হরিণশিঙায় গাঁওতার জমায়েত। নিজস্ব চিত্র
সরকারের সঙ্গে আলোচনার রাস্তা খোলা রেখেও আদিবাসীদের উচ্ছেদ করে কোনও শিল্প নয়—শনিবার একটি জমায়েতের পরে এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আদিবাসীদের সামাজিক সংগঠন গাঁওতা। এ দিন ওই জমায়েত হয় মহম্মদবাজারের হরিণশিঙায়। জমায়েতে উপস্থিত আদিবাসী গাঁওতার অন্যতম নেতা রবীন সোরেন বলেন, ‘‘এলাকায় প্রস্তাবিত কয়লা খনি নিয়ে এ দিনের জমায়েতে এলাকার বিভিন্ন গ্রামে বসবাসকারী আদিবাসী পুরুষ-মহিলারা তো ছিলেনই, ছিলেন অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষও। সেখানেই মিলিত সিদ্ধান্ত হয়েছে, আদিবাসীদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে শিল্প করা যাবে না।’’
সম্প্রতি দিঘায় বেঙ্গল বিজনেস কনক্লেভের শেষ দিনে মহম্মদবাজারের ডেউচা-পাঁচামি কোল ব্লকের একটি অংশে কাজ শুরুর কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গাঁওতা নেতৃত্বের দাবি, এলাকায় খোলামুখ কয়লা খনি হবে, সরকারের তরফে এই ঘোষণা সম্পর্কে অবহিত থাকলেও কী শর্তে জমি নেওয়া হবে, ব্লকের ঠিক কোন কোন এলাকা জুড়ে কয়লা খনি হবে, এত সংখ্যক মানুষকে কোথায় সরানো হবে— সে-সব নিয়ে স্থানীয় মানুষের সংশয় রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ডেউচা-পাঁচামি নিয়ে বৈঠক করতে সিউড়িতে আসার কথা ছিল রাজ্যের মুখ্যসচিব-সহ সরকারের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকদের। যাওয়ার কথা ছিল ডেউচা পাঁচামিতেও। কিন্তু সেই সফরসূচি আচমকা বাতিল হয়ে যায়।
সে দিন মুখ্যসচিব আসবেন শুনে প্রতিটি এলাকা থেকে লোক জমায়েত হয়েছিল। গাঁওতার আর এক নেতা সুনীল সোরনের দাবি ছিল, মুখ্যসচিব এলে এলাকার মানুষের দাবিদাওয়া সংক্রান্ত স্মারকলিপি তাঁকে দেওয়া হবে। মূল দাবি, তাঁরা জমিহারা হতে চান না। তাঁরা তাঁদের জমিবাড়ি ও চাষবাস নিয়ে বেঁচে থাকতে চান। প্রথম থেকেই সুনীল খোলামুখ খনির বিপক্ষে কথা বলছেন। কিন্তু রবীন আলোচনার পক্ষে ছিলেন বরাবর। তবে, শনিবারের জমায়েতের পরে তিনিও জানান, আলোচনা চাইলেও এলাকার আদিবাসীরা খোলামুখ খনির জন্য উচ্ছেদ হতে চান না। রবীনের বক্তব্য, ‘‘সরকারি আধিকারিকেরা আলোচনা চাইলে নিশ্চয়ই এখানে আসুন। কিন্তু কাউকে মাধ্যম করে বা ব্লক বা জেলায় ডেকে সেই বৈঠক হবে না। হতে হবে এখানেই। কারণ আমিও এলাকার বাসিন্দা নই। মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা আমিও নেব না। যা সিদ্ধান্ত, সেটা এলাকার মানুষই নেবেন আলোচনা সাপেক্ষে।’’