চলছে বৈঠক। পুরুলিয়ায় শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
দলের ঘোষিত প্রার্থিতালিকায় রদবদলের পরে থেকে পুরুলিয়া শহরের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের একাংশে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছেই। এমনকি, এই বদলের পেছনে ‘টাকার লেনদেন’ হয়ে থাকতে পারে বলে গত বৃহস্পতিবার প্রশ্ন তোলেন দলেরই এক নেতা। পুরভোটের আগে অনভিপ্রেত দলীয় ক্ষোভকে সামাল দিতে আসরে নামেন দলের জেলা নেতৃত্ব। আর তার পরেই, অন্য সুর শোনা গিয়েছে ওই নেতার গলায়।
সুব্রত বক্সী ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সই করা তালিকাই যে দলের তালিকা, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাবে তা জানানোর পরেও জেলায় কী ভাবে প্রার্থী বদল হল, বৃহস্পতিবার সে প্রশ্ন তুলে সরব হন দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিমান সরকার ও পুরুলিয়া শহর যুব সভাপতি গৌরব সিংহ। একই অভিযোগ তোলেন দলের প্রার্থিতালিকায় ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে নাম থাকা ছায়া দাস-সহ শহরের আরও কয়েকটি ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীরা। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল হিসাবে দাঁড়ানো বিমানের প্রশ্ন ছিল, “নেত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করে দলের প্রার্থিতালিকা কী করে বদলাল? এর পেছনে কি অর্থের লেনদেন রয়েছে?”
এর পরেই, আসরে নামেন দলের জেলা স্তরের শীর্ষ নেতৃত্ব। শুক্রবার দুপুরে বিমানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন দলের বর্ষীয়ান নেতা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই অবশ্য অন্য সুর শোনা গিয়েছে বিমানের গলায়। তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন ১২ নম্বর ওয়ার্ডে কাজ করছি। কোভিডের সময়ে মানুষের পাশে থেকে কাজ করেছি। দলের কাছে টিকিট চেয়েছিলাম। কিন্তু দলের নেতৃত্ব জানায়, যেহেতু দলের প্রার্থিতালিকায় নাম নেই, তাই লড়তে পারব না। ক্ষোভ ও কষ্ট হলেও বিষয়টি মেনে নিয়েছিলাম।” তাঁর সংযোজন, “তবে যখন দেখলাম, একাধিক ওয়ার্ডে দলের ঘোষিত প্রার্থী বদলে গেল, তখন রাগের মাথায় বলেছিলাম যে, তা হলে কি প্রার্থী বদলের পিছনে অর্থের লেনদেন হয়েছে। দলকে ভালবাসি বলেই এমন কথা বলেছিলাম। ও মনের কথা নয়। দলের হয়েই কাজ করব।” নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাখিল করা মনোনয়নও তিনি প্রত্যাহার করবেন বলে জানিয়েছেন।
বৈঠকের পরে সুজয় বলেন, “বিমান দলের দীর্ঘদিনের কর্মী। প্রার্থিতালিকা ঘোষণার পরে, কয়েকটি ওয়ার্ডে প্রার্থী রদবদল নিয়ে ওঁর কিছু ক্ষোভ ছিল। তা ছাড়া, বিগত দিনে ভোটের সময়ে যাঁরা দলের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাত করেছে, দলে তাঁদের জায়গা অটুট থেকেছে। এ সব দেখেই ওঁর ক্ষোভ হয়েছিল। সেটা স্বাভাবিকও। তবে পরে দলের একনিষ্ঠ কর্মী হিসাবে এটাও উপলব্ধি করেছেন যে, ভোটযুদ্ধে দলের পাশে থাকতে হবে।”
রীতিমতো সমীক্ষা করে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। তার পরেও কেন প্রার্থী বদল করতে হল? সুজয় বলেন, “তালিকা নিয়ে তো প্রশ্ন রয়েইছে। তবে পুরসভা দখলই এখন পাখির চোখ।” তবে রদবদল নিয়ে প্রশ্ন তোলা গৌরব সিংহ এ দিনও তাঁর অবস্থানে অনড় থেকেছেন। উল্টে তাঁর অভিযোগ, “এ সব কথা বলার জন্য পুলিশ দিয়ে আমাকে ভয় দেখানো হচ্ছে।”
এ দিকে, দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদমর্যাদার এক জন এমন অভিযোগ তোলায় তৃণমূলকে বিঁধতে ছাড়েনি বিজেপি। দলের বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়য়ের টিপ্পনী, “কয়েকটি ওয়ার্ডে টাকার বিনিময়ে প্রার্থী বদলানো হয়েছে। এ প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলেরই বড় মাপের এক নেতা। এর পরে, দলের নেতাদের আর কি কিছু বলার আছে?”
তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “কর্মীদের দাবি জানানোর পরে, রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশেই যেটুকু রদবদল, তা-ই হয়েছে। সকলকে বলছি, কারও ক্ষোভ বা অসন্তোষ থাকলে, দলের ভেতরে জানান। দল সকলের কথাই শুনবে।”