বিবৃতিতে নির্যাতিতার পদবি, আবারও বিতর্কে বিশ্বভারতী

অধ্যাপক নিয়োগে বেনিয়ম থেকে ক্যাম্পাসে ছাত্রী নিগ্রহের অভিযোগ-- নানা কাণ্ডে বিব্রত বিশ্বভারতী আবারও নতুন বিতর্কের মুখে। ভিন্ রাজ্যের ছাত্রীকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ প্রসঙ্গে নিজেদের ‘উদ্যোগ’ জানাতে গিয়ে যে প্রেস বিবৃতি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ দিয়েছেন, তাতে নির্যাতিতার পদবি উল্লেখ করে নতুন করে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে তাঁদের। যৌন নির্যাতনের শিকার কোনও মহিলার নাম-পরিচয় প্রকাশ্যে আনা যাবে না, সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ উপেক্ষা করার অভিযোগও বিশ্বভারতীর বিরুদ্ধে তুলেছে বিভিন্ন মহল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৩১
Share:

অধ্যাপক নিয়োগে বেনিয়ম থেকে ক্যাম্পাসে ছাত্রী নিগ্রহের অভিযোগ-- নানা কাণ্ডে বিব্রত বিশ্বভারতী আবারও নতুন বিতর্কের মুখে।

Advertisement

ভিন্ রাজ্যের ছাত্রীকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ প্রসঙ্গে নিজেদের ‘উদ্যোগ’ জানাতে গিয়ে যে প্রেস বিবৃতি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ দিয়েছেন, তাতে নির্যাতিতার পদবি উল্লেখ করে নতুন করে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে তাঁদের। যৌন নির্যাতনের শিকার কোনও মহিলার নাম-পরিচয় প্রকাশ্যে আনা যাবে না, সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ উপেক্ষা করার অভিযোগও বিশ্বভারতীর বিরুদ্ধে তুলেছে বিভিন্ন মহল। বিশ্বভারতীর মহিলা নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি (বিশাখা কমিটি) এবং এসজিআরসি (পড়ুয়াদের অভিযোগ শোনা সংক্রান্ত কমিটি) সদস্যদের পাশে বসিয়ে কী ভাবে ওই বিবৃতি সংবাদমাধ্যমের হাতে তুলে বিশ্বভারতীর উপাচার্যের মুখপাত্র, প্রশ্ন উঠছে সে নিয়েও। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের অবশ্য যুক্তি, ওই প্রেস বিবৃতিতে নির্যাতিতার বাবার পদবি উল্লেখ করা হয়েছে। নাম নয়।

এর আগে, পাঠভবনের এক আবাসিকের বিছানায় প্রস্রাব করা আটকাতে ‘টোটকা’ হিসেবে ছাত্রীটিকে তারই প্রস্রাব খাওয়ানোর অভিযোগ উঠেছিল ওয়ার্ডেনের বিরুদ্ধে। তখনও বিশ্বভারতী ওই আবাসিকের নাম-পরিচয় গোপন রাখেনি। তা নিয়ে বিভিন্ন মহল সরব হয়েছিল। তার পরেও কী ভাবে এই বিবৃতিতে কলাভবনের নির্যাতিতার পদবি উল্লেখ করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

Advertisement

কলাভবনের প্রথম বর্ষের ভিন্ রাজ্যের ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার ২৩ দিন পর এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে এ দিন হাজির হয়েছিলেন বিশ্বভারতীর তিন প্রো-ভোস্ট সবুজকলি সেন, তপতী মুখোপাধ্যায়, ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় এবং এসজিআরসি-র চেয়ারপার্সন রামেশ্বর মিশ্র। ছিলেন, কালচারাল কো-অর্ডিনেটর চন্দন পাল এবং উপাচার্যের মুখপাত্র সন্দীপ বসু সর্বাধিকারী। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ উড়িয়ে কেন নির্যাতিতার বাবার পদবি (বিবৃতিতে লেখা হয়েছে মিস্টার...) রাখা হল ওই বিবৃতিতে? বিশ্বভারতীর মিডিয়া ইন্টারফেস কমিটির চেয়ারপার্সন সবুজকলি সেন বলেন, “আমরা তো পরিচয় প্রকাশ করিনি! কেবলমাত্র পদবি রয়েছে। তিনি কোথাকার, কী তাঁর নাম, সে-সব কিছুই বলা হয়নি!”

এই যুক্তির সঙ্গে অবশ্য একমত হতে পারছেন না রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “নির্যাতিতার বাবার পদবি কেন, তাঁর পরিবারের কোনও তথ্যই প্রকাশ করা শোভন নয়। আইনেও খুব স্পষ্ট করে রয়েছে বিষয়টি। এ ক্ষেত্রে গোপনীয়তা বজায় রাখা উচিত ছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছে কমিশন।” এ বার হয়তো, ওই নির্যাতিতার নাম প্রকাশিত হতেও দেখবেন, এমনই আশঙ্কা সুনন্দাদেবীর। বোলপুরের সাংসদ তথা বিশ্বভারতীর অধ্যাপক অনুপম হাজরাও বলছেন, “রবিবার নির্যাতিতার পদবি প্রকাশ্যে উল্লেখ করে যা করল বিশ্বভারতী, তা ক্ষমার অযোগ্য।” শুক্রবারই তিনি বিশ্বভারতীর প্রধান তথা রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন দিল্লিতে। অনুপমবাবুর দাবি, ছাত্রী নিগ্রহ-সহ সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বভারতীর সমস্যা নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে তিনি জানিয়েছেন। প্রণববাবু এ সব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

উপাচার্য তথা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যে শিক্ষক বা শিক্ষকেরা সংবাদ মাধ্যমে মুখ খুলেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ‘কর্মসমিতি’-র কড়া মনোভাব নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে এ দিনের প্রেস বিবৃতিতে। কলাভবনের ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্বভারতীর কাছে বেশ কিছু নথি এবং সিডি চেয়েছিল পুলিশ। সেগুলি জমা দেওয়া হয়েছে বলে প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। তপতী মুখোপাধ্যায়ের আরও দাবি, “বিশাখা কমিটিতে ওই ছাত্রীর বাবা উপাচার্যের সহায়তাকে ‘মানবিক’ বলেছিলেন। অথচ, তিনিই পরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বয়ান বদলেছেন। এতে আমরা হতবাক! সব সিডি জমা দিয়েছি।”

বয়ান বদলের অভিযোগ মানতে চাননি নির্যাতিতার বাবা। একই সঙ্গে উপাচার্যের সহযোগিতাকে ‘মানবিক’ আখ্যা দিয়েছিলেন, বিশ্বভারতীর এই দাবিও ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “আমার মেয়ে এখনও অসুস্থ। ওই ঘটনার আতঙ্ক ওকে এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে। তবে, আমি চেয়েছিলাম, মেয়ে ওখানেই পড়ুক। বিশ্বভারতী নিজের ভুল বুঝতে পারবে। তা হয়নি। উল্টে কর্তৃপক্ষ আমাদেরই দোষারোপ করছেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement