TMC

বোর্ড গঠন নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল, বাঁকুড়ায় দলীয় কার্যালয়ে তালা দিলেন আট জয়ী প্রার্থী

পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন হলে দেখা যায়, উপপ্রধান পদে নির্বাচিত হয়েছেন তৃণমূলের তাইবুল হক। এর পর তৃণমূলের টিকিটে জেতা পঞ্চায়েত সদস্যদের একাংশের ক্ষোভ ছড়ায়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৩ ১৮:৫৭
Share:

দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষুব্ধরা। —নিজস্ব চিত্র।

পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে উপপ্রধানের মনোনয়ন— সবক্ষেত্রেই তৃণমূলের ব্লক এবং অঞ্চল নেতৃত্বের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে তৃণমূলের অঞ্চল কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিলেন পঞ্চায়েতে ভোটে জয়ী হওয়া আট সদস্য। এমনকি, দলত্যাগেরও হুঁশিয়ারি দিলেন তাঁরা। এই ঘটনায় অস্বস্তিতে তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা নেতৃত্ব ।

Advertisement

নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে বাঁকুড়া-১ ব্লকের আধারথোল গ্রাম পঞ্চায়েত ছিল ত্রিশঙ্কু। ওই পঞ্চায়েতের ২০টি আসনের মধ্যে ১০টিতে বিজয়ী হয় তৃণমূল। ৬টি আসন পায় বিজেপি। নির্দল এবং সিপিএম ২টি করে আসনে জয়ী হয়। ফলাফল ঘোষণার পরই এক নির্দল প্রার্থী তৃণমূলে যোগ দেন। ফলে তৃণমূল ওই পঞ্চায়েতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু তার পরও বোর্ড গঠনে জট কাটেনি। বস্তুত, পঞ্চায়েত প্রধানের আসনটি তফশিল উপজাতি সংরক্ষিত। তৃণমূলের কোনও তফসিল উপজাতিভুক্ত জয়ী প্রার্থী না থাকায় সংরক্ষণের গেরোয় তা চলে যায় বিজেপির হাতে। এর পর উপপ্রধান পদ নিয়ে শুরু হয় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।

শুক্রবার পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন হলে দেখা যায়, উপপ্রধান পদে নির্বাচিত হয়েছেন তৃণমূলের তাইবুল হক। এর পরই শনিবার তৃণমূলের টিকিটে জেতা পঞ্চায়েত সদস্যদের একাংশের ক্ষোভ আছড়ে পড়ে। শনিবার দুপুরে তৃণমূলের স্থানীয় অঞ্চল কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন জয়ী প্রার্থীরা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন সমর্থকেরা।

Advertisement

তৃণমূলের টিকিটে জেতা পঞ্চায়েত সদস্য প্রশান্ত মই বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে উপপ্রধান নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের দলের অঞ্চল সভাপতি এবং ব্লক সভাপতি স্বেচ্ছাচারিতা করেছেন। এর বিরুদ্ধেই আমাদের এই আন্দোলন। আমাদের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা না করে প্রার্থী বাছাই হয়েছে। উপপ্রধান নির্বাচন করে দলবিরোধী কাজ করেছেন ব্লক সভাপতি এবং অঞ্চল সভাপতি। আমরা সেই ক্ষোভেই দল ছাড়ার কথা জানিয়েছি নেতৃত্বকে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘দল যদি পদক্ষেপ না করে আমরা সকলে দল ছেড়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ব।’’ তৃণমূলের টিকিটে নির্বাচিত আর এক সদস্য প্রদীপ কুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘অঞ্চল কমিটির সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা না করে সমস্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে দল। বিজেপি এবং সিপিএমের সহায়তা নিয়ে আমাদের দলের তাইবুল হক উপপ্রধান পদে বসেছেন। এই স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধেই আমাদের ক্ষোভ।’’

তৃণমূলের বাঁকুড়া-১ ব্লকের সভাপতি অংশুমান বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য দলীয় নেতৃত্বের স্বেচ্ছাচারিতার কথা মানেননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘গ্রাম পঞ্চায়েতের ৮ সদস্য দলত্যাগ করেছেন। এমন কোনও খবর আমার কাছে নেই। আমরা দলগতভাবে আধারথোল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হিসাবে যাঁর নাম পাঠিয়েছিলাম, তিনি উপপ্রধান হননি। তাইবুল হক বিজেপি এবং সিপিএমের সমর্থন নিয়ে উপপ্রধান হয়েছেন। তিনি দলীয় নির্দেশ অমান্য করেছেন। দল এ ব্যাপারে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করবে।’’

অন্য দিকে, বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য বিকাশ ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘সবে খেলা শুরু হয়েছে। বোর্ড গঠনের পর তৃণমূলের এই পঞ্চায়েতগুলো কতদিন চলে সেটাই দেখার। প্রতিটি পঞ্চায়েতেই তৃণমূল তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement