পুরুলিয়ায় হানা
স্ক্রাব টাইফাসের
প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া
ফের স্ক্রাব টাইফাস রোগাক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে পুরুলিয়ায়। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানাচ্ছে, ইতিমধ্যে জেলায় স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছয়। দু’জন পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের মধ্যে এক জনের দেহে একই সঙ্গে ডেঙ্গি ও স্ক্রাব টাইফাসের জীবাণুর সন্ধান মিলেছে। সম্প্রতি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া এক ব্যক্তিকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পতঙ্গ বিশারদ সংকর্ষণ রায় জানান, রোগটির বাহক ‘মাইট’ নামের এক জাতীয় পোকা। বর্ষায় মূলত ঝোপঝাড়ে এগুলি থাকে। পাশাপাশি, ইঁদুরের গায়েও ‘মাইট’ বাসা বাঁধে। আকারে এতই ছোট যে খালি চোখে দেখা যায় না। লার্ভা অবস্থায় থাকা মাইট (‘চিগার’) কাউকে কামড়ালে সেখান থেকে ব্যাকটিরিয়া ব্যক্তির শরীরে ঢোকে। সময়মতো চিকিৎসা না হলে তা মারাত্মক আকার নিতে পারে।
কী ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, জ্বর, মাথা ব্যথা, গায়ে ব্যথার সঙ্গে শরীরে ‘র্যাশ’ বেরোয়। উপসর্গগুলির সঙ্গে ডেঙ্গির মিল রয়েছে। সংকর্ষণবাবুর কথায়, ‘‘ডেঙ্গির উপসর্গের সঙ্গে ফারাকটা এই যে, পোকাটি যেখানে কামড়ায়, ঘা হয়ে যায়। কখনও কখনও সিগারেটের ছ্যাঁকার মতো দাগ হয়। তবে ঘা না-ও হতে পারে। সবটাই নির্ভর করে, কামড় কতটা জোরাল, তার উপরে।’’
উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন সরকার জানাচ্ছেন, জ্বর হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে। জ্বরের সঙ্গে কামড়ের জায়গায় ঘা, কিছু ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট এমনকি, রক্তক্ষরণ বা জ্ঞান হারানোও স্ক্রাব টাইফাসের লক্ষণ হতে পারে। সম্প্রতি পুরুলিয়া মেডিক্যালে স্ক্রাব টাইফাস নির্ণয়ের পরিকাঠামোও তৈরি করা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘এ সময়ে বিশেষ করে ঝোপঝাড়ে যাওয়া এড়াতে হবে। বাগান পরিষ্কারের কাজ করলে জুতো পরতে হবে। শরীরঢাকা পোশাক পরা জরুরি। সঙ্গে ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা, ইঁদুরের সংখ্যাবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ, যত্রতত্র আবর্জনা না ফেলার মতো বিষয়গুলি মেনে চলা দরকার।’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, গত বছরে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫২। কাশীপুর ও হুড়ায় স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি, পুঞ্চা, আড়শা, বান্দোয়ান, বাঘমুণ্ডি, নিতুড়িয়া, পাড়া, রঘুনাথপুর ২-সহ বিভিন্ন ব্লকে স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্তের সন্ধান মিলেছিল। চলতি মরসুমের আক্রান্তদের মধ্যে কাশীপুরের দু’জন আছেন।
দফতরের এক আধিকারিক জানান, প্রথমে জ্বর নিয়ে জেলার এক আক্রান্ত বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানেই পরীক্ষায় রোগ ধরা পড়ে। পরে, পুরুলিয়া ২ ব্লকের হাতোয়াড়া ও ঘোঙা গ্রামের দু’জনের দেহে রোগের জীবাণুর হদিস মেলে। পরবর্তীতে পুরুলিয়া শহরের সরবাগান, পুরুলিয়া ২ ব্লকের গোলামারা ও কাশীপুর ব্লকের ধবাড়ি গ্রামের এক জনের দেহে জীবাণু মিলেছে। কাশীপুরের ধবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা এক যুবক সম্প্রতি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। গত শুক্রবার জেলা স্বাস্থ্য দফতরের মহামারি বিশেষজ্ঞ সতীনাথ ভুঁইয়ার নেতৃত্বে একটি দল ধবাড়িতে গিয়ে আক্রান্ত ও এলাকার পরিস্থিতি ঘুরে দেখেছে।