ভাঙচুরে অভিযুক্তদের হাজির করানো হল আদালতে। নিজস্ব চিত্র।
পৌষমেলার মাঠে ‘তাণ্ডব’-এর প্রতিবাদে আজ, বুধবার অনশনে বসছে বিশ্বভারতী। সকাল ৮টা থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ১২ ঘণ্টার অনশন পালন হবে বলে মঙ্গলবার বিকেলে এক প্রেস বিবৃতিতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ওই বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, তৃণমূল বিধায়ক নরেশ বাউরি এবং বোলপুরের দুই পুর-প্রশাসক সুকান্ত হাজরা ও ওমর শেখের উপস্থিতিতেই সোমবার মেলার মাঠে ভাঙচুর করা হয়েছে। দোষীদের প্রত্যেকের শাস্তির দাবি করা হয়েছে।
যত দিন পর্যন্ত অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা-সহ ঘটনায় জড়িতেরা গ্রেফতার না হন এবং বিশ্বভারতীর সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকে ক্যাম্পাসে নিজেদের নিরাপদ বলে মনে না করেন, ততদিন পর্যন্ত বিশ্বভারতী বন্ধ থাকবে বলেও প্রেস বিবৃতিতে ঘোষণা করা হয়েছে। ১৭ তারিখের পুরো ঘটনাটি সম্পর্কে সিবিআই তদন্তেরও দাবি জানানো হয়েছে। বিশ্বভারতীর আশ্রমিক ঐতিহ্য রক্ষার স্বার্থে উপাচার্য-সহ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মিথ্যা মামলা তুলে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে রাজ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে। একই সঙ্গে বিশ্বভারতীর দাবি, ১৫ অগস্টের পর থেকে তাদের তরফ থেকে দায়ের হওয়া এফআইআরগুলির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ অন্ধকারে।
সব মিলিয়ে অচলাবস্থা কাটার কোনও লক্ষণ এই মুহূর্তে চোখে পড়ছে না বিশ্বভারতীতে। যদিও উদ্ভুত সমস্যা মেটাতে আজই জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বৈঠকে বসছেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, মহকুমাশাসকের (বোলপুর) অফিসে বিকেল তিনটে থেকে বৈঠক হওয়ার কথা। সেখানে জেলাশাসক ছাড়াও থাকবেন পুলিশ সুপার ও মহকুমাশাসক। বিশ্বভারতীর উপাচার্য, কর্মসচিব-সহ বেশ কয়েক জন আধিকারিককে বৈঠকে ডাকা হয়েছে। ডাকা হয়েছে ব্যবসায়ী সমিতিকেও। যদিও বৈঠকে বিশ্বভারতী যোগ দেবে কিনা, তা নিয়ে তাদের তরফে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি।
বিশ্বভারতীর বিবৃতিতে স্পষ্ট ভাবে এ-ও জানানো হয়েছে, পৌষমেলার মাঠ সংলগ্ন শান্তিনিকেতন থানা-সহ অন্যান্য বাড়িগুলিতে পাঁচিল বা বেড়া ইতিমধ্যেই রয়েছে। ফলে মেলার মাঠ পাঁচিল ও বেড়া দিয়ে ঘিরলে তা ওই স্থানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কোনও ভাবেই ক্ষুণ্ণ করবে না। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের দাবি, মেলার মাঠের পাঁচিলটি হবে মাটি থেকে চার ফুট উঁচু পর্যন্ত এবং তার উপরে থাকবে তিন ফুটের লোহার গ্রিল। মাঠের পূর্ব দিকে থাকবে সাতটি দরজা।
তবে, যে পাঁচিল তোলা নিয়ে এত বিতর্ক ও অশান্তি, তেমন কোনও প্রাচীর দিয়ে মাঠ ঘেরার আদেশ জাতীয় পরিবেশ আদালত দেয়নি বলেই দাবি করছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তাঁর বক্তব্য, বরং পৌষমেলা নিয়ে পরিবেশ আদালতে দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে বিশ্বভারতী যে ‘অঙ্গীকার’ করেছিল, সেটাকে ভুলভাবে প্রকাশ করেই মাঠ ঘেরার চেষ্টা হচ্ছিল। একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ভুল করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ যদি তাঁদের নিজস্ব জায়গা ঘিরেও থাকেন, আইন হাতে তুলে নিয়ে সেটা ভেঙে ফেলার অধিকারও কারও নেই।’’
ঘটনা হল, পৌষমেলায় দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও মেলা অন্যত্র স্থানান্তরিত করার প্রস্তাব নিয়ে ২০১৭ সালে জাতীয় পরিবেশ আদালতে বিশ্বভারতীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন সুভাষবাবু। রায় দিতে গিয়ে ঐতিহ্যশালী ওই মেলাকে পৌষমেলা প্রাঙ্গণ থেকে সরানোর প্রস্তাবে সায় না দিলেও সুষ্ঠু এবং দূষণ নিয়ন্ত্রিত মেলা পরিচালনা করার জন্য বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি বিশ্বভারতীর কাছে নেয় জাতীয় পরিবেশ আদালত। সেই অঙ্গীকারের মধ্যে পৌষমেলার মাঠের সীমানা নির্ধারণ (ডিমার্কেশন) এবং ‘ব্যারিকেড’ করার বিষয়টি ছিল। সুভাষবাবুর আপত্তি, এই শব্দ দু’টির ভুল ব্যাখ্যা নিয়ে। তাঁর কথায়, ‘‘ব্যারিকেড করা আর ইট দিয়ে ঘিরে ফেলা এক বিষয় নয়।’’
আরও একটি বিষয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের দিকে আঙুল তুলেছেন এই পরিবেশকর্মী। সেটা হল, বীরভূমের জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে গত ৮ অগস্ট বিশ্বভারতী জানায়, এ বছর নানা সমস্যার জন্য তারা পৌষমেলা করছে না। সুভাষবাবুর বক্তব্য, ‘‘বিশ্বভারতীর মেলা না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে মুখ্যসচিব ইতিমধ্যেই পরিবেশ আদালতে বিষয়টি জানিয়েছেন। আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি আমিও। আজ, বুধবার শুনানি আছে। আমার প্রশ্ন বিশ্বভারতী মেলাই যদি আয়োজন না করে থাকে, তা হলে মাঠ ঘিরে ফেলার প্রাসঙ্গিকতা কোথায়!’’