প্রতীকী ছবি।
‘‘স্যর, আমাদের বাড়িতে তিন দিন ধরে জল আসছে না। আমার দু’পায়ে পোলিও। দূর থেকে বাড়ির লোকেদের কষ্ট করে জল আনতে যেতে হয়। জলের জন্য অন্যদের উপরে নির্ভর করতে খারাপ লাগে। কিছু একটা করুন’’— বুধবার থেকে বাড়ি বাড়ি জল আসা বন্ধ হওয়ায় শুক্রবার সকালেই এলাকার বিধায়ককে ফোন করে এ কথাই জানান বাঁকুড়ার সিমলাপালের লক্ষ্মীসাগর পঞ্চায়েতের বাউরিশোল গ্রামের যুবতী মাধবী পাইন। ফোন পেয়ে এলাকার বিধায়ক অরূপ চক্রবর্তী ওই গ্রামে জলের ব্যবস্থা করতে তৎপর হয়ে ওঠেন। যোগাযোগ করেন জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের সঙ্গে। কারিগরি দফতর কাজ চলছে বলে আশ্বাস দেয়।
স্থানীয় সূত্রের খবর, বাউরিশোল গ্রামে প্রায় ৭৫টি পরিবারের বাস। বছর পাঁচেক আগে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের উদ্যোগে গ্রামে পানীয় জলের পাইপলাইন এসেছে। শুরুতে গ্রামে কয়েকটি ট্যাপ দেওয়া হয়েছিল। গ্রামবাসীর অভিযোগ, তখন পর্যাপ্ত জল মিলত না। প্রায় এক বছর আগে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে পরিশ্রুত পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরেও পর্যাপ্ত জল পড়ে না বলে অভিযোগ। তার মধ্যে বুধবার থেকে পাইপলাইনে সমস্যা হওয়ায় জল পড়া বন্ধ। তাতে আতান্তরে পড়েছেন বাসিন্দারা।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বছর ত্রিশের মাধবী এলাকার একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নেত্রী। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা মাধবী বলেন, ‘‘হাঁটাচলা বিশেষ করতে পারি না। বাড়িতে এক বেলা অল্প হলেও জল পেতাম। সেটুকুও বন্ধ হওয়ায় এখন বাড়ির লোকেদের দূর থেকে জল বয়ে আনতে হচ্ছে। নিজের প্রয়োজনে অন্যদের জলের জন্য বলতে খারাপ লাগছে। কষ্টের কথা বিধায়ককে ফোন করে জানিয়েছি। দেখি ,তিনি কী করেন।’’
তালড্যাংরা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক অরূপবাবু মাধবীর ফোন পেয়ে উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেন, ‘‘এক মহিলা নিজে থেকে ফোন করে তাঁদের সমস্যার কথা জানাচ্ছেন দেখে ভাল লাগল। তবে তাঁদের সমস্যার কথা জেনে কষ্টও হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের আধিকারিককে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। কাজে যাতে কোনও রকম ঢিলেমি না হয়, সে কথাও বলা হয়েছে।’’
বাঁকুড়ার জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার রাজেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই গ্রামের পাইপলাইনের একটি জায়গায় কাজ হচ্ছে। সে কারণে জল সরবরাহের সমস্যা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব জল চালু করার চেষ্টা করছি।’’ রাতে মাধবী দাবি করেন, ‘‘সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ গ্রামের কিছু বাড়িতে জল এলেও আমাদের কলে জল পড়েনি। শনিবার জল পড়ে কি না দেখি?’’
মাধবীর এই উদ্যোগে খুশি গ্রামের বধূ ভবানী পাইন, কল্যাণী পাইনেরা। তাঁরা বলেন, ‘‘গ্রামে চারটি নলকূপ থাকলেও তিনটিতে মাত্রাতিরিক্ত লোহা মেশানো জল পড়ে। একটির জল পানের যোগ্য। সেটাই এখন সম্বল।’’ স্থানীয় লক্ষ্মীসাগর পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের মন্দাকিনী হেমব্রম সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘গ্রামবাসী যাতে দ্রুত জল পান, সে জন্য আমরাও জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরকে জানিয়েছি।’’