মইদুল ইসলামের স্মরণসভায় শোকার্ত মা। ছবি: অভিজিৎ অধিকারী।
মৃত ডিওয়াইএফআই কর্মী মইদুল ইসলাম মিদ্যার (ফরিদ) স্মরণসভায় গিয়ে তাঁর মৃত্যুর ময়না-তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে তৃণমূল সরকারকে বিঁধলেন সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম। ওই রিপোর্টের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ফরিদের বাড়ির লোকজনও।
১১ ফেব্রুয়ারি বাম যুব-ছাত্রদের নবান্ন অভিযানে কলকাতা পুলিশ বেধড়ক লাঠি চালায়। তাতে মইদুল ‘আহত’ হন। পরে কলকাতার একটি নার্সিংহোমে মারা যান তিনি। মৃত্যুর পরেই অভিযোগ ওঠে, পুলিশের লাঠির আঘাতেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। সোমবার লালবাজার জানিয়েছে, ময়না-তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট এসেছে। পুলিশের মারধরে নয়, অসুস্থতার জেরেই ফরিদের মৃত্যু হয়েছে। কলকাতা পুলিশ জানায়, মইদুলের কিডনি ও হার্টের অসুখ ছিল। সেটাই মৃত্যুর কারণ। তাঁর পায়ে রক্ত জমাট বাঁধার একটি চিহ্ন আছে। নবান্ন অভিযানের সময় রাস্তায় পড়ে গিয়ে সেই আঘাত লেগে থাকতে পারে। তবে তা মৃত্যুর কারণ নয় বলে জানাচ্ছে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট।
মঙ্গলবার বাঁকুড়া জেলার কোতুলপুরের চোরকোলা গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের সামনের মাঠে এ দিন ডিওয়াইএফ-সহ ১০টি বামপন্থী ছাত্র-যুব সংগঠন স্মরণ সমাবেশের আয়োজন করেছিল। ওই সভায় সেলিম অভিযোগ করেন, ‘‘ওটা ময়না-তদন্তের রিপোর্ট নয়। একটা সর্বগ্রাসী, স্বৈরাতান্ত্রিক সরকারের তাঁবেদারেরা মালিককে খুশি করতে এ সব করেছে। ময়নাতদন্তের আগেই মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছিলেন, রিপোর্টেও তাই লেখা হয়েছে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘রিপোর্টে বলা হয়েছে, পড়ে গিয়ে আঘাত লেগেছে। অথচ, এত লাঠি মারল, তার আঘাত লাগল না? এখন ডাক্তারেরাও ঘাবড়াচ্ছেন।’’
যদিও বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল সভাপতি শ্যামল সাঁতরার দাবি, ‘‘সেলিমবাবু এতই যখন জানেন, তিনি বরং ডাক্তারি করতে পারতেন। আমাদের দল পুলিশ বা প্রশাসনের কাজে হস্তক্ষেপ করে না। সেলিমবাবুর দলই বরং এ সব করত।’’
সভায় সেলিম অভিযোগ করেন, ‘‘এমন অনেক কেস আছে, যেগুলো ধামাচাপা দেওয়া হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে পুনরায় তদন্ত করে আইনের বিচার মিলেছে। অসুখে মারা গিয়েছে, এ কথা লোকে যদি বিশ্বাস না করে, তাই বলেছে, পড়ে গিয়ে আঘাত লেগেছে। এ জন্যই ময়না-তদন্তের সময় ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ভিডিয়ো রেকর্ডিং করানো হয়েছে। শহিদ মইদুলের মা যখন দোষীদের শাস্তি চেয়েছেন, তখন বিচার হবেই। আমরা হাইকোর্টে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়ে আগেই মামলা করেছি।’’
মঞ্চে উঠে ফরিদের মা তহমিনা বিবি দাবি করেন, ‘‘আমার মইদুলকে যারা মেরেছে, তাদের প্রতিশোধ নেব, নেব, নেব। আমার ছেলেকে যারা মেরেছে, কারও দরকার নেই, আমি একাই প্রতিশোধ নেব। পুলিশের ওই রিপোর্ট আমরা মানি না। আদালতেই বিচার পাব।’’ ফরিদের স্ত্রী মামনি বিবিকে সম্প্রতি রাজ্য সরকারের তরফে কোতুলপুর থানায় হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হয়েছে। পরিবারের তরফে এই মৃত্যুর জন্য কোনও মামলা করা হয়নি। তবে মামনিও এ দিন সভায় দাবি করেন, ‘‘আমরা রিপোর্ট বুঝি না। সত্যিকারের বিচার চাই। দোষীদের শাস্তি চাই।’’
ইতিমধ্যে মইদুলের মৃত্যুতে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল কমিশনার (২) দময়ন্তী সেনের নেতৃত্বে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গড়া হয়েছে। মইদুল মামলায় সেই দলের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। লালবাজারের খবর, হাইকোর্টে পুলিশি রিপোর্টের সঙ্গে এই ময়না-তদন্তের রিপোর্টও পেশ করতে পারে ‘সিট’।