Mathpalsa Panchayat Head

‘শ্যাম ও কুল’ দুই রক্ষার নীতি, তবুও উত্তেজনা মাঠপলশায়

তৃণমূলেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য থেকে মাঠপলশা পঞ্চায়েতের প্রধান হিসেবে ব্লক সভাপতি সাবের আলি খানের অনুগামী জহিরা বিবির নামে আসে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

  সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৫৫
Share:

মাঠপলশা পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

প্রধান নির্বাচন নিয়ে জট কাটাতে শেষ পর্যন্ত সাঁইথিয়ার মাঠপলশা এবং বনগ্রাম পঞ্চায়েতে ‘শ্যাম ও কুল’ দুই রাখার নীতি নিল তৃণমূল। তার পরেও এড়ানো গেল না উত্তেজনা। মঙ্গলবার মাঠপলশার অঞ্চল সভাপতি পদ থেকে আসাদুর জামান ওরফে আতিককে সরিয়ে দিয়ে শেখ জহিরউদ্দিন বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে আপত্তি জানালেন বর্তমান সভাপতি আসাদুর জামান ওরফে আতিক। তিনি এই সিদ্ধান্ত মানবেন কি না তাও নিশ্চিত নয়। যা নিয়ে বিরোধীরা কটাক্ষও করেছে। যদিও সমস্যা মিটে গিয়েছে বলে তৃণমূলের দাবি। যদিও বনগ্রাম নিয়ে তেমন কোনও সমস্যা হয়নি।

Advertisement

প্রসঙ্গত, প্রধান নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ওই দু’টি পঞ্চায়েতে শাসক দলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ বেআব্রু হয়ে পড়ে। যা নিয়ে জেলা নেতৃত্বকে চরম অস্বস্তির মুখে পড়তে হয়।

তৃণমূলেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য থেকে মাঠপলশা পঞ্চায়েতের প্রধান হিসেবে ব্লক সভাপতি সাবের আলি খানের অনুগামী জহিরা বিবির নামে আসে। সেই প্রস্তাব অমান্য করে আতিক তাঁর ভাইপোর স্ত্রী সান্ত্বনা খাতুনকে প্রধান করার দাবি তোলেন। তা নিয়ে দু’পক্ষের হাতাহাতি পর্যন্ত হয় বলে অভিযোগ। ভোটাভুটিতে অবশ্য সান্ত্বনাই প্রধান নির্বাচিত হন। কিন্তু অশান্তির আশঙ্কায় তিনি এত দিন পঞ্চায়েত মুখো হতে পারেননি। এমনকি ওই পঞ্চায়েতে উপসমিতি পর্যন্ত গঠন করতে পারেনি প্রশাসন। এর ফলে, উন্নয়নমূলক কাজ থমকে যায়।

Advertisement

একই ঘটনা ঘটে বনগ্রামেও। ওই পঞ্চায়েতে রাজ্য নেতৃত্বের পাঠানো তালিকা অনুসারে অঞ্চল সভাপতি অরবিন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী হিসেবে পরিচিত গৌর সাহার নাম প্রস্তাব করা হয়।

কিন্তু সেই প্রস্তাব অমান্য করে ব্লক কার্যকরী সভাপতি তথা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তুষারকান্তি মণ্ডলের পচ্ছন্দের প্রার্থী হাঁসু বাগদিকে ভোটাভুটিতে প্রধান করা হয়। কিন্তু উপসমিতি গঠন থমকে যায়। ফলে, এলাকার বাসিন্দাদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। বিরোধীরা বিরূপ সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন।

মুখরক্ষা করতে সোমবার উভয়পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা কোর কমিটির অন্যতম সদস্য তথা লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রশান্ত সাধু, ব্লক সভাপতি সাবের আলি খান প্রমুখ। দলীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, সমাধান সূত্র খুঁজতে ‘শ্যাম-কূল’ দুই রক্ষার নীতি নেওয়া হয়েছে। যাঁরা প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন তাঁরাই আড়াই বছর কাজ চালাবেন। বাকি আড়াই বছর রাজ্য থেকে যাঁদের নাম এসেছিল তাঁরা প্রধান পদে বসবেন।

আতিককে অঞ্চল সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে জহিরা বিবির স্বামী শেখ জহিরউদ্দিন ওরফে কাজলকে বসানো হবে। তবে অঞ্চল কমিটিতে আতিককে রাখা হবে। অন্য দিকে, বনগ্রামে চারটি উপসমিতির মধ্যে তিনটিতে অঞ্চল সভাপতির অনুগামীদের সঞ্চালক করা হবে। একটিতে তুষার মনোনীত সদস্য সঞ্চালক হবেন।

যদিও এ দিন ব্লক সভাপতি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মাঠপলশার প্রধানকে নিয়ে পঞ্চায়েতে ঢুকতে গেলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আগে অঞ্চল সভাপতি হিসেবে জহিরুদ্দিনের নাম ঘোষণার দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন তাঁর অনুগামীরা। ব্লক সভাপতি জহিরুদ্দিনকে লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত দায়িত্ব দেওয়া হল বলতেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

শেষ পর্যন্ত জহিরুদ্দিনকে পূর্ণাঙ্গ সময়ের সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি, বিডিও সুজনকুমার পাণ্ডের উপস্থিতিতে সান্ত্বনা খাতুনকে প্রধান হিসেবে চার্জ বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

জহিরউদ্দিন বলেন, ‘‘আপাতত স্ত্রীকে প্রধান করা যাচ্ছে না বলে আমাকে অঞ্চল সভাপতি করা হয়েছে।’’ সাবের বলেন, ‘‘দল বিরোধী কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগে আতিককে অঞ্চল সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে জহিরউদ্দিনকে বসানো হল।’’ যদিও আতিক বলেন, ‘‘আমি কোনও দল বিরোধী কাজ করিনি। দল যা ভাল বুঝেছে করেছে। তবে ভুল পদক্ষেপ নেওয়া হল। ওই সিদ্ধান্ত আমি মানব কি মানব না তা এখনই বলব না।’’

অভিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘অঞ্চল সভাপতির নাম ঘোষণা নিয়ে একটা গণ্ডগোল হয়েছিল। ব্লক সভাপতি এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির মধ্যস্থতায় তা মিটে গিয়েছে।’’ বিডিও বলেন, ‘‘প্রধান হিসেবে সান্ত্বনা খাতুনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হল। শীঘ্রই উপসমিতি গঠন করা হবে।’’

অন্য দিকে, তুষার বলেন, ‘‘কাল একটা বৈঠক হয়েছে শুনেছি। তবে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে বলতে পারব না। দল যা সিদ্ধান্ত নেবে মেনে নেব।’’ স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির বোলপুর জেলার কোষাধ্যক্ষ উদয়শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষকে তৃণমূলের গোষ্ঠীবিবাদের মাসুল দিতে হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement