অযোধ্যা পাহাড়। ফাইল চিত্র।
ঘরে ফেরেনি হাতির পাল। বড়দিনের উৎসবের আগে পুরুলিয়ার পর্যটন কেন্দ্র অযোধ্যা পাহাড়ে তাই জাঁকিয়ে বসেছে আতঙ্ক। বন দফতর জানাচ্ছে, পাহাড়ের গোবরিয়ায় জঙ্গলে ঘাঁটি গেড়েছে ঝাড়খণ্ড থেকে আসা বুনো হাতির দল। ডিএফও (পুরুলিয়া) রামপ্রসাদ বাদানা জানিয়েছেন, সেই দলে সাতটি হাতি রয়েছে। শুনে পিলে চমকাচ্ছে পাহাড়ে পিকনিক করতে আসা পর্যটকদের।
পর্যটকদের ‘হাতি হইতে সাবধান’ করার জন্য মঙ্গলবার থেকেই পাহাড়ে মাইক-প্রচার শুরু করেছে বন দফতর। প্রচার চলছে আপারড্যাম, হিলটপ, পুনিয়াশাসানের মতো এলাকাগুলিতে। মাইক থেকে ভেসে আসছে সতর্কবার্তা—‘এলাকায় হাতির আনাগোনা রয়েছে। জঙ্গলে হাতির দল আছে। আপনারা অতি উৎসাহী হয়ে জঙ্গলে ঢুকবেন না। ঘুরতে যাওয়ার সময় সঙ্গে নিন স্থানীয় গাইড।’ পাশাপাশি পাহাড় এলাকায় হোটেলগুলিতে পাঠানো হচ্ছে সতর্কবার্তা লেখা চিঠি। সেখানে পর্যটকদের উদ্দেশে একগুচ্ছ পরামর্শ লেখা হয়েছে। বলা হয়েছে, হাতির দলের সামনে পড়ে গেলে ভুল করেও ছবি তুলতে যাবেন না।
রামপ্রসাদবাবু বলেন, ‘‘গোবরিয়াতে বর্তমানে সাতটি হাতি রয়েছে। তারা যাতে লোকালয়ে আসতে না পারে, তার জন্য সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অতি-উৎসাহিত হয়ে কেউ যাতে জঙ্গলে ঢুকে না পড়েন, সেটাও দেখা হচ্ছে। এ দিন আমরা মাইকে প্রচার শুরু করেছি। এলাকায় টহলদারিও চালবে।’’
তৎপর পুলিশও। এক পুলিশ আধিকারিকের দাবি, ‘‘পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য পাহাড়ের বিভিন্ন পয়েন্টে সিভিক-কর্মীর মোতায়েন হয়েছে। ভ্যানে টহলদারি চলছে।’’
পুলিশ এবং বন দফতর পাহাড়ে নিরাপত্তা আঁটসাঁট করলেও তাদের সেই তৎপরতা ছাপিয়ে উঠে আসছে আতঙ্ক। সোমবার অযোধ্যা পাহাড়ে ঘুরতে এসেছেন কলকাতার বাসিন্দা রূপালী মুখোপাধ্যায়। পাহাড়ে হাতি ডেরা করেছে শুনে তাঁর ভয়ার্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘এখানে এসে শুনছি সামনেই কোথাও হাতি রয়েছে। আমাদের ভীষণ ভয় করছে।’’ তবে আতঙ্ক থাকলেও খোলা জায়গায় হস্তি-দর্শনের সম্ভাবনা থাকায় উৎসাহিত পর্যটকদের একাংশ। কাঁচড়াপাড়া থেকে আসা সায়ন ধড় ও সুকুমার দেবনাথের প্রতিক্রিয়া, ‘‘শুনেছি হাতির দল এখানে রয়েছে। হাতির দেখা মিললে মন্দ হয় না।’’
পাহাড়ের হোটেল ব্যবসায়ীদের একাংশ জানাচ্ছেন, হাতির দল থাকায় পর্যটকদের মধ্যে চাপা আতঙ্ক রয়েছে। হোটেল মালিক চণ্ডী মাহাতো এবং অতুল সিংসর্দাদের কথায়, ‘‘বহু পর্যটক এসেছেন। আমাদের সব ঘর বুক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু লক্ষ্য করছি, হাতির কথা শুনলেই তাঁরা কেমন যেন ঘাবড়ে যাচ্ছেন।’’ নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক হোটেল ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘গোবরিয়ার যে জায়গাটিতে হাতির দল ঘাঁটি গেড়েছে বলে বন দফতর জানিয়েছে, তার থেকে খুববেশি দূরে নয় আপারড্যাম। এই আপারড্যাম-ই পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা।’’
দিনকয়েক আগে ঝালদা বনাঞ্চল এলাকা থেকে ১৪টি হাতির একটি দল আড়শা হয়ে অযোধ্যা বনাঞ্চলের গোবরিয়ার জঙ্গলে ঢোকে। এখন সেখানে সাতটি হাতি রয়েছে। বাকি হাতিগুলি ঝাড়খণ্ডে চলে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএফও।