অচেনা ময়দানে কঠিন লড়াইয়ে দুই উজ্জ্বল

পুর পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভের অন্ত নেই সিউড়ি শহরে। সঙ্গে রয়েছে বিদায়ী তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে নানা বেনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ। যা প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছেন খোদ তৃণমূলেরই স্থানীয় বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ। এমনকী, তার জন্য হাইকোর্টে মামলাও ঠুকেছেন। শুক্রবার প্রচারের শেষ বিকালেও বিরোধীদের কাছে সেটাই ছিল প্রধান ইসু।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৫২
Share:

পুর পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভের অন্ত নেই সিউড়ি শহরে। সঙ্গে রয়েছে বিদায়ী তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে নানা বেনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ। যা প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছেন খোদ তৃণমূলেরই স্থানীয় বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ। এমনকী, তার জন্য হাইকোর্টে মামলাও ঠুকেছেন। শুক্রবার প্রচারের শেষ বিকালেও বিরোধীদের কাছে সেটাই ছিল প্রধান ইসু। আর উত্তপ্ত এই ভোটের ময়দানে যাঁরা সেই অভিযোগের মূল নিশানায়, সেই বিদায়ী পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় এবং উপপুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়— সংরক্ষণের জেরে চেনা ওয়ার্ড হাতছাড়া হয়েছে দু’জনেরই। নতুন মাটিতে দাঁড়িয়েও শাসকদল এবং দুই উজ্জ্বলই অবশ্য দাবি করছেন, শেষ হাসি তাঁরাই হাসবেন। বিরোধীদের যদিও মত, লড়াইটা এ বার মোটেই মসৃন নয় দুই উজ্জ্বলের পক্ষেই!

Advertisement

কেন?

বিদায়ী পুরপ্রধান এ বার সিউড়ি ৮ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী হয়েছেন উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়। উজ্বলবাবু গত বার নির্দল হিসাবে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। জয়ী হওয়ার পরে পুরপ্রধান হন। এবং তৃণমূলে যোগ দেন। এর আগেও কংগ্রেসের টিকিটে একাধিক বার জয়ী হয়েছেন তিনি। ফলে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা তাঁর যথেষ্টই। এই প্রথম ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে লড়লেও এলাকাটি তাঁর অপরিচিত নয় বলে দাবি বিদায়ী পুরপ্রধানের। প্রায় তেইশশোরও কিছু বেশি ভোটার রয়েছে এই ওয়ার্ডে। এখানেই নিবেদিতা পল্লি, টিকা পাড়া, চুরি পাড়া, বেনেপুকুর পাড়া, ডাঙাল পাড়া ছাড়াও রয়েছে শহরের প্রশাসনিক ভবন, জেলাপরিষদ, আদালত বাজার পুরসভা ভবন। সবই এই ওয়ার্ডে। শাসকদলের প্রার্থী হওয়ার সুবিধা পাবেন উজ্জ্বলবাবুই। কিন্তু, জেতার পথে সমস্যা মূলত তিনটি। এক, অভিজ্ঞতায় যথেষ্ট পোড়খাওয়া দুই প্রধান প্রতিপক্ষ। সিপিএমের ফিরোজ আলি এবং কংগ্রেসের মাসুদার রহমান। পাশাপাশি রয়েছে বয়সে নবীন বিজেপি প্রার্থী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ও। দুই, তাঁর নেতৃত্বাধীন পুরসভার বিরুদ্ধে এক গাদা দুর্নীতির অভিযোগ এবং পরিষেবা নিয়ে সমান ক্ষোভ। তিন, দলের মধ্যেই কোথাও একটা যেন চোরা বিরোধী হাওয়া। দীর্ঘ দিন ধরে ওই ওয়ার্ড বামেদের দখলে থাকলেও গত বারই তৃণমূলের দখলে আসে। তবে, বাম ভোট রয়েছে। যিনি এ বার সিপিএমের হয়ে প্রার্থী হয়েছেন, সেই মহম্মদ ফিরোজ আলি একাধিক বার জয়ী হয়েছেন। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাম প্রার্থী যথেষ্ট প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেন বলে মত খোদ উজ্জ্বলবাবুরই। অন্য দিকে প্রতিপক্ষে যে কংগ্রস প্রার্থী রয়েছেন, সেই মাসুদার রহমান বিভিন্ন সময় দল বদল করলেও এলাকায় তাঁর স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে। পাশের ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তিনি তিন বার কাউন্সিলর হয়েছেন। তিনি নিজেও জেতার বিষয়ে আশাবাদী। এ দিকে, লোকসভা ভোটের নিরিখে এগিয়ে থাকা বিজেপি-র হয়ে লড়াইয়ের ময়দানে যতীন্দ্রনাথ ওরফে ববি এলাকায় পরিচিত মুখ।

Advertisement

ফলে কংগ্রস, বিজেপি ও সিপিএম— যে কেউ-ই এ বার বেকায়দায় ফেলে দিতে পারেন উজ্বল মুখোপাধ্যায়কে। তবে, এলাকার প্রায় ৮০০ মুসলিম ভোট, কে কার ঝুলিতে ভরতে পারবেন, জেতা-হারা সেটার উপরেই অনেক খানি নির্ভর করছে বলে রাজনীতির কারবারিদের মত।

অন্য দিকে, উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় উতু নামেই সিউড়িতে বেশি পরিচিত। একাধিক বারের কাউন্সিলর তথা উপপুরপ্রধান উজ্জ্বলবাবুর এলাকায় জনসংযোগও ভাল। কিন্তু, শহরের যে ক’টি ওয়ার্ডে এ বার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল, তার মধ্যে অন্যতম এই ১২ নম্বর ওয়ার্ড। যেখানে থেকে শাসকদলের হয়ে প্রার্থী হয়েছেন উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। এমনিতে পুরভবন থেকে ওই ওয়ার্ডের দূরত্ব যথেষ্ট বেশি। সাতাশশোরও বেশি ভোটার থাকা ওই ওয়ার্ডটি মূলত সাড্ডি পাড়া, নুরাইপাড় এবং ছাপতলা নিয়ে গঠিত। পানীয় জল, রাস্তাঘাট, নিকাশি নালা-সহ বিভিন্ন পুরপরিষেবা বিয়ে যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে এলাকায়। এ নিয়ে একাধিক বার পুরসভায় স্মারকলিপি দিয়েছেন ওই ওয়ার্ডের মধ্যে থাকা গ্রাম সদৃশ ছাপতলার মানুষ। যদিও শেষপর্যন্ত পুরভোটের আগে ওই ওয়ার্ডে পানীয়জল পৌঁছনোর ব্যবস্থা হয়েছে। তা ভোটের বাক্সে কতটা প্রভাব ফেলবে, সেটাই এখন দেখার। দ্বিতীয়ত, এই ওয়ার্ডেও বিপক্ষের প্রার্থীরা যথেষ্ট লড়াই দেবেন বলে মত এলাকার মানুষের। গত লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে ধরলে বিজেপি-ই সব চেয়ে এগিয়েছিল। কলেজ রাজনীতি থেকে উছে আসা স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ছেলে দলের প্রার্থী সৈয়দ মুর্শেদ রেজা উজ্জ্বলবাবুকে কঠিন লড়াই দেবেন বলেই কংগ্রেসের দাবি। অন্য দিকে, এলাকায় বামেদের একটা নির্দিষ্ট ভোটব্যাঙ্ক রয়েইছে। তার জোরে দলীয় প্রার্থী চঞ্চল মাহারা চমক দেবেন বলে আশায় বামেরা। আর বিজেপি প্রার্থী অপূর্ব দাস যদি লোকসভা ভোটের ফল ধরে রাখতে পারেন, ডানপন্থীদের ভোট ভাগাভাগির জেরে শাসকদলকে য়থেষ্টই ভুগতে হতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। সঙ্গে রয়েছে দুর্নীতির নালিশ। আশঙ্কা রয়েছে দলেরই একাংশের অন্তর্ঘাতেরও।

সব মিলিয়ে এ বার কঠিন লড়াইয়ে সিউড়ির দুই উজ্জ্বল। তবে, সমস্ত জল্পনাকেই এক কথায় উড়িয়ে দিচ্ছেন বিদায়ী পুরবোর্ডের দুই সহকর্মী। ভোটের আগে তাঁদের দাবি, ‘‘বাসিন্দাদের উপরে ভরসা আছে। তাঁরা জানেন আমরা কেমন কাজ করেছি। জয়ের ব্যাপারে আমরা একশো ভাগ নিশ্চিত!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement