বড়জোড়ায় অলক মুখোপাধ্যায়ের অফিসে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
নিজের ঘনিষ্ঠ লোকজনকে দলে পদ দিতে শাখা সংগঠনগুলির ব্লক কমিটিতে হস্তক্ষেপ করছেন খোদ জেলা সভাপতি! বুধবার এমনই অভিযোগ তুলে তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা বড়জোড়ার বিধায়ক অলক মুখোপাধ্যায়ের অফিসে বিক্ষোভ দেখালেন কয়েকশো তৃণমূল কর্মী। বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ, জেলা সভাপতি বাড়িতে থাকলেও কর্মীদের এড়িয়ে কথা না বলেই চলে যান। পরে ফোনে তিনি বিকেলে আলোচনায় বসার আশ্বাস দেন কর্মীদের। সভাপতির আশ্বাসে বিক্ষোভ থামে। পরে বিক্ষোভকারীরা প্রকৃতই তৃণমূল কর্মী কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অলক।
পঞ্চায়েত ভোটের মুখে বড়জোড়ার এই ঘটনায় অস্বস্তি দানা বেঁধেছে তৃণমূলের অন্দরে। জেলার শিল্পাঞ্চলে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে যে রাশ পড়েনি, এই ঘটনাই তার প্রমাণ বলে দাবি করছে জেলার রাজনৈতিক মহলের একাংশ। জেলা রাজনীতিতে অলকের ‘বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর’ নেতা বলে পরিচিত বাঁকুড়া জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তথা দলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতি সুখেন বিদ দাবি করেন, “স্বেচ্ছাচারীর মতো দল চালাচ্ছেন জেলা সভাপতি। নিজের লোকজনকে পদ দেওয়ার জন্য দলের মধ্যেই বিভেদ সৃষ্টি করছেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে এলাকায় যাঁরা শুভেন্দু অনুগামী (রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী) হিসেবে কাজ করেছিলেন, তাঁদের স্বার্থে প্রকৃত তৃণমূল কর্মীদের বঞ্চিত করছেন। এ সবের জন্যই ক্ষুব্ধ দলীয় কর্মীরা এ দিন বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।” অলক অবশ্য সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেছেন। সুখেনের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে অলক বলেন, “সুখেনকে আমিই জেলায় সহ-সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছি। তারপরেও কেন আমার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারের অভিযোগ তোলা হচ্ছে জানি না।”
এ দিনের বিক্ষোভে তৃণমূল পরিচালিত বড়জোড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কাজল পোড়েল-সহ পঞ্চায়েত সমিতির বহু কর্মাধ্যক্ষ ও দলের বিভিন্ন শাখা সংগঠনের ব্লকের সভাপতিদেরও দেখা গিয়েছে। কাজলের অভিযোগ, “দলের ঘোষণা করা ব্লক ও অঞ্চল কমিটিকে অস্বীকার করে আলাদা ভাবে কিছু লোকজনকে নানা দায়িত্ব দিচ্ছেন জেলা সভাপতি। এতে দলের অফিসিয়াল দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা সমস্যায় পড়ছেন। একটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। সমান্তরাল ভাবে একটি পৃথক সংগঠন গড়ার চেষ্টা করছেন উনি। সমস্ত স্তরের কর্মীরাই এতে ক্ষুব্ধ।”
তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির বড়জোড়া ব্লক কমিটি সম্প্রতি ঘোষণা করা হয়। তারপরেই ওই সংগঠনের জেলা কমিটির সদস্য বড়জোড়ার এক নেতা ফেসবুকে পৃথক ব্লক কমিটির ঘোষণা করেন। ওই ঘটনার পিছনেও দলের জেলা সভাপতি অলকের ইন্ধন রয়েছে বলে এ দিন বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ তোলেন। বড়জোড়ার ব্লক মহিলা তৃণমূলের সভাপতি সবিতা দাস, বড়জোড়া ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি অভিজিৎ শীট বলেন, “আমরা ব্লক কমিটির সদস্য তালিকা গড়ে সংগঠনের জেলা নেতৃত্বকে দিয়েছি। কিন্তু তৃণমূলের জেলা সভাপতি নিজের ইচ্ছে মতো অন্য একটি তালিকা তৈরি করে জেলা নেতৃত্বকে পাঠিয়েছেন। তিনি আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই আমাদের সংগঠনের ব্লক কমিটিতে হস্তক্ষেপ করছেন।”
অলক বলেন, “শাখা সংগঠনগুলির কমিটি গড়ার ক্ষেত্রেও জেলা সভাপতির মতামত নেওয়ার দরকার রয়েছে। দলের সংগঠনের স্বার্থেই আমাকে এ সবের উপরে নজর রাখতে হচ্ছে। আমি অনধিকার ক্ষমতা কোথাও প্রয়োগ করছি না। আমার বিরুদ্ধে এ সব মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।”
এ দিন সন্ধ্যায় অলক দফতরে এসে বিক্ষুব্ধ কর্মীদের সঙ্গে কথা বলার পরেই ‘ফেসবুক লাইভ’ করে দলকে বার্তা দেন। নাম না করে স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে দলবিরোধী কাজের অভিযোগ তোলেন তিনি। অলক বলেন, “আজ জনা কুড়ি ছেলে যারা এখানে এসে বিধায়ক বা দলের সভাপতিকে অপমান করে গেলেন, তাঁরা কি সত্যিই তৃণমূল করেন, না বিজেপিকে ইন্ধন দেয়, সেটা আমি বুঝতে পারছি না। বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস আমাদের রাজনৈতিক শত্রু। ওদের বিরুদ্ধে আমাদের একজোট হয়ে লড়তে হবে।”
তবে তাঁর সঙ্গে আলোচনা শেষে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে বড়জোড়া ব্লক তৃণমূলের সহ-সভাপতি তথা বড়জোড়া পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ আমজাদ মণ্ডলের আক্ষেপ, “জেলা সভাপতির কাছে যে সমস্যাগুলি তুলে ধরা হয়েছিল, তার কোনওটিরই সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।” অলক অবশ্য বলেন, “কর্মীদের সমস্যার কথা আমি শুনেছি।’’