সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যে বিধানসভা ভোটের সময় তাঁকে ‘প্রচুর টাকা’ দিতে চেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু তিনি ‘প্রলোভনে’ পা দেননি। ‘সংযত’ থেকেছেন। বিজেপিকে বিঁধে এমন অভিযোগই করলেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বাঁকুড়া বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থীও হয়েছিলেন ওই অভিনেত্রী। তবে তিনি জিততে পারেননি। তাঁর অভিযোগ নিয়ে পাল্টা কটাক্ষ করেছে বিজেপি।
বুধবার দুপুরে বাঁকুড়া-২ ব্লকে দলীয় কর্মীদের নিয়ে একটি বিজয়া সম্মিলনীতে উপস্থিত ছিলেন সায়ন্তিকা। করোনাকালে লকডাউনের প্রসঙ্গ টেনে সেখানে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের শুটিং বন্ধ ছিল। বাড়িতে বয়স্ক বাবা-মা রয়েছেন। আমাকেও তো তাঁদের দেখতে হবে। সংসার চালাতে হবে। সেই সময়, সত্যি কথা বলছি, বিজেপি আমাকে অনেক টাকা অফার করেছিল তাদের দলে যোগ দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমি একটাই কথা ভাবলাম, আজকে তো ওদের টাকা নিয়ে নেব। আমার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু রাতে বাড়িতে গিয়ে তো আয়নায় নিজের মুখ দেখতে হবে। তখন আমি নিজেকে উত্তরটা দিতে পারব? মিথ্যে কথাটা বলতে পারব, যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উন্নয়ন করেননি? আমি বললাম, আমার ওই রকম টাকার দরকার নেই। আমি আর একটু কষ্ট করব। যখন লকডাউন উঠবে তখন আমি আবার রোজগার করব। কিন্তু আমি এটা করতে পারব না।’’
দলবদলুদের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে সায়ন্তিকা বলেন, ‘‘আমি ওই মিরজাফর নই। যারা ২০২১ সালে বেইমানি করেছে, তাদের জন্য একটাই কথা বলতে চাই। তৃণমূল কংগ্রেস দুধ-কলা দিয়ে কালসাপ পোষা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন কালসাপ দেখবে, বিষদাঁত ভাঙবে, চুবড়িতে ঢোকাবে আর ফেলে দিয়ে আসবে।’’
এর পর সাংবাদিকদের সামনেও একই কথা বলেন সায়ন্তিকা। তাঁর কথায়, ‘‘কোভিডের পর আমার কাছে দু’বছর কাজ ছিল না। আমাকে ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের সময় অফার করা হয়েছিল। সেই সময় প্রলোভনে পা আমিও দিয়ে ফেলতে পারতাম। আমার বাড়িতেও বয়স্ক বাবা-মা রয়েছেন। আমাকেও সংসার চালাতে হয়। দু’বছর কাজ করি না আমরা। শ্যুটিং বন্ধ ছিল। আমারও সংসার চলছিল না। সেই সময়ে আমি নিজেকে সংযত করেছি। আমি এটা ভাবলাম যে, আজকে টাকাটা আমি নিয়ে নেব। কিন্তু টাকার বিনিময়ে আমাকে সংবাদমাধ্যমের সামনে শেখানো কথা, মিথ্যা কথা বলতে হবে যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, উন্নয়ন করেননি। এবং রাতে গিয়ে আয়নায় নিজের মুখটাও দেখতে হবে। নিজের বিবেকের কাছে আমি উত্তরটা দিতে পারব না।’’
সায়ন্তিকার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নীলাদ্রিশেখর দানা বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নিজের পয়েন্ট বাড়ানোর জন্য অভিনেত্রী এই মিথ্যা অভিযোগ করছেন। বিজেপি দেশ চালায়। ১৪০ কোটি দেশবাসীর বোঝা বিজেপির কাঁধে। বিজেপি কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নয়। সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় সিনেমা জগতে দক্ষ হতে পারেন কিন্তু রাজনীতিতে ওই ধরনের সেলিব্রিটিদের জন্য বিজেপি কোনও টাকা দেয় না। গত বিধানসভায় বাঁকুড়ার মানুষ তাঁকে যোগ্য জবাব দিয়েছেন। আগামিদিনেও সেই একই জবাব তিনি এবং তাঁর দল বাঁকুড়ার মানুষের কাছ থেকে পাবেন।’’
এ নিয়ে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘টাকা দিয়ে কাউকে দলে নেওয়ার সংস্কৃতি বিজেপিতে নেই। বিজেপির আদর্শ দেখেই অনেকেই দলে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। আর যাঁরা স্বার্থের জন্য আসেন তাঁরা ফিরেও যান। কোন দলে নগদের লেনদেন হয় তা টাকা উদ্ধারের ছবি দেখেই মানুষ বুঝতে পারছেন।’’