ইংল্যান্ড থেকে ভাই দিব্যেন্দুকে ফোঁটা দিলেন প্রিয়াঙ্কা। নিজস্ব চিত্র।
রাঢ়বঙ্গে ভাইফোঁটার একটি রীতি চালুর কথা বলেন গবেষকেরা। তা হল, যদি কোনও ভাই বোনের কাছে বা বোন দাদার কাছে যেতে না পারেন তখন দরজার চৌকাঠে ফোঁটা দিয়ে ভাইয়ের মঙ্গল কামনা করা। অতিমারি পরিস্থিতিতে সেই চৌকাঠই যেন হয়ে উঠেছে মোবাইল বা কম্পিউটারের পর্দা। তাতেই ভার্চুয়াল ভাইফোঁটা পালন করলেন ভাইবোনেরা।
বিয়ের পর গত ১৫ বছর সুদূর ইংল্যান্ডের হার্ডফোর্টশায়ারে থাকেন দুবরাজপুরের প্রিয়াঙ্কা রায়। ওখানকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। সময় করে ভাইফোঁটার সময় কোনও বারই আসা হয় না তাঁর। তাই বলে থেমে নেই ভাইয়ের মঙ্গলকামনায় ভাইফোঁটা।
গত কয়েক বছর কখনও স্কাইপ, কখনও হোয়াটসঅ্যাপ কলে ভাইফোঁটা দিয়েছেন। এ বার দাদা দিব্যেন্দু উপাধ্যায়কে ফোঁটা দেওয়ার মাধ্যম ছিল গুগল মিট। শাড়ি পরে থালা সাজিয়ে প্রদীপ জ্বেলে চলল ফোঁটা। তবে দাদার কপালের বদলে চন্দন ছুঁয়ে গেল ল্যাপটপের স্ক্রিন। প্রিয়াঙ্কা বলছেন, ‘‘এ ছাড়া আর উপায় কী?’’
যে ভাই বোনেরা পরস্পরের থেকে দূরে থাকেন তাঁরা অবশ্য ভার্চুয়াল ভাইফোঁটায় বহু বছরই অভ্যস্ত ছিলেন। এখন প্রযুক্তির সুবিধে পাচ্ছেন অপেক্ষাকৃত কম দূরত্বে থাকা ভাই বোনেরাও। মোবাইলে ভিডিয়ো কলে সিউড়িতে থাকা দাদা আদিত্য মুখোপাধ্যায়কে ফোঁটা দিয়েছেন রামপুরহাটের দীপালি বন্দ্যোপাধ্যায়।
আদিত্যবাবু বলছেন, ‘‘প্রতি বার বোনের বাড়ি রামপুরহাটে যাই বোনের কাছে। কিন্তু এ বার পারিনি পা ভেঙে সিউড়ির বাড়িতে পড়ে আছি বলে। বোনের পক্ষেও আসা কষ্টকর ছিল। সেই সমস্যা দূর করতে ভিডিয়ো কলে ভাই ফোঁটার ব্যবস্থা করে দিয়েছে ভাগ্নে ভাগ্নি।’’
দীপালিদেবী বলছেন, ‘‘খুব খুশি হয়েছি। প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া এটা সম্ভব ছিল না।’’ একটি-দু’টি নয় এমন উদাহরণ আরও আছে জেলায়।
লোকসংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করা আদিত্যবাবুর নেশার মধ্যে পড়ে। তিনি বলছেন, ‘‘মূলত নিম কাঠের চৌকাঠ দিয়ে তৈরি হতো দরজা। নিমকাঠ যেহেতু দীর্ঘস্থায়ী যাতে ভাই দীর্ঘায়ু হন, চৌকাঠে ফোঁটা দিয়ে বোনেদের প্রার্থনা থাকত সেটাই। কিন্তু এখন সেই ব্যবধান ঘুচেছে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের সহজ ব্যবহারের সুবাদে।’’