সুবর্ণরেখা নদীর ধারে ছায়ায় কর্মীদের নিয়ে সৌেমন। নিজস্ব চিত্র
গনগনে রোদ। বাতাসে হলকা। ৪২ ডিগ্রির বৈশাখী দুপুরে কর্মীদের সঙ্গে সুবর্ণরেখার তীরে গাছের ছায়ায় খানিক জিরিয়ে নিচ্ছিলেন পুরুলিয়ার জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া।
‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচিতে এ দিন তাঁর গন্তব্য ছিল ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া জঙ্গলমহলের বাঘমুণ্ডি ব্লকের সুইসা-তুন্তুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত। জানালেন, সকালে পুজো দিয়ে জনসংযোগ শুরু হয়েছে। তবে খাঁ খাঁ দুপুরে বাড়ি বাড়ি যাওয়া হচ্ছে না। কর্মী বৈঠক সেরে বিকেলে পাড়ায় পাড়ায় যাওয়া যাবে।
বাঁকুড়ায় গরমের হাত থেকে বাঁচতে আবার কর্মীদের সকালেই ছাঁচি পেঁয়াজ দিয়ে পান্তাভাত খেয়ে বাড়ি থেকে বেরোনোর নিদান দিয়েছেন বিজেপির জেলা নেতৃত্ব। আর দলীয় কাজে বেরনোর ক্ষেত্রে ‘কমরেড’দের ঘন ঘন জল আর ওআরএস খেতে বলেছেন সিপিএমের জেলা নেতারা। এই জেলাতেও তৃণমূলের তরফে দলের কর্মীদের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন থাকতে বলা হয়েছে। আর তীব্র গরমে সব দলই রোদ এড়িয়ে চলার পক্ষে। তাই কর্মসূচিগুলি হয় সকালে রোদ বাড়ার আগে, নয় বিকেলের পর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গরমে জনসংযোগ ধাক্কাও খাচ্ছে। ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচিতে যেমন রাজ্যের নিরিখে খানিকটা পিছিয়েই রয়েছে পুরুলিয়া। জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বলছেন, ‘‘দিনের চড়া রোদের সময়টুকুতে কোথাও বিশ্রাম নিয়ে ফের নেমে পড়তে হচ্ছে।’’ গত ৮ এপ্রিল দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে নিয়ে ঝালদায় প্রকাশ্য সমাবেশ করেছে কংগ্রেস। তারপর থেকেই তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি। জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো বলছেন, ‘‘ঝালদার সমাবেশ আমরা তীব্র গরমের মধ্যেই করেছিলাম। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি তাতে যোগদান বা বুথস্তরের বৈঠক বা সাংগঠনিক বৈঠক সবই করতে হচ্ছে বিকেলের পরে। বিকেল থেকে রাত এগারোটা-বারোটা পর্যন্ত চলছে।’’
বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রঙ্গাও বলছেন, ‘‘যে কোনও দিনই পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণ হবে। আমাদের প্রস্তুতিও থেমে নেই। কয়েকদিন আগে পর্যন্তও অঞ্চলভিত্তিক বৈঠক করছিলাম। কিন্তু এখন তাপপ্রবাহে দুপুরের আগে থেকে বিকেল পর্যন্ত কর্মসূচি বন্ধ রাখতে হয়েছে। কর্মীদের তো সুস্থ রাখতে হবে।’’ আগামী ২৩ এপ্রিল হুড়ায় মিছিলও সকাল ন’টায় হবে বলে জানান তিনি। সিপিএমও সকালে বা বিকেলে বৈঠক করছে। দলের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় মানছেন, ‘‘এই তীব্র গরমে দুপুরে দিকের বৈঠক এখন রাখা হচ্ছে না।’’ সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি বলছেন, “বাঁকুড়ার তীব্র গরমে ভোট করার অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। দলের বৈঠকগুলি সকালের দিকে ও পাড়া বৈঠক বা বুথ বৈঠকগুলি বিকেল ও সন্ধ্যায় করতে বলা হয়েছে। কমরেডরা যাতে নিয়মিত জল, ওআরএস খান তাও বলা হয়েছে।”
কর্মীদের স্বাস্থ্যে নজর দিচ্ছে বিজেপিও। দলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডল বলেন, “একেবারে সকালে ছাঁচি পেঁয়াজ ও পান্তাভাত খেয়ে কর্মীদের বাড়ি থেকে বেরোতে বলা হয়েছে। দুপুরে বাইরে কোনও কর্মসূচি না রেখে বাড়িতেই বুথ বা মণ্ডলভিত্তিক তথ্য পর্যালোচনা করতে হবে। বিকেলের পর জনসংযোগ কর্মসূচি চালাবেন নেতা-কর্মীরা। আবহাওয়া একটু স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কোনও রকম ঝুঁকি নিতে নিষেধ করা হয়েছে। দলীয় বৈঠক হলে বাড়ির মধ্যে হবে, প্রকাশ্য সভা করতে হলে বিকেলের পর।”
একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূলও। দলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দিব্যেন্দু সিংহ মহাপাত্র জানান, এই মুহূর্তে দলের দুয়ারে দুয়ারে কর্মসূচি চলছে। নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে খুব সকাল সকাল ওই কর্মসূচি সেরে ফেলতে। জনসংযোগের মতো কর্মসূচিগুলি বিকেলের পরে করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি হলেন, “কর্মীদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে নজর দিতে বলা হয়েছে।”