মৃত্যুর দায় নিতে নারাজ দফতর 

পুলিশ এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা ওই ঘটনার জন্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে দায়ী করলেও অভিযোগ মানতে নারাজ তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জয়পুর শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:০৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিন যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার বক্তব্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। পুলিশ এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা ওই ঘটনার জন্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে দায়ী করলেও অভিযোগ মানতে নারাজ তারা।

Advertisement

বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ ট্রাক্টরে চেপে ফেরার পথে বাঁশি-হেতিয়া রাস্তার উপরে ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের তারের সংস্পর্শে আসায় মৃত্যু হয় গজানন মিদ্যা (২৮), সুরজিৎ মিদ্যা (২০) এবং মিলন সরকার (২০) নামে স্থানীয় তিন যুবকের। আহত হন দু’জন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশ এবং পুলিশ জানিয়েছে, ট্রাক্টরে থাকা একটি সাউন্ড বক্স রাস্তার উপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের তারে আটকে যায়। বাঁশ দিয়ে তার সরাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন কয়েকজন। যদিও বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার বিষ্ণুপুর ডিভিশনের ম্যানেজার তীর্থ মালের দাবি, “যে অভিযোগ উঠেছে তা সত্য নয়। ওখানে বিদ্যুতের তার ঝুলে নেই। সম্প্রতি ওই রাস্তাটি উঁচু হয়েছে। তা আমাদের জানানো হয়নি।’’ তাঁর আরও দাবি ‘‘বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ বিদ্যুতের তারে কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি।’’

Advertisement

পুলিশ এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা বৃহস্পতিবার ফের দাবি করেছেন, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েই মৃত্যু হয়েছ ওই তিন জনের। বিষ্ণুপুরের এসডিপিও প্রিয়ব্রত বক্সি বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার সময় পুলিশের কেউ ছিলেন না। তবে এলাকার প্রচুর মানুষ দেখেছেন, বিদ্যুতের তারের স্পর্শেই মৃত্যু হয়েছে। তার পরেও কী ভাবে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ঘটনার দায় অস্বীকার করতে পারে! ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেলেই বোঝা যাবে।’’ এ প্রসঙ্গে তীর্থবাবুর বক্তব্য, ‘‘পুলিশ জানাচ্ছে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু আমাদের রিপোর্ট তা বলছে না। ঘটনার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিচ্ছি।”

স্থানীয় বাসিন্দা হারাধন মিদ্যা বলেন, “গ্রামের প্রায় ২৫ জন ছেলে বনভোজনে গিয়েছিল। ট্রাক্টরের উপরে বড় বক্স চাপিয়ে তারা ফিরছিল। বক্সটি বিদ্যুতের তারে লেগে গিয়েছিল। বক্সের সঙ্গে কয়েকজনের সংযোগ হতেই বিপদ ঘটে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমার ছেলে মনোজ গাড়িতে ছিল। আতঙ্কে এখন কথা বলছে না।”

বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার গাফিলতিতেই ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি শম্ভুনাথ মিদ্যা, লাল্টু সরকারের মত অনেক এলাকাবাসীর। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘বিপজ্জনক ভাবে রাস্তার উপরে তার ঝুলছে। বারবার জয়পুর বিদ্যুৎ সরবরাহ অফিসে জানিয়েও কাজ হয়নি।’’ স্থানীয় মধুরপুর গ্রামের বাসিন্দা জয়ন্ত মাঝি বলেন, ‘‘বছর দুয়েক আগে আমিও ওই তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতাম। ধানের বস্তাবোঝাই গাড়ির উপরে বসে ফিরছিলাম। তারের নীচে দিয়ে যাওয়ার সময় আমার মাথার চুল তারের স্পর্শে পুড়ে যায়।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘বছর চারেক আগে ওই এলাকায় বিদ্যুতের তারের স্পর্শে পুড়ে গিয়েছিল ধান বোঝাই একটি গাড়ি। বিদ্যুৎ দফতরের কোনও হেলদোল নেই।” যদিও এই অভিযোগগুলি সম্পর্কে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

এ দিন বিষ্ণুপুর হাসপাতালের মর্গে ময়না-তদন্ত হয় দেহগুলির। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা। তিনি বলেন, “মেরামতের কারণে রাস্তা কিছুটা উঁচু হয়েছে। তবে শুনলাম বিদ্যুতের তার ঝুলে যাওয়ায় এই বিপত্তি ঘটেছে।’’ আজ, শুক্রবার ওই বিষয়ে আলোচনার জন্য বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। সেখানে বিদ্যুৎ ও পূর্ত দফতরের প্রতিনিধিরা ছাড়াও হাজির থাকবেন এলাকার জন প্রতিনিধিরা, পঞ্চায়েত প্রধান এবং পুলিশ আধিকারিকেরা। মন্ত্রী বলেন, ‘‘বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের তার ঝুলে থাকার বিষয়টি আলোচনা করা হবে। সমস্যার সুরাহা করতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement