ফিতে কাটছেন বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
রাস্তা একটাই। শিলান্যাস হল দু’বার। সাক্ষী থাকল বাঁকুড়ার রাইপুর।
বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়কে রাইপুরের চামটাবাইদ মোড় থেকে প্রায় সাড়ে ন’কিলোমিটার দীর্ঘ ওই রাস্তাটি গিয়েছে বকসি পর্যন্ত। দীর্ঘদিন ধরে সেটি বেহাল হয়ে রয়েছে। ‘বাংলা সড়ক যোজনা’-য় সংস্কার হবে জানিয়ে দিন পনেরো আগে রাস্তার শিলান্যাস করেছিলেন বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি তৃণমূলের মৃত্যুঞ্জয় মুর্মু। বুধবার সকাল ১০টা নাগাদ একই রাস্তায় ফিতে কেটে বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার দাবি করেন, সেটির কাজ ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’য় হবে। বিডিও (রাইপুর) সঞ্জীব দাস বলেন, ‘‘রাস্তাটি কোন তহবিল থেকে হচ্ছে খোঁজ নিচ্ছি।’’
২০০০ সালের শেষে গ্রামোন্নয়ন দফতরের আওতায় ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’ বা পিএমজিএসওয়াই প্রকল্প চালু করে কেন্দ্রীয় সরকার। মূল লক্ষ্য— সমতলে পাঁচশোর বেশি আর পাহাড়, মরুভূমি বা আদিবাসী এলাকায় আড়াইশোর বেশি জনসংখ্যা থাকলে সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
প্রাথমিক ভাবে কেন্দ্রের ১০০ শতাংশ আর্থিক সহায়তায় প্রকল্পটি চালু হয়েছিল। ২০১৫ সালের নভেম্বরে চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ মতো ঘোষণা করা হয়, যোজনায় কেন্দ্র ৬০ শতাংশ এবং রাজ্য ৪০ শতাংশ টাকা দেবে। উত্তর পূর্ব ভারত ও পাহাড়ি এলাকার ক্ষেত্রে কেন্দ্র দেবে ৯০ শতাংশ টাকা, রাজ্য দেবে ১০ শতাংশ। ২০১৬ সালে রাজ্য সরকার প্রকল্পের নাম বদলে ‘বাংলা সড়ক যোজনা’ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি মৃত্যুঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ২৪ অগস্ট শিলান্যাসের পরে, মাটি ফেলে রাস্তা চওড়া করার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। তার পরে বিজেপির সাংসদ আবার শিলান্যাস করতে ছুটে এসেছেন।’’
এ দিন ফিতে কাটার পরে বিজেপি সাংসদ সুভাষবাবু বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকার পরে, প্রাধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তাটি তৈরির অনুমোদন মিলেছে। কিন্তু রাজ্যের শাসকদলের স্থানীয় নেতারা গায়ের জোরে বাংলা সড়ক যোজনার নামে শিলান্যাস করেছেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে ফের শিলান্যাস করা হয়।’’
সুভাষবাবুর অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া টাকা মানুষকে ভুল বুঝিয়ে এ ভাবেই নিজেদের বলে দাবি করে আসছেন শাসকদলের নেতারা।’’
তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা যুব সভাপতি তথা রাইপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি রাজকুমার সিংহের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘এই রাস্তা নির্মাণের জন্য ৪০ শতাংশ টাকা দিতে হয় রাজ্য সরকারকে। সেই সঙ্গে পাঁচ বছর রক্ষণাবেক্ষণও করতে হয়। একই রাস্তার দু’বার শিলান্যাস করে বিজেপির সাংসদ প্রচারে আসতে চাইছেন।’’