উচ্ছ্বাস: পুরুলিয়ার হুটমুড়ার ফুটবল ময়দানে। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো
দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভায় রেকর্ড ভিড় হবে বলে আগে থেকে দাবি করেছিলেন তৃণমূলের জেলা নেতারা। মঙ্গলবার পুরুলিয়া ২ ব্লকের হুটমুড়া ফুটবল ময়দানে সভায় ভিড়ের বহর দেখে দৃশ্যতই খুশি জেলা তৃণমূলের সভাপতি গুরুপদ টুডু থেকে কো-অর্ডিনেটর সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়েরা। তাঁদের দাবি, এ দিনের সভায় দু’লক্ষেরও বেশি লোক হয়েছিল। জনসমাগম দেখে মমতা নিজেও বলেন, ‘‘সভার সময় বলা হয়েছিল দেড়টা। কেউ কেউ চেষ্টা করছিলেন, দশটা এগারোটার সময় খালি মঞ্চের ছবি তোলার। এখন একটু মঞ্চটা ঘুরে যা না?’’ বক্তব্যের মঝে তিনি দাবি করেন, ‘‘লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়েছে সভায়। বহু কর্মী-সমর্থক সভার মধ্যে ঢুকতে পারেননি। বাইরে রাস্তার পাশে পাশে দাঁড়িয়ে বক্তব্য শুনছেন।”
পুলিশের হিসাবেও এ দিন হুটমুড়ার জনসভায় লক্ষাধিক লোক হয়েছিল। পুরুলিয়া-বাঁকুড়া জাতীয় সড়কের ধারেই সভাস্থল। সভা চলার সময়ে হুড়া এবং পুরুলিয়ার দিকে প্রায় এক কিলোমিটার করে রাস্তা ভিড়ে বন্ধ ছিল। ছিলেন পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়াররা। অ্যাম্বুল্যান্স ও কিছু গাড়ি ধার দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। সভা শেষ হওয়ার পরে হুড়া এবং পুরুলিয়ার দিকে প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তায় প্রবল যানজট ছিল। মাঠটি থেকে হুড়ার দিকে পাতলই নদীর সেতুর দূরত্ব মেরেকেটে তিন কিলোমিটার। অন্য সময়ে মিনিট পাঁচেকে গাড়িতে পৌঁছে যাওয়া যায়। এ দিন প্রায় আধঘণ্টা লেগে গিয়েছিল।
লোকসভায় পুরুলিয়ায় তৃণমূলের বিপর্যয়ের পরে এই প্রথম জনসভা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন ভিড়ের বহর দেখে তৃণমূলের নেতারা দাবি করছেন, দলনেত্রীর জনপ্রিয়তা ও দলের বুথস্তরের সংগঠন যে জেলায় অটুট, তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। সমাবেশে চোখে পড়েছে প্রচুর সংখ্যায় ছাত্র ও যুবক-যুবতীর উপস্থিতি। মমতা মঞ্চে ওঠার পরেই অল্প বয়সি রা উদ্বেলিত হয়ে ওঠেন।
বক্তব্যের শুরুতেই মমতা বলেন, ‘‘ছাত্র যৌবন, যারা দুষ্টু-মিষ্টি খেলা করে, তাদের জন্য আগামী দিনের লড়াইতে আন্তরিক অভিনন্দন।” সভার শেষ পর্বে তিনি তাঁদের ভাল করে স্লোগান শিখে নিতেও বলেন। মমতা বলেন, ‘‘আগামী দিনে প্রতিজ্ঞা থাকবে, বাংলার ছাত্র-যৌবনকে আমি মাথা তুলে দাঁড় করিয়ে দেব। চারিদিকে চাকরি যা থাকবে, পুরুলিয়ার মানুষকে কোথাও
যেতে হবে না।’’
তৃণমূলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতাদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী সভায় দু’টি সংগঠনের প্রায় চল্লিশ হাজার সদস্য উপস্থিত ছিলেন। জেলার রাজনীতির ওঠাপড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকদের মতে, লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির সভাগুলিতে প্রচুর যুবক-যুবতীর উপস্থিতি চোখে পড়েছিল। ছাত্র ও যুব সম্প্রদায়ের সমর্থন কিছুটা হলেও যে তাঁরা হারিয়েছিলেন, সে কথা স্বীকার করে নিচ্ছেন যুব তৃণমূল ও তৃণমূল ছাত্রপরিষদের নেতারা। পুরুলিয়ার যুব তৃণমূল সভাপতি সুশান্ত মাহাতো বলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বছরে দু’কোটি বেকারের চাকরির আশ্বাস যে পুরোপুরি ভাঁওতা ছিল, সেটা বুঝে গিয়েছে যুব সম্প্রদায়। তাই তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর উপরেই ভরসা রাখছেন।”
তৃণমূল ছাত্রপরিষদের জেলা সভাপতি কিরীটী আচার্য বলেন, ‘‘জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষার সর্বনাশ করছ কেন্দ্রীয় সরকার। তা ছাড়া ছাত্রদের বিভিন্ন ভাতা যে ভাবে বন্ধ করে দিচ্ছে, তা দেখার পরেই পড়ুয়ারা ভরসা রাখছেন মুখ্যমন্ত্রীর উপরে।”
সভায় বড় জনসমাগম করার ক্ষেত্রে দলের সংগঠনের উপরেই ভরসা করতে হয় নেতানেত্রীদের। জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর তথা বরিষ্ঠ নেতা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সভা আমরা বড় মাঠে করে সেই সভাস্থল কানায় কানায় ভরানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম। সেই কাজে সংগঠনকে পূর্ণমাত্রায় মাঠে নামিয়েছিলাম।” সুজয়বাবুর দাবি, বাসের অভাবে আরও বহু কর্মী সভায় আসতে পারেনি। অনেকেই বাস না পেয়ে অটো, টোটো বা মোটরবাইকে চেপে এসেছেন।
তবে বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যে মাঠে সভা করেছেন, সেখানে কত সংখ্যক লোক ধরে সেটা সবাই জানে। আমরা রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে তৃণমূলের নেতাদের মিথ্যাশ্রী দেব।”