—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কোথাও অভিযোগ উঠেছে স্ত্রী জনপ্রতিনিধি হলেও তাঁর হয়ে সমস্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন স্বামী। আবার কোথাও পদাধিকারী জনপ্রতিনিধিকে ‘কাঠপুতুল’ করে টেন্ডার প্রক্রিয়া-সহ নানা কাজে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে। তৃণমুল পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ মাঝে মধ্যেও তোলেন বিরোধীরা। কখনও সখনও দলের একাংশকেও এ নিয়ে সরব হতে দেখা গিয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে জনমানসে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা নিয়ে যাতে কোনও রকম বিরূপ মনোভাব তৈরি না হয়, তাই জেলা নেতৃত্বকে ডেকে সতর্ক করলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
তৃণমূল সূত্রে খবর, বুধবার কলকাতায় তৃণমূল ভবনে বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ও চেয়ারম্যানকে ডেকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। দল কিছু সুনির্দিষ্ট নির্দেশও দিয়েছে জেলা নেতৃত্বকে। জেলায় ফিরে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের দলের জনপ্রতিনিধিদের সেই নির্দেশ জানাতে বলা হয়েছে। বৈঠকে তৃণমূল বিধায়কদেরও থাকতে বলা হয়েছে।
দলের তরফে ঠিক কী নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি তৃণমূল নেতারা। তবে সূত্রের দাবি, জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত তিনটি স্তরেই নানা অনিয়ম ও গোষ্ঠীবাজির অভিযোগ রাজ্য নেতৃত্বের নজরে এসেছে। বাঁকুড়া জেলা পরিষদের টেন্ডার কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করেও দলের অন্দর থেকে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন।
যদিও বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি তৃণমূলের অনুসূয়া রায়ের দাবি, “জেলা পরিষদে কোনও বেনিয়মের অভিযোগ ওঠেনি। এ সব ভিত্তিহীন কথাবার্তা।”
বাঁকুড়া ২ ব্লকের কয়েকটি পঞ্চায়েতে প্রধানের বিরুদ্ধে নিজের লোককে চুক্তিভিত্তিক কর্মী হিসেবে নিয়োগ করা ও নিযুক্ত হওয়া সেই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরাসরি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করার অভিযোগও উঠেছে। যদিও তৃণমূলের বাঁকুড়া ২ ব্লক সভাপতি বিধান সিংহ দাবি করেন, “এই ধরনের কোনও সমস্যা থাকলে দলের অভ্যন্তরে জানাব। প্রকাশ্যে কিছু বলব না।”
জেলার কয়েকটি পঞ্চায়েত সমিতিতে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের অভিযোগও উঠেছে। কিছু ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে সূত্রের দাবি।
তৃণমূল সূত্রে খবর, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখা, দলীয় নেতৃত্ব যাতে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ না করে তা নিশ্চিত করা, কাজের ক্ষেত্রে প্রধান-উপপ্রধানদের স্বাধীন ভাবে কাজ করা, এলাকার উন্নয়নের জন্য গৃহীত প্রকল্প দ্রুত সঠিক ভাবে রূপায়ণে জোর দেওয়ার মতো নানা নির্দেশ রাজ্য নেতৃত্বের তরফে দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যের এক তৃণমূল নেতার কথায়, “পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদগুলির বিরুদ্ধে যাতে কোনও ভাবেই দুর্নীতির অভিযোগ না ওঠে, দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট চালানোর অভিযোগ না ওঠে, নেতৃত্ব যাতে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের কাজে হস্তক্ষেপ না করে লোকসভা নির্বাচনের আগে এ নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।”
সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতির কটাক্ষ, “ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা সাধারণ গ্রামীন মানুষের সুবিধার্থে গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু তৃণমূল নেতারা এই প্রতিষ্ঠানকে করে খাওয়ার জায়গা বানিয়ে ফেলেছে।’’ বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডলের দাবি, “পঞ্চায়েত পেয়েই দুর্নীতি শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। লোকসভা নির্বাচনের আগে ওরা মানুষের কাছে ভাবমূর্তি ভাল করার শত চেষ্টা করলেও লাভ হবে না।’’ বড়জোড়ার বিধায়ক তথা তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা চেয়ারম্যান অলক মুখোপাধ্যায় বলেন, “কোথাও কোনও দুর্নীতি নেই। সাংগঠনিক ভাবে জেলায় জমি হারিয়ে ফেলে বিজেপি-সিপিএম এখন ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে।”