ওই শ্রমিকদের ঢোকার খবর পেয়ে সকলে সিদ্ধান্ত নেন, আগে তাঁদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও ১৪ দিন নিভৃতবাসের পরে বাড়িতে ফিরতে দেওয়া হবে।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement