West Bengal Lockdown

শুরু ১০০ দিন কাজ, গরিবকে টাকা দেওয়াই লক্ষ্য

লকডাউন চলাকালীন শুধু রেশন দেওয়াই যথেষ্ট নয়, মানষের হাতে টাকা পৌঁছনো জরুরি। সেই লক্ষ্য পুরণে ১০০ দিনের কাজকেই হাতিয়ার করছে জেলা প্রশাসন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২০ ০০:৩০
Share:

কৃষিকাজ: সিউড়ির লম্বোদরপুরে জমিতে কীটনাশক দেওয়ার কাজ হচ্ছে। মুখে মাস্ক। নিজস্ব চিত্র

লকডাউনের মধ্যেই সোমবার থেকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ শিথিল কেরছে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার। নির্দেশে বলা হয়েছে, যে সব এলাকা হটস্পট বা ক্লাস্টার নয়, সেখানে আংশিক ভাবে আর্থিক কর্মকাণ্ড শুরু করা যাবে লকডাউনের গাইডলাইন মেনে। তার মধ্যে কৃষি, মৎস্য, ইট ভাটা, নির্মাণ-সহ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রের সঙ্গে রয়েছে বছরে ১০০ দিনের কাজও। নির্দেশ মেনে প্রতিটি ক্ষেত্রেই কাজ শুরু হয়েছে বীরভূমে। বহুদিন পরে বেশ কয়েকটি সরকারি দফতরে সীমিত সংখ্যক হলেও কর্মীদের আসাযাওয়া শুরু হল। তবে দ্রুত সাধারণ মানুষের (জবকার্ডধারী) অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকানোর লক্ষ্যে ১০০ দিনের কাজে জোর সবচেয়ে বেশি দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

১০০ দিনই পাখির চোখ

Advertisement

লকডাউন চলাকালীন শুধু রেশন দেওয়াই যথেষ্ট নয়, মানষের হাতে টাকা পৌঁছনো জরুরি। সেই লক্ষ্য পুরণে ১০০ দিনের কাজকেই হাতিয়ার করছে জেলা প্রশাসন। বিশেষ করে এই প্রকল্পের আওতায় থাকা ‘ইন্ডিভিজুয়াল বেনিফিশিয়ারি স্কিম’ বা আইবিএস-ই প্রশাসনের পাখির চোখ। এমজিএনআরইজিএ-র জেলা নোডাল অফিসার শুভঙ্কর ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকায় সোমবার থেকেই কাজ শুরু হয়েছে। আবাস যোজনা, নিকাশি নাল, পুকুর খনন ইত্যাদি কাজ আছে। তবে জোর দেওয়া হচ্ছে আইবিএসের উপরেই। যাতে শ্রমিকেরা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করতে পারেন।’’ তিনি জানান, স্বনির্ভর দলের থেকে মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার কী ভাবে সংগ্রহ করতে হবে, জবকার্ডধারীদের জন্য সেটাও বলা আছে।

প্রশাসন সূত্রে খবর, ফার্মপন্ড তৈরি, পোলট্রি, গোটারি, নার্সারি তৈরির মতো কাজ বেশি করে করার নির্দেশে দেওয়া হয়েছে। যাতে বাড়িতে থেকে কম সংখ্যক শ্রমিক তাঁদের কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সোমবার থেকে কাজ শুরু হয়েছে। দিন সাতেকের মধ্যে গতি আসবে।

তবে এত সংখ্যক জবকার্ডধারীকে নিয়ে কাজ করাতে গিয়ে করোনার সুরক্ষা-বিধির সব দিক বজায় রাখা সম্ভব হবে কিনা বা কাজ শুরু হলে সংক্রমণ ছড়াবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। এত সংখ্যক মানুষকে নিয়ে কাজ বিপজ্জনক ভেবে আশঙ্কায় পঞ্চায়েত কর্মীরাও।

খুলল কিছু দফতর

জেলা প্রশাসন ভবনের প্রায় প্রতিটি দফতরেই এ দিন থেকে কর্মী আসা শুরু হয়েছে। রোস্টার করে তাঁরা আসবেন। আইনশৃঙ্খলা, ইলেকশন সেল, পরিকল্পনা উন্নয়ন দফতর, আইসিডিএস দফতর, পরিবহণ-সহ অধিকাংশ দফতরেই এ দিন কাজ শুরু হয়েছে। একই ভাবে ব্লক ও পঞ্চায়েত অফিসগুলিতেও কর্মীরা কাজ শুরু করেছেন। প্রশাসন ভবনে কর্মীদের প্রত্যকের মুখে মাস্ক ছিলই। ঢোকার আগে স্যানিটাইজ়ার দিয়ে হাত পরিষ্কারও করতে হয়েছে। অফিসেও অনেকটা দূরত্ব রেখে কর্মীরা বসেছেন। কিন্তু, লকডাউন চলায় কর্মীরা এলেও সাধারণ মানুষ কার্যত আসতে পারেননি অফিসগুলিতে। ব্লক ও পঞ্চায়েতে অবশ্য বিভিন্ন কাজে মানুষজন এসেছেন। পঞ্চায়েতের কর্মীদের একাংশের অনুযোগ, ‘‘আমাদের অনেককেই ৭০-১০০ কিমি দূর থেকে যাতায়াত করতে হয়। এতটা পথ মোটরবাইকই ভরসা।’’

প্রসঙ্গ মিড-ডে মিল

এ দিন থেকেই দ্বিতীয় দফায় শিশু, প্রসূতি ও অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি থেকে এবং স্কুলস্তরের ছাত্রছাত্রীদের জন্য সংশ্লিষ্ট স্কুল থেকে চাল-আলু বিতরণের কাজ শুরু হয়েছে। ফলে, রাস্তাঘাটেও এ দিন তুলনায় লোকজনের আনাগোনা বেশি ছিল। চাল-আলু নিতে সব স্কুলে অভিভাবকদের যেতে বলা হলেও ব্যাগ কাঁধে বহু পড়ুয়াকেই এ দিন স্কুলে স্কুলে লাইনে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে। কেন এমন হচ্ছে, তার জবাবে শিক্ষকেরা বলছেন, ‘‘গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ পড়ুয়ার বাবা-মাই মাঠে কাজের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা আসবেন কী করে?’’

কী অবস্থা কৃষিতে

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, লকডাউনেও কৃষিকাজ বন্ধ ছিল না। তবে অফিস খুলে যাওয়ায় সুবিধা হবে। কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লকডাউনের প্রথম থেকেই মুখ্যমন্ত্রী কৃষিকাজ করতে নিষেধ করেননি। এখনও সেটা বজায় আছে। কৃষি শ্রমিক, কৃষি যন্ত্রপাতি, সার-বীজ কোথাও সমস্যা নেই। ধান কাটা, ধান বিক্রি, কিসান মান্ডি খুলে যাওয়া সবই কৃষকদের স্বার্থে।’’ অন্য দিকে, মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ জানান, মাছ চাষ, মাছ ধরা, হ্যাচারিতে ডিমপোনা তৈরি করায় বিধি নিষেধ নেই। তবে দুই মন্ত্রীই স্পষ্ট করছেন, ‘‘কৃষি বা মৎস্যজীবী যে যাই করুন, মুখে মাস্ক ,একে অন্যের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে এবং লকডাউনের নির্দেশ মেনেই কাজ করতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement