Birbhum

হাঁড়ি-মালসার মেলা  

মেলাতে যাতে কোনওরকম ঝামেলা না হয় তার জন্য থাকে পুলিশি নিরাপত্তা। এই পাঁচ দিনের মেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীদের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের। পুতুল নাচ, পঞ্চরস, সার্কাস, লেটো গান প্রভৃতি অনুষ্ঠান দেখতেও মেলায় আসেন বহু মানুষ। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

সিউড়ি ও মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:৪১
Share:

মহম্মদবাজারে হাঁড়ি, মালসার মেলায়। নিজস্ব চিত্র

মাঘ মাসের প্রথম দিনে ব্রহ্মদৈত্যর পুজো উপলক্ষে শুরু হল মেলা। মহম্মদবাজারের সেকেড্ডা পঞ্চায়েতের দীঘলগ্রাম মাঠে বৃহস্পতিবার থেকে পাঁচ দিন এই মেলা চলবে। এই মেলা সাধারণত মাঘ মেলা বা ব্রহ্মদৈত্যর মেলা নামে পরিচিত। এই মেলায় বহু দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন আসেন জিনিসপত্র কেনাবেচার জন্য। পার্শ্ববর্তী রাজ্য বিশেষ করে ঝাড়খণ্ড থেকেও এখানে মাটির তৈরি জিনিস কিনতে আসেন অনেকে। এলাকায় এই মেলা হাঁড়ি মালসার মেলা নামেই পরিচিত।

Advertisement

পুজো কমিটির পক্ষ থেকে বিজয় কুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘এই পুজো শতাব্দী প্রাচীন। আমাদের বাবা, দাদুদের আগে থেকেই চলে আসছে এই পুজো। একে কেন্দ্র করে পাঁচদিন ধরে মেলা চলে। আগে এই মেলাটি একদিনের ছিল। পরে তা গ্রামবাসীদের উদ্যোগে পাঁচ দিন ধরে চলছে। এই ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় অনেক মেলা দেখা যায়। কিন্তু এই মেলায় সবথেকে বেশি মাটির তৈরি জিনিসপত্র পাওয়া যায়। যদিও বর্তমানে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের ব্যবহার অনেক কমে গিয়েছে। তবু এখনও অনেকেই মাটির তৈরি জিনিস কেনার জন্য এই মেলায় আসেন। হাঁড়ি, মালসা, সড়া, ঘট, পাতনা, ফুলদানি থেকে শুরু করে যাবতীয় মাটির জিনিস এই মেলায় বিক্রি হয়। তাছাড়াও সমস্ত রকম কাঁচা আনাজ পাওয়া যায় এই মেলায়। পাওয়া যায় মনোহারী জিনিসপত্রও। এমনকি বড় বড় খাবারের দোকানও দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিদিন দুপুর থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত বহু মানুষের ভিড় দেখা যায় এই মেলায়। মেলাতে যাতে কোনওরকম ঝামেলা না হয় তার জন্য থাকে পুলিশি নিরাপত্তা। এই পাঁচ দিনের মেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীদের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের। পুতুল নাচ, পঞ্চরস, সার্কাস, লেটো গান প্রভৃতি অনুষ্ঠান দেখতেও মেলায় আসেন বহু মানুষ।

কোথাও নাম মাঘ মেলা, কোথাও আবার ব্রহ্মদৈত্যের মেলা। ময়ূরেশ্বরের ঢেকা, শিবগ্রাম, সাঁইথিয়ার ভ্রমরকোল, রক্ষাকালীতলা, লাভপুরের লায়েকপুর, নানুরের থুপসড়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় এক দিনের ব্রহ্মদৈত্যের মেলা বসে। আর বসে সিউড়ি ১ ব্লকের নগরী গ্রামে। এখানে মেলা মকর সংক্রান্তির সন্ধ্যা থেকেই বসে। ১লা মাঘ নগরীতে ব্রহ্মদৈত্যের মেলায় ভিড়ও হল দেদার। মেলায় গ্রামের কুটির শিল্প থেকে খাবার দোকান কোনও কিছুরই অভাব ছিল না। আশপাশের এলাকা থেকে বহু মানুষ এই দিনটি নগরীতে আসেন প্রতিবছর। বহু পুরনো বটগাছকে ঘিরে মেলাটি বসে। জায়গাটি ব্রহ্মচারীর আস্তানা বলে পরিচিত।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অনেক বছর আগে ইন্দ্রনারায়ণ রায় ছিলেন নগরীর জমিদার। তখন ওই এলাকা ছিল ঘন বনে ঢাকা। সেই সময় তারাপীঠ থেকে ময়ূরাক্ষী নদী পেরিয়ে বক্রেশ্বরের দিকে যেতেন সাধু সন্ন্যাসীর দল। এই বট গাছের তলায় বসত আখড়া। চলত সাধন ভজন। ওই স্থানটি যে হিন্দুদের পবিত্র স্থান তারও উল্লেখ আছে গেজেটিয়ারে।

Advertisement

মেলা কবে থেকে চালু হয়েছে জানা নেই কারও। লোকমুখেই জায়গাটির নাম হয়েছে ব্রহ্মচারীর আস্তানা। স্থানীয় সেবায়েত বিমান রায় বা এলাকার বাসিন্দা প্রদীপ কুমার রায়দের কথায়, ‘‘কবে থেকে মেলা শুরু হয়েছে সেটা বলা কঠিন। যুগ যুগ ধরেই মেলা হয়ে আসছে।’’

মেলা কমিটির লোকজন জানান, প্রতি বছর মকর সংক্রান্তির সন্ধ্যায় ওই প্রাচীন বট গাছের নীচে ব্রহ্মচারীর আস্তানাকে ঘিরে বসে মেলা। মেলা চলে ১লা মাঘের বিকেল পর্যন্ত। এই বছরও সেই মতো মেলা বসেছে। মেলায় ৩০০টিরও বেশি দোকান বসেছিল। বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকান, নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী থেকে বেলুন, খেলনা-সহ রকমারি জিনিসের দোকান বসেছে মেলায়। আনাজের হাটও বসতে দেখা গেল মেলায়। মেলা কমিটির সদস্য চন্দ্র শেখর রায় বলেন, ‘‘মেলা পরিচালনার জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে আলো, জল এবং শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রায় এক কিলোমিটার জায়গা জুড়ে এই মেলা বসে। আমাদের গ্রামের অন্যতম বড় উৎসব হল এই ব্রহ্মদৈত্যের মেলা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement