ছাত্র সংসদ নির্বাচন ধরে প্রস্তুতি

পুজো মিটতেই জনসংযোগে নেমে কলেজগুলিতে টিএমসিপি-র সদস্যেরা দলবেঁধে পড়ুয়াদের চকলেট, লাড্ডু বিলি করে বিজয়া, দীপাবলী ও ছটের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০১:০৭
Share:

হাতে-হাতে: কাশীপুর মাইকেল মধুসূদন কলেজে পড়ুয়াদের লাড্ডু খাইয়ে একটি ছাত্রসংগঠনের জনসংযোগ। নিজস্ব চিত্র

তিন বছর ধরে ছাত্র সংসদের নির্বাচন বন্ধ। তবে রাজ্য সরকার এ বার ছাত্র সংসদের নির্বাচন করাতে আগ্রহ প্রকাশ করায় সংগঠন গোছাতে তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে পুরুলিয়া জেলার ছাত্র সংগঠনগুলির মধ্যে।

Advertisement

পুজো মিটতেই জনসংযোগে নেমে কলেজগুলিতে টিএমসিপি-র সদস্যেরা দলবেঁধে পড়ুয়াদের চকলেট, লাড্ডু বিলি করে বিজয়া, দীপাবলী ও ছটের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। সমস্ত কলেজেই সংগঠনের ইউনিট নতুন করে গঠন করা হয়েছে। নতুন ইউনিটের সদস্যেরা অধ্যক্ষের কাছে সমস্যার কথা তুলে ধরবেন বলে পড়ুয়াদের কাছে গিয়ে তাঁদের অভাব-অভিযোগ শুনছেন।

যদিও অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি) জনসংযোগে আগেই নেমেছে বলে দাবি করছেন নেতৃত্ব। ইতিমধ্যে বেশ কিছু কর্মসূচি তারাও নিয়েছে। পিছিয়ে নেই বলে দাবি করছে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই এবং এসইউসি-র ডিএসও। দুই বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের দাবি, ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে লক্ষ্য করে তারা আলাদা করে কোনও প্রস্তুতি নিচ্ছে না। বছরভর তারা পড়ুয়াদের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করে আসছে।

Advertisement

পুরুলিয়া জেলার ২১টি কলেজে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়। এক সময়ে এই জেলার অধিকাংশ কলেজের দখল থাকত এসএফআই-এর। রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গেই ছাত্র সংসদেও প্রভাব বাড়ায় টিএমসিপি। বছর তিনেক আগে অবশ্য ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সময়েই দেখা গিয়েছে পুরুলিয়ায় মূল বিরোধী হিসেবে উঠে এসেছিল আরএসএস প্রভাবিত ছাত্র সংগঠন এবিভিপি। দু’টি কলেজের ছাত্র সংসদ দখল করে তারা। অন্য কয়েকটি কলেজেও কয়েকটি আসনও দখলে আসে তাদের।

তারপরে আর ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়নি। বস্তুত সে কারণে ঢিলেঢালা হয়ে পড়েছিল শাসকদলের ছাত্র সংগঠনেরও। এরই মধ্যে পুরুলিয়া জেলায় রাজনৈতিক সমীকরণের বড়সড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছে পঞ্চায়েত ভোট ও লোকসভা ভোটে। দু’টিতেই কার্যত শূন্য থেকে বিজেপির বড় উত্থান দেখা গিয়েছে। বিজেপির দাবি, লোকসভা ভোটে পুরুলিয়া কেন্দ্রের পঞ্চাশ হাজারের বেশি নতুন ভোটারের বড় অংশের সমর্থন পেয়েছিল তারা। এই পরিস্থিতিতে কলেজগুলিতে সংগঠন পোক্ত করে নতুন ভোটার তথা কলেজ পড়ুয়াদের সমর্থন তাদের দিকে ফিরিয়ে আনুক টিএমসিপি, এমনটাই চাইছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বও।

ইতিপূর্বেই টিএমসিপি-র পুরুলিয়ার জেলা সভাপতি বদল করা হয়েছে। নতুন সভাপতি কিরীটী আচার্যের নেতৃত্বে কলেজে কলেজে শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যমে জনসংযোগ শুরু হয়েছে। তা কটাক্ষ করে এবিভিপির জেলা প্রমুখ রুহিদাস মাহাতো বলছেন, ‘‘বিজয়ার শুভেচ্ছা না জানিয়ে টিএমসিপি বরং কলেজগুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করার দাবিতে আন্দোলন করুক।” তবে কিরীটীর দাবি, ‘‘শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আমাদের রাজ্য নেতৃত্ব সমস্ত কলেজেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন করার দাবি জানিয়েছেন। পুরুলিয়ার সমস্ত কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে ধরে নিয়ে সংগঠন গোছানোরও কাজ শুরু হয়েছে।”

সেই প্রেক্ষিতে সাঁওতালডিহি কলেজে দীর্ঘদিন পরে সংগঠন গড়ে তুলেছে টিএমসিপি। পুঞ্চার রামানন্দ সেন্টিনারি কলেজের টিএমসিপির ইউনিট সভাপতি ইন্দ্রনীল চক্রবর্তী, সাঁওতালডিহি কলেজের টিএমসিপির ইউনিট সভাপতি সুমিত মণ্ডল বলছেন, ‘‘কলেজ পড়ুয়ারা বিভিন্ন সমস্যার কথা আমাদের জানাতেন। কিন্তু সংগঠনগত ভাবে সে সব নিয়ে নড়াচড়া করা হচ্ছিল না। এখন সেই কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে।’’ টিএমসিপির জেলা সভাপতির দাবি, ‘‘পড়ুয়াদের ভালই সমর্থন পাচ্ছি আমরা।”

তবে এই দাবি নিয়ে তাঁরাও লাগাতার আন্দোলন করছেন বলে জানচ্ছেন এবিভিপির জেলা প্রমুখ। তাঁর দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়-সহ জেলার সমস্ত কলেজে তাঁদের ইউনিট গঠন সম্পূর্ণ। সম্প্রতি তাঁরা সমস্ত কলেজের অধ্যক্ষদের ‌কাছে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করানোর দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘নতুন প্রজন্ম টিএমসিপির থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। তাতে জনসংযোগে অনেক বেশি সাড়া পাচ্ছি আমরা।’’

জেলার একমাত্র মহিলা কলেজে দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্রী সংসদ দখলে রেখেছিল ডিএসও। তাদের দাবি, নিস্তারিণী কলেজে তারা ছাত্রীদের সমস্যা নিয়ে লাগাতার আন্দোলন করছেন। সংগঠনের জেলা সম্পাদক বিকাশরঞ্জন কুমার বলেন, ‘‘আমাদের সদস্যেরা সারা বছর জুড়েই কলেজের পড়ুয়াদের সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করেন। তাই আলাদা করে সংগঠন গোছানো বা লোক দেখানো জনসংযোগের প্রয়োজন নেই।’’ একই দাবি করেছেন এসএফআই-এর জেলা সম্পাদক দীপঙ্কর মাঝিও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement