চিহ্ন: তিলাই গ্রামে মালতী রাজোয়াড়ের বাড়ি। ছবি: সুজিত মাহাতো
রাতের অন্ধকারে কে বা কারা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপি সদস্যার বাড়িতে। আর এই ঘটনায় ঘি পড়েছে বলরামপুরের রাজনৈতিক উত্তেজনায়। বিজেপির অভিযোগ, ঘটনায় যোগ রয়েছে তৃণমূলের। যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছে রাজ্যের শাসকদল।
শনিবার রাতে বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনাটি বলরামপুরের ঘাটবেড়া-কেরোয়া পঞ্চায়েতের তিলাই গ্রামে। অযোধ্যা পাহাড়ের নীচের এই পঞ্চায়েত এলাকা কার্যত মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল ছিল একটা সময়ে। জায়গাটির ভৌগলিক অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। ডান দিকে আড়শা। বাঁ দিকে বাঘমুণ্ডি। ঝাড়খণ্ড সীমানাও বেশি দূরে নয়। ঘাটবেড়ার পরে বলরামপুর, তার পরেই বেলা। বাংলার শেষ পঞ্চায়েত। বেলা পার করে ঝাড়খণ্ড শুরু। ২০০৯-১০ সালে এই সমস্ত এলাকা প্রচুর রক্তপাত দেখেছে। অপহরণ দেখেছে। দিনরাত থমথমে হয়ে থেকেছে বাতাস। ২০১১-র ডিসেম্বরে ঘাটবেড়ার পাশের খুনটাঁড়ে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয় অজিত সিং সর্দার ও তাঁর ছেলে বাকুকে। ওই পরিবারটি এলাকায় তৃণমূল সমর্থক বলে পরিচিত ছিল। তবে তার পরে একটু একটু করে এলাকার ছবিটা বদলেছে।
গত ১৪ জুন ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা খরসওয়ার কুকুরুহাটে মাওবাদীদের গুলিতে খুন হয়েছেন পাঁচ পুলিশকর্মী। জেলার পুলিশ ঝাড়খণ্ডের পুলিশের সঙ্গে প্রায়ই সমন্বয় বৈঠক করে। তবে পুলিশের দাবি, তারা সতর্ক রয়েছে। এই রাজ্যে মাওবাদী কার্যকলাপের কোনও খবর নেই। এমন একটা পরিস্থিতিতে মাওবাদীদের নাম উল্লেখ করা পোস্টার নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তর্জা।
শনিবার রাত দেড়টা নাগাদ পোড়া গন্ধে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপির সদস্যা মালতী রাজোয়াড়ের। দেখেন, খড়ের চাল জ্বলছে। স্থানীয় লোকজনের সাহায্যে সেই আগুন নেভানো হয়। বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক বাণেশ্বর মাহাতোর বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এখন অস্থিরতা তৈরি করতে এই সমস্ত করছে।’’ আগেও মাওবাদী পোস্টার দেখেছে এই সমস্ত এলাকা। কিন্তু এই পোস্টারে মাওবাদীদের সংগঠনের নামেই ‘বিভ্রান্তি’ রয়েছে বলে দাবি করে তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলছেন বাণেশ্বরবাবুরা।
রাজ্যে পালাবদলের পরে ক্রমশ মাওবাদী সক্রিয়তা স্তিমিত হয় পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের এই সমস্ত এলাকাগুলিতে। তার পরে বলরামপুর তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত হতে শুরু করে। এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে সেখানে শাসকদল বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বলরামপুর থেকেই হেরে গিয়েছেন জেলা পরিষদের প্রাক্তন তৃণমূল সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো। পঞ্চায়েত সমিতিতেও পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। পরে বিজেপির কয়েক জন সদস্য দল বদল করে তাদের সঙ্গে আসায় বোর্ড গড়ে। বিজেপির অভিযোগ, চাপ দিয়েও মালতীদেবীকে নিজেদের দলে টানতে না পেরে এই কাজ করিয়েছে তৃণমূল। তবে রাজ্যের শাসকদলের বলরামপুর ব্লক সভাপতি অঘোর হেমব্রমের বক্তব্য, ‘‘অহেতুক তৃণমূলের নাম জড়ানো হচ্ছে। এই সমস্ত অঞ্চলে মাওবাদীদেরও কোনও অস্তিত্ব নেই। কারা এটা করেছে পুলিশ খুঁজে বের করুক।’’
তদন্তে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়ে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া রবিবার বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে রাজনৈতিক শত্রুতা থেকে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।’’