তলানি: মার্চেই এমন অবস্থা হয়েছে মুরগুমা জলাধারের। চিন্তা বাড়ছে এলাকায়। নিজস্ব চিত্র
শোভা হারাচ্ছে পুরুলিয়ার মুরগুমা জলাধার। হতাশ হতে হচ্ছে পর্যটকদের। এই জলাধারের জলই পরিস্রুত করে সরবরাহ করা হয় ঝালদা শহরে। জলের স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় এ বার গ্রীষ্মে জল-সঙ্কটের আশঙ্কাও করছেন এলাকাবাসী।
পুরুলিয়ার অন্যতম পর্যটনস্থল হিসাবে পরিচিত অযোধ্যা পাহাড়। বসন্ত পড়লেই সেখানে ভিড় করেন হাজার হাজার পর্যটক। এ বারের চিত্রটাও ব্যতিক্রমী নয়। পাহাড় থেকে থেকে মুরগুমা জলাধারের দূরত্ব খুব বেশি নয়। সেখানেও ছুটছেন পর্যটকেরা। কিন্তু আক্ষেপের বিষয়, পরিধি ক্রমশ ছোট হয়ে যাওয়ায় শোভা অনেকটা হারিয়েছে মুরগুমা জলাধার। তলানিতে ঠেকেছে জলস্তর।
জলাধার দেখে কলকাতা থেকে আসা সুব্রত সাহার প্রতিক্রিয়া, ‘‘বন্ধুবান্ধবের মুখে এই জলাধারের কথা বহু বার শুনেছি। কিন্তু এর শোভা কোথায়? জলাধারে জল কার্যত নেই। জলাধারকে বড় পুকুর মনে হচ্ছে।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, জলাধারের সংস্কার হয়নি দীর্ঘ সময়। পাশের গ্রাম বেগুনকোদরের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী তপনকুমার বিদ কিংবা চন্দন চক্রবর্তীর আক্ষেপ, ‘‘১৯৬৫ সালে তৈরি জলাধারের সংস্কার হয়নি দীর্ঘদিন। পাহাড় থেকে নেমে আসা জল ধরে রাখতে কার্যত কোনও পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। সেই কারণেই জলাধারের এই দশা।’’ গ্রীষ্ম দুয়ারে। মুরগুমা জলাধারের জল পরিস্রুত করে তা সরবরাহ করা হয় ঝালদা শহরে। ‘‘গ্রীষ্মের আগেই যদি জলস্তর তলানিতে ঠেকে, তবে গরম বাড়লে আমরা জল পাব কোথা থেকে,’’ আশঙ্কা তপনবাবুর। মুরগুমা জলাধার সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, অবিলম্বে জলাধারের সংস্কার করতে হবে।
জল-সঙ্কট ঠেকাতে নির্দিষ্ট কোনও পদক্ষেপের কথা শোনা যায়নি ঝালদা পুর প্রশাসনের থেকে। তবে তৃণমূল পরিচালিত ঝালদা পুরসভার উপপ্রধান কাঞ্চন পাঠকের প্রতিক্রিয়া, ‘‘জলাধারে জলের স্তর তলানিতে এসে ঠেকেছে। এ বছর গ্রীষ্মের সময় কী হবে কে জানে? বিষয়টি উপর মহলে জানানো হয়েছে।’’
মুরগুমা জলাধার থেকে যে পরিমাণ জল ঝালদা শহরে সরবরাহ করা হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তাই গ্রীষ্মকালে ফি বছর ঝালদা শহরে জলকষ্ট দেখা দেয়। এ বার জলাধারের জলের স্তর তলানিতে ঠেকায় আতঙ্কিত অনেকেই। কারণ, শহরের মানুষের পানীয় জলের চাহিদা মেটাতে সুবর্ণরেখা জলপ্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
মহকুমাশাসক (ঝালদা) সুশান্তকুমার ভক্ত বলেন, ‘‘এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে দেখছে প্রশাসন।’’ আর তৃণমূল পরিচালিত পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘সমস্যা সমাধানে যাতে পদক্ষেপ করা যায়, সেটা দেখা হচ্ছে।’’