পুরুলিয়ার রবীন্দ্রভবনে সভা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র।
দেশের কৃষক আন্দোলনে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও ভূমিকা ছিল না বলে যারা প্রচার করছেন, তারা ভুল বলছেন— বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ায় একটি অনুষ্ঠানে দাবি করলেন তৃণমূলের কিসান-খেতমজুর সংগঠনের রাজ্য সভাপতি পূর্ণেন্দু বসু।
এ দিন পুরুলিয়া রবীন্দ্রভবনে ওই সংগঠনের জেলা শাখা ‘কৃষি সভ্যতার বিজয় দিবস’ উদযাপনের আয়োজন করে। সেখানে মূল বক্তা ছিলেন পূর্ণেন্দুবাবু। তিনি দাবি করেন, কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের আন্দোলন ছিল অরাজনৈতিক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাননি কোনও দলের পতাকা নিয়ে এই আন্দোলনে যেতে। কিন্তু আন্দোলন শুরুর পরে, তিনি সাংসদদের একটি প্রতিনিধি দলকে পাঠিয়েছিলেন। এই আন্দোলনে তৃণমূলের নিঃশর্ত সমর্থন রয়েছে, তা জনপ্রতিনিধিরা গিয়ে ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজে কৃষক নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তিনি তাঁদের জানিয়েছিলেন, কৃষক আন্দোলন থেকেই তিনি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গই একমাত্র রাজ্য, যেখানে বিধানসভায় এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। তাই যাঁরা বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই আন্দোলনে কোনও ভূমিকা ছিল না, তাঁরা ঠিক বলছেন না।’’
এ দিনের সভায় ছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া, তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু, দলের নেতা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, গুরুপদ টুডুরা। সংগঠনের জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ মাহাতো জানান, শীঘ্রই কৃষকদের নিয়ে জেলায় মহামিছিল করবেন তাঁরা। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক শান্তিরাম মাহাতোর দাবি, ‘‘নতুন প্রজন্ম কৃষিতে উৎসাহ হারাচ্ছে। কৃষক ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। কৃষক-স্বার্থে যাতে কেন্দ্রীয় সরকার কাজ করতে বাধ্য হয়, সে আওয়াজ তুলতে হবে।’’
তবে তৃণমূলের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে, পুরুলিয়ার মতো রুক্ষ এলাকাও কৃষিতে কতটা এগিয়েছে, সে সাফল্যের কথা সভায় কৃষকদের কাছে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলে ভাল হত বলে মনে করছেন জেলা পরিষদের কো-মেন্টর জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘তাতে জেলার কৃষকেরা আরও উদ্বুদ্ধ হয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। দুর্ভাগ্যের বিষয়, সেটা হয়নি।’’ সভায় ছিলেন বিধায়ক সুশান্ত মাহাতো, পুরুলিয়া পুরসভার প্রশাসক নবেন্দু মাহালি, দলের জেলা চেয়ারম্যান হংসেশ্বর মাহাতো প্রমুখও।
পূর্ণেন্দুবাবুর মন্তব্য প্রসঙ্গে সিপিএমের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়ের পাল্টা দাবি, ‘‘তৃণমূল নেতারাই এ ধরনের ভণ্ডামি করতে পারেন। কৃষি আইনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এ রাজ্যে গ্রেফতার হতে হয়েছে। তাই ওঁদের মুখে এ কথা মানায় না।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃষক আন্দোলনে ভূমিকা নেই, এ কথা একেবারেই সত্যি। কৃষির উন্নয়নে রাজ্য সরকারেরই বা কী ভূমিকা? মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের কিসান সম্মান নিধিও আটকে রেখেছিলেন।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেনবাবুর পাল্টা দাবি, ‘‘শুধু পুরুলিয়া জেলা কৃষিক্ষেত্রে কতটা এগিয়েছে, তা বিজেপি খোঁজ নিয়ে দেখুক।’’