টিভির পর্দায় চোখ উদ্বিগ্ন পরিজনের। নিজস্ব চিত্র।
উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ে ‘ট্রেকিং’য়ে গিয়ে আটকে পড়েছেন বাঁকুড়ার ওন্দা থানার পুরুষোত্তমপুর গ্রামের সাত বাসিন্দা। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন পরিজনেরা। যদিও ‘বেস ক্যাম্প’ থেকে জানা গিয়েছে, অভিযাত্রীরা সকলে সুরক্ষিত রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে উত্তরাখণ্ড প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের এক কর্তা।
বৃহস্পতিবার গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, চিন্তিত মুখের সারি। অরণ্যদেব মণ্ডল ও তাঁর ভাই সবুজ মণ্ডল, পুষ্পেন মণ্ডল, বিকাশ রায়, ত্রিপুরারি কুন্ডু, মৃত্যুঞ্জয় পাল ও তাঁর স্ত্রী অন্বেষা পাল— নবমীর সকালে এলাকা থেকে সাত জনের দলটি উত্তরাখণ্ডের উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। প্রত্যেকের বয়স ৩০ থেকে ৪০-এর মধ্যে। বিকাশ ছাড়া, সকলেই স্কুলশিক্ষক। পরিজনেরা জানান, ফোনে তাঁরা জানিয়েছিলেন, বিজয়ার দিন অর্থাৎ শুক্রবার রাত ৮টায় তাঁরা দেহরাদুনে ট্রেন থেকে নামেন। সেখান থেকে মুসৌরি হয়ে শনিবার সন্ধ্যায় পৌঁছন সাঁকরিতে। এর পরে, রবিবার সকালে উত্তরাখণ্ডের বেস ক্যাম্প ছেড়ে ১২ কিলোমিটার পথে ট্রেকিং শুরু করেন।
অরণ্যদেব, সবুজের বাবা জয়দেব মণ্ডল বলেন, “গত রবিবার সকালে ছেলেরা ফোনে জানায়, তারা ট্রেকিংয়ে যাচ্ছে। ফোনে আর যোগাযোগ করা যাবে না। ২২ তারিখে বেস ক্যাম্পে ফিরে ফোন করবে। সব ঠিকই ছিল। কিন্তু উত্তরাখণ্ডের আবহাওয়া খারাপের খবর শোনার পরে থেকে, মন অশান্ত হয়ে উঠেছে।” মা পাপিয়া মণ্ডলের গলাতেও উৎকণ্ঠা। বললেন, “শুনছি, ছেলেরা ভাল আছে। কিন্তু ওদের গলা না শুনলে মন সায় দিচ্ছে না। দিনরাত টিভিতে চোখ রেখে
বসে আছি।”
পুষ্পেন মণ্ডলের স্ত্রী লাবণী সেন মণ্ডল জানান, উত্তরাখণ্ডের খবরে চিন্তা রয়েছে। তবে যতটুকু খবর পেয়েছেন, সকলে সুস্থ আছেন। তাড়াতাড়ি ফিরে আসুন সকলে, এটাই চান। তবে উত্তরাখণ্ডে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের খবর পাওয়ার পরে থেকে কার্যত নাওয়া-খাওয়া বন্ধ মৃত্যুঞ্জয় পালের বাবা বিশ্বনাথ পালের। বললেন, “খুবই আতঙ্কে রয়েছি। যতক্ষণ না গলা শুনতে পাচ্ছি, স্বস্তি মিলবে না।”
এ দিন ফোনে যোগাযোগ করা হলে, উত্তরাখণ্ডের বেস ক্যাম্পে থাকা দলটির গাইডের এক সহকারী ভগৎ সিংহ দাবি করেন, “এখানে বৃষ্টির তেমন প্রভাব নেই। অভিযাত্রীরা সুরক্ষিত রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রাখা হচ্ছে। শুক্রবার সকালে নির্দিষ্ট সময়ে তাঁরা বেস ক্যাম্পে ফিরে আসবেন।”