প্রতীকী ছবি।
করোনা-পরিস্থিতিতে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চাষিরা। এই অবস্থায় খরিফ মরসুমে সংখ্যায় যত বেশি সম্ভব চাষিকে ব্যাঙ্ক ঋণের সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। বড়সড় লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে বাঁকুড়া জেলাকেও। তা পূরণ করতে সক্রিয় হয়েছে জেলা প্রশাসন ও কৃষি দফতর।
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, বাঁকুড়া জুড়ে ২ লক্ষ ৩০ হাজার চাষিকে ব্যাঙ্ক ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে রাজ্য থেকে। ঋণ পাওয়ার জন্য চাষিদের কিসান ক্রেডিট কার্ড থাকা আবশ্যক। সম্প্রতি জেলাকে এ নিয়ে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই নির্দেশ পাওয়ার পরেই বাঁকুড়ার জেলাশাসক এস অরুণপ্রসাদ জেলা ও ব্লকের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। রাজ্যের নির্ধারিত ২ লক্ষ ৩০ হাজার চাষির মধ্যে জেলার কোন ব্লকে কত চাষিকে নতুন করে কিসান ক্রেডিট কার্ডের আওতায় আনা হবে তা ঠিক করা হয়। জেলাশাসক বলেন, “প্রতিটি ব্লকে কমিটি গড়ে, শিবির করে চাষিদের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করছি। যত বেশি চাষির কাছে পৌঁছনো যায়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’’
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়া সদর মহকুমায় ৫৮,৫৫৪ জন, খাতড়া মহকুমায় ৭৮,৭৮৮ জন ও বিষ্ণুপুর মহকুমায় ৯২,৬৫৮ জন চাষিকে ব্যাঙ্ক ঋণের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। জেলার উপকৃষি অধিকর্তা সুশান্ত মহাপাত্র বলেন, “প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকায় শিবির করে নতুন কিসান ক্রেডিট কার্ড বানানোর আবেদন জমা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ১২ হাজারের বেশি চাষি আবেদন করেছেন। এলাকায় মাইক নিয়ে প্রচার করে, ফ্লেক্স লাগিয়ে ও ব্লক কৃষি দফতরের কাছে থাকা স্থানীয় চাষিদের মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে কিসান ক্রেডিট কার্ড বানানোর বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে।”
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, বাঁকুড়া জেলায় কৃষক পরিবার রয়েছে প্রায় ৩ লক্ষ ৮০ হাজার। কৃষি দফতরের দাবি, প্রায় ৯৯ শতাংশ কৃষক পরিবারের কাছেই কিসান ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। তবে কার্ড থাকলেও বহু চাষিই ব্যাঙ্কের ঋণ নেন না। গত ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে বাঁকুড়া জেলায় প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার চাষি কিসান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণ নিয়েছেন। আবার চাষিদের অনেকে ঋণ শোধ না করায় কালো তালিকাভুক্ত হয়েছেন।
তবে প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, জেলায় ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পের উপভোক্তাদের বড় অংশের হাতেই এখনও কিসান ক্রেডিট কার্ড নেই। উপকৃষি অধিকর্তা জানান, আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত জেলার পঞ্চায়েত এলাকায় শিবির করে নতুন কিসান কার্ডের জন্য আবেদন জমা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, “আমরা চা,ই জেলার সমস্ত চাষিদের হাতেই কিসান ক্রেডিট কার্ড থাকুক।”
‘কৃষকসভা’-র কোষাধ্যক্ষ সুজয় চৌধুরী বলেন, “করোনা পরিস্থিতিতে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চাষিরা। ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেলে নিশ্চয়ই তাঁরা উপকৃত হবেন। আমাদের দাবি, কোনও চাষিই যাতে ঋণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয় সেটা নিশ্চিত করুক প্রশাসন।” বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি শুভাশিস বটব্যাল বলেন, “প্রকৃত চাষিরা কোনও ভাবেই বঞ্চিত হবেন না। প্রত্যেক চাষিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।”