Pradhanmatri Awas Yojona

সমীক্ষা থেকে বাদ গ্রাম, মেলেনি বাড়ি

অনুব্রত মণ্ডল খয়রাশোলে সাংগঠনিক সভা করতে গিয়ে  সমস্যার কথা শুনে এসেছেন বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। তবে সুরাহা কোন পথে, দিশা দিতে পারেননি। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খয়রাশোল শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:৩২
Share:

এমনই হাল বাড়ির। নিজস্ব চিত্র।

স্বামী, দুই সন্তান নিয়ে জীর্ণ খড়ের ছাউনি দেওয়া বাড়িতে বাস ময়নাডাল গ্রামের লিচু বাউড়ি ও ময়না বাউড়িদের। ফুটো চাল দিয়ে জল চুঁইয়ে পড়ে। কনকনে ঠান্ডায় জমে যাওয়ার অবস্থা। বাড়ির একই রকম দশা একই গ্রামের দিনমজুর গোপেশ বাউড়িরও।

Advertisement

শুধু তিনটি পরিবার নয়, খয়রাশোলের ওই গ্রামের শতাধিক পরিবারের পাকা বাড়ি নেই। সকলেই সমস্যায় রয়েছেন। অথচ, কেউই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা বা বাংলা আবাস যোজনার কোনও বাড়ি পাননি। খয়রাশোল গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, প্রায় চারশো পরিবারের বাস ময়নাডালে। জনসংখ্যা ১৭৮০ জন। তার মধ্যে তফসিলি জনজাতিভুক্ত ১৯২, ওবিসি ৭০টি পরিবার রয়েছে। যাঁদের অধিকাংশ দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করেন।

গ্রামবাসীর ক্ষোভ, যে সমীক্ষা ধরে বাড়ি প্রাপকের তালিকা তৈরি হয়েছে, ২০১১ সালে হওয়া সেই আর্থ-সামাজিক জাতিগত সমীক্ষা থেকে বেমালুম বাদ চলে দিয়েছে আস্ত গ্রাম। তার ফল ভোগ করতে হচ্ছে। পঞ্চায়েত থেকে ব্লক যেখানেই যাচ্ছেন স্থানীয়েরা, শুনতে হচ্ছে তালিকায় নাম নেই। তাই বাড়ি দেওয়া হবে কী করে।

Advertisement

শুধু খয়রাশোলের ময়নাডাল নয়। লোকপুরের কয়রাবুনি আদিবাসী গ্রামের ছবিটাও অনেকটা এক। মোট ৪৮টি পরিবারের বাস। অথচ ১৩টি পরিবারের নাম ছিল বাড়ি প্রাপকদের তালিকায়। ৩৩টি পরিবার মাটির বাড়িতে বসবাস করলেও বাড়ি পায়নি। ফলে একই রকম ক্ষোভ ওই আদিবাসী গ্রামেও। গ্রামের বাসিন্দা ধন টুডু, হেমন্ত হেমব্রম বা সুপ্রিয়া সরেনরা বলছেন, ‘‘যাঁদের বাড়ি নেই, তাঁদের জন্যই তো সরকারি ঘর। তা হলে আমরা কী দোষ করলাম।’’

দুটি গ্রাম থেকেই বাসিন্দারা তাঁদের সমস্যার কথা খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্যামল গায়েনকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। তবে অবস্থা শুধরনোর ইঙ্গিত মেলেনি। সভাপতি বলছেন, ‘‘আসলে বহুকাল আগে বাম আমলে সমীক্ষা হয়েছে। সেই তালিকায় নাম না থাকলে সরকারি আবাস যোজনায় বাড়ি পাবে কী করে ওই পরিবারগুলি। আমি জেলাকে জানিয়েছি।’’ দিন কয়েক আগে অনুব্রত মণ্ডল খয়রাশোলে সাংগঠনিক সভা করতে গিয়ে সমস্যার কথা শুনে এসেছেন বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। তবে সুরাহা কোন পথে, দিশা দিতে পারেননি।

২০১১ সালে হওয়া ওই সমীক্ষা অনুযায়ী পাকা বাড়ি না থাকা পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। সেই তালিকা ধরেই কেন্দ্র ও রাজ্যের অংশীদারিত্বে এই প্রকল্প রূপায়ণে প্রতি বছর গ্রামীণ এলাকায় ১ কোটি বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। চিহ্নিত উপভোক্তাদের তিনটি কিস্তিতে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। কেন্দ্র দেয় ৬০ শতাংশ, রাজ্য ৪০ শতাংশ। এ ছাড়াও উপভোক্তা পান ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে ৯০ দিনের মজুরি। গত অর্থবর্ষগুলিতে প্রচুর সংখ্যায় বাড়ি এসেছে জেলায়। চলতি অর্থবর্ষে সরকারি আবাস যোজনায় এক লক্ষের উপরে বাড়ি পেয়েছে জেলা। পরিস্থিতি এমনই প্রতিটি ব্লক ৩ থেকে ৪ হাজার করে বাড়ির অনুমোদন পেয়েছে। খয়রাশোল ব্লক পেয়েছে প্রায় ৩৪০০ বাড়ি। কিন্তু, তাতে ওই দুটি গ্রামের বাসিন্দাদের ভাগ্য ফেরেনি।

খয়রাশোলের বিডিও তমালকুমার ডাকুয়া বলছেন, ‘‘আমার কাছে কেউ লিখিত ভাবে কিছু জানাননি। তবে, আবেদন জানালে বাংলা আবাস যোজনা ছাড়াও অন্য যে সরকারি আবাস প্রকল্প রয়েছে সেই তালিকায় ওঁদের আনা যায় কিনা চেষ্টা করব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement