Kurmi Community

আন্দোলনে আরও দুই সংগঠন

আদ্রা-চান্ডিল শাখায় যাত্রিবাহী ট্রেনের থেকে মালগাড়িই বেশি চলাচল করে। ফলে রেলের লোকসানের বোঝা এখানে বেশিই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৩ ১০:১৩
Share:

পুরুলিয়া সদরে শুরু অবস্থান। ছবি: সঙ্গীত নাগ ও সুজিত মাহাতো

রাজ্য সরকারের তরফে সদর্থক সাড়া আসেনি। এই অভিযোগে জনজাতির স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া আদিবাসী কুড়মি সমাজ শুক্রবারও অবরোধ থেকে সরল না। বুধবার থেকে কুস্তাউর স্টেশন ও কুস্তাউর মোড়ে রাজ্য সড়ক টানা অবরুদ্ধ করে রেখেছে তারা। এতে রেলের যেমন লোকসান হচ্ছে, তেমনই বহু ট্রেন বাতিল হওয়ায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন আমজনতা। তবে একই দাবিতে এ দিন পুরুলিয়ায় জেলাশাসকের কার্যালয়ের কাছে অবস্থানে বসা পূর্বাঞ্চল আদিবাসী কুড়মি সমাজ জানিয়েছে, মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে কোনও আন্দোলন তারা করবে না। তাদের সঙ্গে শামিল হয়েছে আদিবাসী নেগাচারি কুড়মি সমাজ।

Advertisement

দক্ষিণ-পূর্ব রেল এ দিন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, আদ্রা ডিভিশনে কুস্তাউর এবং খড়গপুর ডিভিশনের খেমাশুলি স্টেশনে অবরোধের জেরে শুক্রবার তারা মোট ৭১টি দূরপাল্লা ও প্যাসেঞ্জার ট্রেন বাতিল করেছে। আজ, শনিবার ৭২টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, বুধবার থেকে চলা অবরোধে শুক্রবার পর্যন্ত দুই ডিভিশনে মোট ২৪৪টি ট্রেন বাতিল করতে হয়েছে।

আদ্রা-চান্ডিল শাখায় যাত্রিবাহী ট্রেনের থেকে মালগাড়িই বেশি চলাচল করে। ফলে রেলের লোকসানের বোঝা এখানে বেশিই। এ দিন কুস্তাউর স্টেশনে গিয়ে দেখা গিয়েছে, ঝুমুরগানে গলা মেলাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। প্ল্যাটফর্মে আরপিএফ এবং জিআরপি কর্মীরা টহল দিচ্ছেন। পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কের উপরে আড়াআড়ি ভাবে বাঁধা বাঁশ। পুরুলিয়া থেকে রঘুনাথপুর, সাঁওতালডিহি, দুর্গাপুর বা আসানসোল কিংবা কলকাতাগামী সমস্ত বাসের ওই পথে চলাচল বন্ধ রয়েছে। ভোগান্তিতে পড়া যাত্রীদের প্রশ্ন, কবে অবরোধ উঠবে?

Advertisement

বৃহস্পতিবার আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিত মাহাতো খেমাশুলির আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। অনেক রাতে ফেরেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের শীর্ষস্তর থেকে আলোচনার প্রস্তাব না আসায় আমরা আশ্চর্য। বলছে, রেলের অনেক ক্ষতি হচ্ছে. প্রচুর মানুষ দুর্ভোগে পড়ছেন। কিন্তু সরকার তো হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। আমরা নিজেদের দাবি থেকে সরছি না।’’

তাঁদের নিয়ে সরকার কোনও আগ্রহ না দেখানোয় আন্দোলনের মাত্রা বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে আদিবাসী কুড়মি সমাজ। কাল, রবিবার থেকে পুরুলিয়া-মুরী শাখার (পুরুলিয়া-রাঁচী রেলপথ) কোটশিলা স্টেশন এবং চাষমোড়-তুলিন রাজ্য সড়কের (পুরুলিয়া-রাঁচী রাস্তা) কোটশিলাতেও অবরোধ শুরু করার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে আদিবাসী কুড়মি সমাজ।

একই দাবি— জনজাতির স্বীকৃতি চাই, একই স্লোগান— জয় গরাম, একই হলুদ রঙের পতাকা নিয়ে ঝুমুর গান-করম নাচে এ দিন থেকে জেলাশাসকের কার্যালয়ের সামনে গণঅবস্থান শুরু করেছে কুড়মিদের দু’টি সংগঠন ‘পূর্বাঞ্চল আদিবাসী কুড়মি সমাজ’ ও ‘আদিবাসী নেগাচারি কুড়মি সমাজ’।

পূর্বাঞ্চল আদিবাসী কুড়মি সমাজের রাজ্য সম্পাদক শুভেন্দু মাহাতোর দাবি, স্বাধীনতার আগে ইংরেজ আমলে যে জাতিগুলি প্রিমিটিভ ট্রাইব হিসেবে চিহ্নিত ছিল, তাদের মধ্যে কুড়মি ছাড়া আর সব জাতিই জনজাতির তকমা পেয়েছে। ব্যতিক্রম শুধু কুড়মি সম্প্রদায়। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও কেন আরজিআই (রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়া) কুড়মিদের জনজাতির স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে আপত্তি জানাচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়। তাঁর মতে, ‘‘আমাদের ধর্মাচারণ অটুট রয়েছে, নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের কাছে এই মর্মে সুপারিশও করেছেন। সেই সুপারিশ আমাদের পক্ষে রয়েছে। তবে আমাদেরও দাবি রাজ্য সরকার জাস্টিফিকেশন রিপোর্ট কেন্দ্রের কাছে পাঠাক।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে আন্দোলনে আমরা বিশ্বাসী নই। তবে দাবিপূরণের জন্য আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement