অনাস্থার জেরে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে ঝালদা পুরসভায়। গত ৫ মে অনাস্থার চিঠি জমা পড়ার পর থেকে কর্মীদের মাইনে হয়নি। চলতি মাসে পেনশনও পাননি অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা। বিভিন্ন কাজ নিয়ে যাঁরা পুরসভায় আসছেন, তাঁদের কারও কাজ হচ্ছে, কাউকে ফিরে যেতে হচ্ছে। আটকে রয়েছে ‘সকলের জন্য বাড়ি’ প্রকল্পে সুবিধা প্রাপকদের বাড়ি তৈরির চেক। অফিসের বড়বাবু নিজেও ছুটিতে রয়েছেন অনাস্থার চিঠি জমা পড়ার কয়েক দিন পর থেকেই।
এ দিকে অনাস্থার চিঠি জমা পড়ার পর থেকে পুরসভায় পুরপ্রধানের হাজিরা কার্যত নিয়মরক্ষার হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ। বিরোধী দলনেতা মধুসূদন কয়াল বলেন, ‘‘তৃণমূলের নিজেদের ঝামেলার কারণে সবাই সমস্যায় পড়ছেন। অনাস্থার বৈঠক তো পুরপ্রধান ডাকলেন না!’’
২০১৫-র পুরভোটে ঝালদা পুরসভার ১২টি আসনে কংগ্রেস নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। কংগ্রেস ৭টি, ফব ২টি, সিপিএম ১টি এবং নির্দল ও বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা ১টি করে আসন পান। এক বছর পরেই কংগ্রেসের ৪জন, ফবর ১জন এবং ২ নির্দল কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেন। কংগ্রেসের হাত থেকে বোর্ড চলে আসে তৃণমূলের হাতে। কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন দল থেকে তৃণমূলের হাতে বোর্ড আসার ক্ষেত্রে যিনি ভূমিকা পালন করেছিলেন, ঝালদার রাজনীতিতে প্রভাবশালী সেই শিল্পপতি সুরেশ অগ্রবাল পুরপ্রধানের কুর্সিতে বসেন। সূত্রের খবর, সেই সময়ে পুরপ্রধানের কুর্সিতে তাঁর বসার বিষয়টি কেউ কেউ মেনে নিতে না পারলেও খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হস্তক্ষেপ করায় প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি।
কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পুরপ্রধানের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় দলেরই কাউন্সিলরদের একাংশের। পুরসভা পরিচালনার ক্ষেত্রে সতীর্থদের সঙ্গে আলোচনা না করে সিদ্ধান্ত নেওয়া, একক ভাবে পুরসভা পরিচালনা করা, বৈঠক না ডাকা-সহ একাধিক অভিযোগ তুলে তৃণমূলেরই ৪ কাউন্সিলর, কংগ্রেসের ৩ জন এবং ফব ও সিপিএমের এক জন করে কাউন্সিলরকে সঙ্গে নিয়ে পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন।
বিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে দলের কাউন্সিলররাই পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে এই অনাস্থায় তৃণমূল দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়ে। দল সূত্রের খবর, বিক্ষুব্ধদের নিয়ে এর পরে জেলা নেতৃত্ব ও রাজ্য নেতৃত্বের প্রতিনিধিরা একাধিক বৈঠক করেছেন। অনাস্থার চিঠি জমা পড়ার পরে প্রথম বৈঠকে ঠিক হয় পুরপ্রধান সুরেশবাবুকে তিন মাসের জন্য ছুটিতে যেতে বলা হবে। কিন্তু তিনি ছুটিতে যাওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিয়ে গড়িমসি করেন। গত শনিবারও জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বিক্ষুব্ধদের বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকে পুরপ্রধান নিজেও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু কোনও সমাধান সূত্র বেরোয়নি।
এ দিকে পুরসভায় অচলাবস্থার জেরে সমস্যায় পড়েছেন শহরের বাসিন্দারা। ঝালদার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সঞ্জু বাগদি বলেন, ‘‘আমি দু’দিন ঘুরে এসেছি। শংসাপত্র দরকার।’’ ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পেশায় ফুচকা বিক্রেতা কার্তিক দত্ত বলেন, ‘‘সকলের জন্য বাড়ি প্রকল্পের চেক পাচ্ছি না। পুরসভায় গিযে খোঁজ নিয়েছিলাম, বলেছে এখন নাকি কেউ আসছেন না।’’ পুরকর্মী সংগঠনের সম্পাদক কৃষ্ণকুমার সাও বলেন, ‘‘অস্থায়ী কর্মীরা খুবই অল্প টাকায় কাজ করেন। তাঁরা মাইনে না পেয়ে সমস্যায় পড়েছেন।’’
তৃণমূলেরই কাউন্সিলর তথা শহর তৃণমূলের সভাপতি প্রদীপ কর্মকার বলেন, ‘‘আসলে পুরপ্রধান নিয়মিত না আসায় সমস্যা হয়েছে। চেক তৈরি থাকলেও অনেকে পাচ্ছেন না। আমরা আমাদের বক্তব্য জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েছি।’’ প্রায় একই বক্তব্য উপ-পুরপ্রধান কাঞ্চন পাঠকেরও। দলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো অবশ্য দাবি করেছেন, ঝালদার বিষয়টি আর দু’-এক দিনের মধ্যে মিটে যাবে। পুরপ্রধানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর প্রতিক্রিয়া মেলেনি।