ধৃতদের নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক পুলিশের। নিজস্ব চিত্র।
চুরির লক্ষ টাকার মোটরবাইক বাজারে বিকোচ্ছে ১২-১৫ হাজার টাকায়! মোটরবাইক চুরি ও বেচাকেনায় যুক্ত সন্দেহে দু’জনকে গ্রেফতার করে এমনই দাবি করল পুলিশ। বাঁকুড়া সদর ও ওন্দা থানার যৌথ অভিযানে মোটরবাইক চুরি করে বিক্রির অভিযোগে ওন্দার রতনপুরের শ্রীকান্ত মিশ্র ও পুনিশোলের সেখ কালিমুদ্দিন নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের শনিবার
বাঁকুড়া আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের
নির্দেশ হয়।
গত বছরে পুজোর সময় থেকে গত কয়েক মাসে বাঁকুড়া সদর থানায় সাতটি ও ওন্দা থানায় একটি মোটরবাইক চুরির অভিযোগ দায়ের হয়েছে। মোটরবাইক চুরি যাওয়া এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ় খতিয়ে দেখে গত ডিসেম্বরে শ্রীকান্তকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাকে জেরা করে দু’টি মোটরবাইকও উদ্ধার হয়। পরে শ্রীকান্ত আদালত থেকে জামিন পান।
পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার ওন্দা বাজার থেকে ফের একটি মোটরবাইক চুরির অভিযোগ ওঠে। চুরি যাওয়া মোটরবাইকের ছবি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। গোপন সূত্রে পুলিশ খবর পায়, পুনিশোলে চুরি যাওয়া ওই মোটরবাইকের মতই হুবহু একটি বাইককে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে। ওই মোটরবাইকের নম্বরপ্লেট হাতে লেখা হওয়ায় সন্দেহ জাগে পুলিশের। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, মোটরবাইকের নম্বরটি ভুয়ো। মোটরবাইকের চালকের থেকে পুলিশ জানতে পারে, পুনিশোলে ভাঙাচোরা লোহার ডিপো চালানো কালিমুদ্দিন তাঁকে মোটরবাইকটি বিক্রি করেছেন। পুলিশ কালিমুদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে, শ্রীকান্তই ওন্দার বাজার থেকে ওই মোটরবাইকটি চুরি করে এনে তাকে বিক্রি করেছিল। রাতেই কালিমুদ্দিন ও শ্রীকান্তকে গ্রেফতার করে আরও চারটি মোটরবাইক উদ্ধার করে পুলিশ।
এ দিন বাঁকুড়া সদর থানায় সাংবাদিক বৈঠক করে বাঁকুড়ার ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) সুপ্রকাশ দাস জানান, বাঁকুড়া শহরের যোগেশপল্লি, কবরডাঙা, ময়রাবাঁধ, শ্রীপল্লির মতো নানা এলাকার ফাঁকা জায়গা থেকে মোটরবাইকগুলি চুরি হয়েছিল। সুনসান জায়গা থেকে ‘হ্যান্ডেল লক’ ভেঙে মোটরবাইকগুলি নিয়ে চম্পট দিত শ্রীকান্ত। পরে কালিমুদ্দিনকে ৫-৬ হাজার টাকায় বাইকগুলি বিক্রি করা হত। কালিমুদ্দিন নম্বরপ্লেট বদলে ১২-১৫ হাজার টাকায় সেগুলি মানুষজনকে বিক্রি করত। ডিএসপি বলেন, “মোট আটটি মোটরবাইকের চুরির অভিযোগ মিলেছিল। ছ’টি উদ্ধার হয়েছে। বাকি দু’টিরও খোঁজ চলছে। এই চোরা কারবারে আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” তদন্তকারীদের একটি সূত্রে দাবি, যে দু’টি মোটরবাইক এখনও উদ্ধার হয়নি, তার একটি চেরাই করে লোহা-লক্কড়ের সঙ্গে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। অন্য মোটরবাইকটি কাউকে বিক্রি করা হয়ে থাকতে পারে। সেটির সন্ধান চালানো হচ্ছে।
চুরি যাওয়া একটি মোটরবাইকের মালিক, বাঁকুড়ার যোগেশপল্লির বাসিন্দা শ্যামসুন্দর কুণ্ডু এ দিন বাঁকুড়া সদর থানা থেকে বাইক ফিরে পান। তিনি বলেন, “গত অক্টোবরে বাড়ির সামনে থেকেই মোটরবাইকটি চুরি গিয়েছিল। পুলিশে অভিযোগ জানালেও ফিরে পাব বলে আশা ছিল না। শেষমেষ মোটরবাইক ফিরে পেয়েছি, পুলিশকে ধন্যবাদ।”