নির্যাতিতার মায়ের জেল, সনাতন অধরা

মঙ্গলবার কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে সাড়ে তিন বছরের মেয়েটির শরীর থেকে সাতটি সুচ বার করা হয়। শুক্রবার সে মারা যায়। শনিবার রাতে শিশুর মাকে গ্রেফতার করা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৭ ০৭:০০
Share:

প্রতীকী ছবি।

নির্যাতিত শিশুর মায়ের দু’দিন পুলিশ হেফাজতের পরে মঙ্গলবার পুরুলিয়ার বিশেষ আদালত তাঁকে পাঁচ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিল। কিন্তু ওই আদালতে কর্মবিরতি চলায় সরকারি পক্ষে বা আসামি পক্ষের কোনও আইনজীবী ও দিন সওয়াল করেননি।

Advertisement

সরকার পক্ষের আইনজীবী পার্থসারথি রায় জানান, এই মামলায় পকসো আইনের ধারা যুক্ত হওয়ায় মামলাটি এ দিন থেকে বিশেষ আদালতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে এই আদালত বয়কট চলছে। তাই এ দিন শুনানি হয়নি। বিচারক সুযশা মুখোপাধ্যায় তাঁকে পাঁচ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আগের দিন এই মামলায় খুন অথাৎ ৩০২ ধারা যুক্ত করার জন্য আদালতের কাছে যে আবেদন রাখা হয়েছিল, তা মঞ্জুর হয়েছে।

পুরুলিয়া মফস্সল থানার নদিয়াড়া গ্রামে সনাতন গোস্বামীর (ঠাকুর) বাড়িতে নিজের সাড়ে তিন বছরের শিশুকন্যাকে নিয়ে থেকে পরিচারিকার কাজ করছিলেন ওই মহিলা। ওই শিশুটির উপরে যৌন নির্যাতন এবং শরীরে সুচ বেঁধানোর অভিযোগ উঠেছে সনাতনের বিরুদ্ধে।

Advertisement

মঙ্গলবার কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে সাড়ে তিন বছরের মেয়েটির শরীর থেকে সাতটি সুচ বার করা হয়। শুক্রবার সে মারা যায়। শনিবার রাতে শিশুর মাকে গ্রেফতার করা হয়।

সরকার পক্ষের আইনজীবী আদালতে জানিয়েছিলেন, নির্যাতনে মায়ের ভূমিকা রয়েছে বুঝেই পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে। নিজের মেয়ের উপরে লোকটি নির্যাতন করছে জেনেও কেন তিনি অভিযোগ করলেন না, তা সন্দেহজনক। তাঁরও যোগসাজস থাকতে পারে। তবে গত দু’দিন তাঁকে জেরা করে পুলিশ কী পেয়েছে, তা ভাঙেনি।

এ দিকে এখনও কোনও খোঁজ নেই অধরা সনাতনের। ঝাড়খণ্ড বা বিহারের কোথাও সে আত্মগোপন করে থাকতে পারে, এমনই মনে করছে পুলিশ।

ইতিমধ্যে জেলা পুলিশের একাধিক দল ঝাড়খণ্ড-বিহারে সনাতনের বিভিন্ন আত্মীয় বা পরিচিতের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে। কোথাও গিয়ে পুলিশ শুনেছে সনাতন কিছু দিন আগে এসেছিল, চলে গিয়েছে। ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন থানায় সনাতনের ছবি পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, তার কাছে অর্থের জোগান ফুরিয়ে গিয়ে থাকতে পারে। হয় কোনও পরিচিতের কাছে টাকা ধার করবে, নয়তো কীর্তনীয়া দলের সঙ্গে যোগ দিয়ে আত্মগোপন করবে। এই সমস্ত সূত্র ধরে খোঁজ চলছে তার। খোঁজ চলছে ঝাড়খণ্ডে যাঁরা তুকতাক বা তন্ত্রমন্ত্রের কাজ করবার করেন, তাঁদের সূত্র ধরেও।

এ দিকে এ দিন ‘অল ইন্ডিয়া লিগাল এড ফোরাম’-এর তরফে জেলায় সাংবাদিকদের কাছে দাবি করা হয়েছে, সমাজের স্বার্থেই এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত সনাতন ঠাকুরের ফাঁসি হওয়া দরকার। কোন ভাবেই এই ঘটনাকে লঘু করে দেখা উচিত নয়। অভিযোগ করা হয়েছে, প্রথম দিকে ঘটনাটি নিয়ে প্রশাসন তেমন গুরুত্ব না দেওয়ায় অভিযুক্ত সনাতন বেপাত্তা হয়ে যায়। একই সঙ্গে সনাতন ধরা পড়লে জেলার কোনও আইনজীবি যেন তাকে সহায়তা না করেন, সেই অনুরোধও রাখা হয়েছে।

জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অতুল মাহাতো বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমরাও একমত। আমরা বৈঠক করেই সিদ্ধান্ত নেব যাতে আমাদের কোনও সদস্য সনাতনকে সহায়তা না করেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement