কারখানা তৈরির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল। নিজস্ব চিত্র।
মদ তৈরির কারখানা হবে বলে শিল্প সংস্থাকে জমি বিক্রি করেছিলেন গ্রামের লোকজন। কিন্তু সেই জমিতে স্পঞ্জ আয়রন কারখানা গড়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে নির্মাণকাজের বিরোধিতায় নামলেন এলাকাবাসী। রঘুনাথপুর ১ ব্লকের নতুনডি পঞ্চায়েত এলাকার ঘটনা। তাঁদের দাবি, স্পঞ্জ আয়রন কারখানা হলে এলাকায় দূষণ বাড়বে।
পঞ্চায়েতের আমতোড় গ্রামের অদূরে কারখানাটি গড়ছে এক বেসরকারি শিল্প সংস্থা। পাশে আছে নুনিরডি ও ধটাড়া গ্রামও। শনিবার থেকে প্রস্তাবিত এলাকায় মাটি কাটার যন্ত্র নিয়ে জমি সাফাইয়ের করার কাজ শুরু করে সংস্থা। যদিও এলাকাবাসীর বাধায় কাজ স্থগিত হয়ে যায় বলে দাবি। রবিবার এক ধাপ এগিয়ে কারখানা তৈরি করা যাবে না দাবি তুলে এলাকায় মিছিল করেন গ্রামগুলির পুরুষ-মহিলাদের একাংশ। শামিল হয় গ্রামের ছাত্রছাত্রীরাও। আমতোড় থেকে ঝাড়ুখামার মোড় পর্যন্ত মিছিল হয়। পা মেলান ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার নেতৃত্ব।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ২০০৬ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে এলাকার ১০৫ জনের কাছ থেকে প্রায় ৩৫ একর জমি কেনে সংস্থাটি। জমি বিক্রেতাদের মধ্যে আমতোড় গ্রামের অশোক গোপ, নুনিরডির শ্রীকান্ত মুর্মু, ধটাড়ার অমিত মুদিদের দাবি, জমি কেনার সময়ে সংস্থাটি জানিয়েছিল, মদ তৈরির কারখানা হবে। সেখানে জমি বিক্রেতাদের পরিবারের লোকজনের কর্মসংস্থানও হবে। তবে তাঁদের অভিযোগ, এখন জানা গিয়েছে, স্পঞ্জ আয়রন কারখানা গড়া হবে। বাসিন্দাদের কথায়, “পাশের নিতুড়িয়া ব্লকে একাধিক স্পঞ্জ আয়রন কারখানা রয়েছে। সেখানে দূষণ কতটা, বাসিন্দারা ভালই টের পান। সেই পরিস্থিতি এই এলাকায় হতে দেওয়া যাবে না।” বছর তিনেক আগে রঘুনাথপুর শহরের পঞ্চায়েত সমিতির কমিউনিটি হলে পরিবেশ সংক্রান্ত জনশুনানিতেও স্পঞ্জ আয়রন কারখানার বিরোধিতা করেছিলেন ওই তিন গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁদের একাংশের কথায়, “তিনটি গ্রামই জনবহুল। প্রস্তাবিত কারখানার আশপাশে বহু চাষযোগ্য জমি রয়েছে। কিছু দূরে উতলা পাথরটিকরি জোড়ও আছে। স্পঞ্জ আয়রন কারখানা হলে সবেই প্রভাব পড়বে।” ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার নেতা বিপ্লব মারান্ডি বলেন, “মানুষজন স্পঞ্জ আয়রন কারখানা তৈরির বিরোধিতা করছেন। আমরাও দলগত ভাবে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছি। সকলেই চাইছেন পরিবেশবান্ধব কারখানা হোক।”
যদিও স্পঞ্জ আয়রন নন, ‘বিলেট’ তৈরির কারখানা গড়া হবে বলে দাবি সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট অচিন মজুমদারের। তিনি জানান, লাইসেন্স পাওয়া যায়নি বলেই ‘বেভারেজ’ (মদ) তৈরির কারখানা তৈরি করা যায়নি। সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন পাওয়ার পরেই প্রাথমিক কাজ শুরু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “অত্যন্ত আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করা কারখানা তৈরি করা হবে। দূষণের আশঙ্কা নেই। বর্জ্য জল কারখানার মধ্যেই প্রক্রিয়াকরণ করা হবে। তাই জল দূষণও ঘটবে না। কারখানা গড়ার পরে সিএসআর প্রকল্পে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্থা আশপাশের গ্রামগুলির উন্নয়নও করবে।”
কিছু মানুষ স্থানীয়দের ভুল বোঝাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।