টিকা নিতে লাইনে। কাশীপুরের জেকেএম গার্লস’ স্কুল। নিজস্ব চিত্র
হাম-রুবেলার টিকাকরণে লক্ষ্যমাত্রার থেকে পিছিয়ে পড়েছে পুরুলিয়া জেলা। তাই স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজের গতি বাড়াতে বলার পাশাপাশি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মগুরুদেরও সহায়তা নিচ্ছে ইউনিসেফ।
৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সি ছেলেমেয়েদের হাম-রুবেলার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে গত ৯ জানুয়ারি। এই কর্মসূচি চলবে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এই কর্মসূচি শুরুর সময় আট লক্ষ ৭৯ হাজার ৯৫৫ জনকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রার কথা জানিয়েছিল পুরুলিয়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর। পরে অবশ্য কিছু পড়ুয়ার নাম অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পাশাপাশি বেসরকারি স্কুলেও থাকার ঘটনা নজরে এসেছে। ঝাড়াই-বাছাই করে এখন লক্ষ্যমাত্র কমে হয়েছে আট লক্ষ ৪২ হাজার ৯৫৫।
তবে বেশ কয়েকটি ব্লকে টিকাকরণের গতি নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলা স্বাস্থ্য দফতর। দফতর সূত্রের খবর, জেলার মোট টিকাকরণের হার প্রায় ৭৬ শতাংশ হলেও হুড়া, জয়পুর ও বান্দোয়ান ব্লকে লক্ষ্যমাত্রা ৫০ শতাংশও পেরোয়নি। বরাবাজার, মানবাজার ২, পাড়া, পুরুলিয়া ১ ও রঘুনাথপুর ২ ব্লক জেলার গড়ের চেয়েও পিছিয়ে রয়েছে। জেলার ২০টি ব্লকের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সাঁতুড়ি। তিন পুরএলাকার মধ্যে এগিয়ে রঘুনাথপুর। পুরুলিয়া জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কুণালকান্তি দে বলেন, ‘‘এ মুহূর্তে লক্ষ্যমাত্রার থেকে আমরা কমবেশি ২৪ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছি। কর্মসূচি শুরু পরে মকর সংক্রান্তি-সহ কয়েকটি ছুটির দিন পড়ায় টিকাকরণের গতি কিছুটা কমেছে। হাতে এখনও সময় রয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, মোট লক্ষ্যমাত্রার নিরিখে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় লক্ষ ৭৬ হাজার ৯৮০ জনকে টিকা দেওয়ার কথা কথা থাকলেও ওই দিন পর্যন্ত টিকা দেওয়া গিয়েছে পাঁচ লক্ষ ৩৫ হাজার ৮২ জনকে। এই অবস্থায় যারা এখনও টিকা নেয়ননি, তাদের হদিশ করার জন্য নিচুতলার স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন টিকা নেয়নি তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজের গতি বাড়ানোর পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে জেলার বিধিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মগুরুদেরও সহায়তা নিচ্ছে ইউনিসেফ। জেলার হিন্দু ধর্মের পুরোহিত সৌমাল্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘টিকা নেওয়ার যোগ্যদের নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে আমরা বিভিন্ন মহলে প্রচার করছি।’’ পুরুলিয়া জেলা ইমাম মোয়াজ্জিন অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মৌলানা আব্বাস আনসারি বলেন, ‘‘নিয়মিত যে টিকাগুলি দেওয়া হয় তার বাইরে শিশুদের অন্য কোনও টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু অভিভাবকের আপত্তি বা অনীহা থাকে। আমরা জেলার সমস্ত ইমামদের জানিয়েছি, ছেলেমেয়েদের হাম-রুবেলার টিকাকরণের জন্য তাঁরা যেন অভিভাবকদের সচেতন করেন। স্বাস্থ্যের পক্ষে এই টিকা নেওয়া ভাল।’’ খ্রিস্টান ধর্মগুরু রমানাথ প্রধান, জৈন ধর্মগুরু যুধিষ্ঠির মাজি বলেন, ‘‘এই টিকা নিয়ে ইউনিসেফ আমাদের বিশদে জানিয়েছে। এই টিকা ছেলেমেয়েদের দিতে আমরাও আমাদের সম্প্রদায়ের বিভিন্ন মহলে প্রচার করছি।’’
ইউনিসেফের তরফে অমিতাভ দাস বলেন, ‘‘যাতে নির্দ্বিধায় টিকা নেওয়া হয়, সে কথা প্রচারের জন্য আমরা বিভিন্ন ধর্মের ধর্মগুরুদের কাছে আবেদন রেখেছি।’’ তিনি জানান, জেলার ১১০ জন ধর্মগুরুর সঙ্গে তাঁরা বৈঠক করেছেন। তাঁর আশা, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই লক্ষ্যমাত্রায়পৌঁছনো যাবে।