মারমুখী: তৃণমূল নেতার কলার ধরে গ্রামবাসী। সাঁইথিয়ায়। নিজস্ব চিত্র
‘কাটমানি’ ফেরত চেয়ে জেলায় বিক্ষোভ-ঘেরাও চলছেই। তা ঘিরে আইনশৃঙ্খলার অবনতিও হচ্ছে মাঝেমধ্যে। এ সবের মধ্যেই পুলিশ-প্রশাসনের উদ্বেগ বাড়িয়ে তৃণমূলের দুই নেতাকে ‘কাটমানি’ নেওয়ার অভিযোগে মারধর ও হেনস্থারও অভিযোগ উঠল।
সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে সাঁইথিয়া ব্লকের বনগ্রাম পঞ্চায়েতের ভালদা গ্রামে। স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে এলাকার দুই তৃণমূল নেতার বাড়িতে টাকা ফেরতের দাবি জানাতে যান গ্রামবাসীদের একাংশ। ওই দু’জনের এক জন তৃণমূলের প্রাক্তন বুথ সভাপতি। অন্য জন প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য। গ্রামবাসীর অভিযোগ, কোনও কথা বলতে চাননি ওই দু’জন। বলে দেন, কোনও টাকা তাঁরা নেননি। তাই ফেরত দেওয়ার প্রশ্নও নেই। এর পরেই উত্তেজিত হয়ে পড়ে জনতা। অভিযোগ, তাঁদের উপরে চড়াও হন বিক্ষোভকারীরা। কলার ধরে ধাক্কাধাক্কি করা হয়। চড়-থাপ্পড়ও পড়ে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের সঙ্গেও গ্রামবাসীর তর্কাতর্কি শুরু হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা বাবুরাম হেমব্রম ও সুনীল সোরেনের দাবি, ‘‘আমাদের কাছে বাড়ির তৈরির অনুদান থেকে ৫-১০ হাজার টাকা করে নিয়েছিলেন ওই বুথ সভাপতি। এখন সবাই টাকা ফেরত দিচ্ছে। তাই আমরাও টাকা চাইতে এসেছিলাম। কিন্তু উনি টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করায় ঝামেলা বাধে।’’ শেষ পর্যন্ত ১৫ দিনের মধ্যে টাকা ফেরত দেবেন, এই মর্মে মুচলেকা দিতে হয় ওই দু’জনকে। তার পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ওই দুই নেতার বিরুদ্ধেই ১০০ দিনের কাজ থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা এবং অন্যান্য সরকারি প্রকল্পের টাকা নয়ছয় অভিযোগ তুলেছেন গ্রামবাসীরা। তাঁরা অবশ্য মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ওই দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে ছিল, তা মেনেছেন সাঁইথিয়া ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সাবের আলী খান। তিনি বলেন, ‘‘দলে থাকাকালীন বেশ কিছু দুর্নীতিমূলক কাজকর্ম করেছিলেন ওই দু’জন। জানতে পেরে ওঁদের আমরা দল থেকে সরিয়ে দিয়েছিলাম। পরে শুনি, এলাকার মানুষের কাছে টাকা তুলে লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির প্রচারের জন্য সেই টাকা খরচ করে।’’ তাঁর দাবি, সেই কারণেই মানুষ তাঁদের প্রতি ক্ষিপ্ত ছিলেন। এখন তাঁদের প্রাপ্য টাকা ফেরতের জন্য দাবি করছেন।
এই অভিযোগ মানেননি বিজেপি-র মণ্ডল সভাপতি ভবানীশঙ্কর পাল। তাঁর দাবি, ‘‘ওরা কেউ আমাদের দলের কর্মী নন। তৃণমূল থেকে দুর্নীতি করে এখন পিঠ বাঁচাতে কেউ যদি বিজেপি-র মিছিলে হাঁটেন, তাহলেই তিনি বিজেপি কর্মী হয়ে যান না! দল তাঁদের কোনও দিন মেনেও নেবে না।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘এটা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। নিজেদের ভাগ-বাঁটোয়ারা ঠিক হয়নি বলেই এই ধরনের ঝামেলা দেখা দিচ্ছে। নিজেদের দোষ ঢাকতে এখন বিজেপির ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে।’’
‘কাটমানি’ নিয়ে ঘেরাও-বিক্ষোভ প্রথম শুরু হয়েছিল ইলামবাজারে। সেখানে আবার অভিযোগ উঠেছে, টাকা ফেরত দেওয়ার সময় দিয়েও গা ঢাকা দিয়েছেন তৃণমূলের বুথ সভাপতি। ঘটনাটি ঘুড়িষা পঞ্চায়েতের গঙ্গাপুর গ্রামের। এর প্রতিবাদে ওই নেতার বাড়ির সামনে তিন ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রামের বাসিন্দারা।
একশো দিনের কাজের টাকা ফেরতের দাবিতে দিন কয়েক আগেই গঙ্গাপুরে তৃণমূলের বুথ সভাপতির বাড়িতে বিক্ষোভ দেখান গ্রামের শ্রমিকেরা। সে সময় তিনি টাকা ফেরতের আশ্বাস দেওয়ায় শ্রমিকেরা ফিরে যান। সোমবার ছিল টাকা ফেরতের সময়সীমা। সেই মতো এ দিন শ’দেড়েক শ্রমিক তাঁর বাড়ির সামনে জমায়েত হন। কিন্তু ওই নেতা বাড়িতে না থাকায় শুরু হয় বিক্ষোভ। গ্রামের বাসিন্দা পরেশ বাগদি, বাবলু ঘোষরা বলেন, “আমরা আগে বালি বোঝাইয়ের কাজ করতাম। কিন্তু তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর বালির ঘাটের দখলদারি চলে যায় ওই বুথ সভাপতির হাতে। সেই থেকে তিনি আমাদের কাজ না দিয়ে নিজের পছন্দের লোকেদের দিয়ে কাজ করাতে শুরু করেন। আমাদের বকেয়া টাকাও শোধ করেননি। এ ছাড়াও একশো দিনের কাজের টাকাও আত্মসাৎ করেছেন।’’
তাঁদের হুঁশিয়ারি, ‘‘আমরাও দেখব, কতদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকেন। গ্রামে ফিরলে ফের আমরা বাড়ি ঘেরাও করে টাকা আদায় করে ছাড়ব!’’ এ দিন অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার দেখাও মেলেনি গ্রামে গিয়ে।