পঞ্চায়েত ভোটের পরে ভিন্ রাজ্যের কর্মস্থলে ফিরতে পুরুলিয়া স্টেশনে ভিড় পরিযায়ী শ্রমিকদের। ছবি: সুজিত মাহাতো Sourced by the ABP
কেন্দ্র একশো দিনের কাজের প্রকল্পের টাকা আটকে দেওয়ায় বিকল্প প্রকল্প ‘খেলা হবে’ চালু করতে চাইছে রাজ্য সরকার। একুশে জুলাইয়ের সভামঞ্চ থেকে এমনই ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘আমরা ইতিমধ্যে জবকার্ডধারীদের ২৬ দিন কাজ করিয়েছি। মনে রাখবেন, বাংলা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে ১০০ দিন না হলেও ৪০-৫০ দিন কাজ করাতেই পারে। আগামী দিন ১০০ দিন কাজের প্রকল্প রাজ্য নেবে। নাম দেব— খেলা হবে।’’
যদিও দু’জেলার রাজনৈতিক মহলের দাবি, রাজ্য বিকল্প প্রকল্পের ঘোষণা আগেও করেছে। কিন্তু তার সুফল কতটা পেয়েছেন জেলার প্রান্তিক মানুষজন?
কয়েক বছর আগে পুরুলিয়া জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একশো দিনের কাজের প্রকল্পে স্কুল ভবন পরিষ্কার করার কাজ দিতে বলেন। কিন্তু স্বল্প সংখ্যক শ্রমিক এই কাজ পাওয়ায় বাকিদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। দিকে দিকে শুরু হয় পথ অবরোধ। যার জেরে ওই কাজ বন্ধ করে দিতে হয়।
করোনাকালে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বনির্ভর করতে আবেদনের ভিত্তিতে ৫০ হাজার টাকা ঋণ দিতে ‘সমর্থন’ নামে একটি প্রকল্প পুরুলিয়া জেলায় শুরু করেছিল রাজ্য সরকার। জঙ্গলমহলের আড়শার বামুনডিহা গ্রামের প্রতাপ মাহাতো আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘‘হায়দরাবাদে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ ফেলে বাড়ি ফিরেছিলাম। সমর্থন প্রকল্পে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে গ্রামেই দোকান খুলব বলে ভেবেছিলাম। আবেদন করলেও ঋণ পাইনি। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, পরিচিত কেউ ঋণ পাননি।’’
প্রশাসন সূত্রে খবর, করোনাকালে কাজ হারিয়ে পুরুলিয়ায় প্রায় ৫০ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক জেলায় ফিরেছিলেন। তাঁদের মধ্যে থেকে দক্ষ শ্রমিকদের জেলাতেই কাজ দিতে ‘বিশ্বকর্মা’ নামে জেলা প্রশাসন একটি পোর্টাল তৈরি করে। ঘোষণা হয়েছিল, ওই পোর্টাল থেকে বিভিন্ন সংস্থা চাহিদা মতো শ্রমিকদের নিয়োগ করবে।
যদিও আড়শার বামুনডিহা গ্রামের বাসিন্দা কাশীনাথ মাহাতোর দাবি, ‘‘ভিন্ রাজ্যে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ হারিয়ে করোনার সময় বাড়ি ফিরে বড় আশা করে ওই পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করেছিলাম। কাজের ডাক পাইনি। ঘরেই বসে রয়েছি। কিন্তু আর নয়। গ্রামে বসে থাকলে পেট চলবে না। এখানে কাজ নেই। ফের ভিন্ রাজ্যেই যেতে হবে।’’
যদিও পুরুলিয়া জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘বিশ্বকর্মা পোর্টালের মাধ্যমে ১৪০০ শ্রমিককে এই জেলায় কাজ দেওয়া হয়েছে। তবে বয়সের সীমাবদ্ধতা থাকায় অনেককে কাজ দেওয়া সম্ভব হয়নি।’’ তাঁর দাবি, যাঁরা মুম্বইয়ে সোনা-রূপোর অলঙ্কার তৈরি করেন, পোশাক সেলাইয়ের কাজ করেন, বা শাড়িতে জরি বসানোর কাজ করেন, তাঁদের এই জেলায় কাজের সুযোগ নেই।
একশো দিনের প্রকল্পের জবকার্ডধারীদের রাজ্য সরকারের বিভিন্ন কাজে, বিশেষ করে সরকারি নির্মাণ কাজে নিযুক্ত করতে কয়েকমাস আগে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বাঁকুড়ার এক জেলা প্রশাসনের আধিকারিকের দাবি, জবকার্ডধারীদের কাজ দিতে ঠিকাদারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি কাজে কোথায়, কত জবকার্ডধারী শ্রমিক কাজ পাচ্ছেন, সেই তথ্য রাখা আছে। সমস্ত দফতরে এ জন্য বিশেষ নোডাল অফিসার নিয়োগ করা হয়।
যদিও বাঁকুড়া জেলার জবকার্ডধারীদের অনেকেই কাজ পাননি বলে অভিযোগ। তাঁদের দাবি, যাঁরা বরাবর নির্মাণ কর্মী হিসেবে ঠিকাদারদের সঙ্গে কাজ করেন, তাঁরাই কাজ পান। কৃষি-শ্রমিক বা অন্য দিনমজুরদের ডাকা হয় না। ছাতনার বসন্ত প্রামানিক বলেন, “একশো দিনের কাজ বছর দুয়েক পাইনি। কখনও সরকারি নির্মাণ প্রকল্পের কাজেও কেউ ডাকতে আসেনি। চাষের কাজের জন্য পুবে যাওয়া ছাড়া আমাদের গতি নেই।’’ (চলবে)